×

অর্থনীতি

নিয়মিত গ্যাস পেলে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে বিসিআইসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:২৮ এএম

নিয়মিত গ্যাস পেলে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে বিসিআইসি
বিসিআইসি নিয়ে নানামুখী পরিকল্পনার কথা জানালেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. হাইয়ুল কাইয়ুম
একসময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। অথচ বর্তমানে সরকারকে এ প্রতিষ্ঠান বাবদ প্রতিবছরই গুনতে হচ্ছে লোকসান। মূলত, ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায় বহুগুণে। বর্তমান সরকার সারের উৎপাদন বাড়াতে এ শিল্পে নজর দিয়েছে। সার উৎপাদন বাড়লে আমদানি ব্যয় কমে আসবে। নিয়মিত গ্যাস পেলে অল্প সময়ে বিসিআইসি লাভজনক হবে বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. হাইয়ুল কাইয়ুম। বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে বলে জানালেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিসিআইসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে লাভের মুখ দেখানোর চেষ্টায় অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, নানা পণ্যের উৎপাদন করে একসময়ে সরকারের অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল বিসিআইসি। পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে মনোযোগ কমতে থাকে। সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যায় বহুগুণে। বিসিআইসির অধীন অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ এখন সার উৎপাদন ও বিতরণ। বর্তমানে আটটি সার কারখানার মধ্যে ছয়টি ইউরিয়া ও দুটি টিএসপি কারখানা রয়েছে। শাহজালাল সার কারখানা চালুর পাশাপাশি ঘোড়াশাল-পলাশে নতুন কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২২ সালে চালু হলে এ কারখানায় বছরে প্রায় ১০ লাখ টন সার উৎপাদন হবে। তখন চাহিদার প্রায় কাছাকাছি দেশে উৎপাদন হলে আমদানি কমে যাবে। এতে লাভজনক হবে সংস্থাটি। বিসিআইসি চেয়ারম্যান জানালেন, বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। আশা করছি, বিসিআইসি লোকসান উত্তরণ করতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, বিসিআইসির অধীন অনেক প্রতিষ্ঠানের এখন প্রধান কাজ সার উৎপাদন ও বিতরণ। বর্তমানে আটটি সার কারখানার মধ্যে ছয়টি ইউরিয়া ও দুটি টিএসপি কারখানা রয়েছে। দেশে বার্ষিক ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন সারের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ৭ থেকে ৮ লাখ টন বাড়তি মজুদ রাখা হয়। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩৩ লাখ টন সার নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন ও আমদানি করে কৃষকদের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক সার কারখানার আয়ুষ্কাল এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ কারখানাগুলোর নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজন হলেও করা সম্ভব হয়নি। তবে এসব কারখানা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে বিসিআইসি। এর মধ্যে কারখানার ওভারহোলিং, বিএমআরই ও স্পেয়ার পার্টস পরিবর্তনসহ রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এ কাজ করার জন্য অনেক কারখানা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিয়ে জনবলের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. হাইয়ুল কাইয়ুম ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯৯৬ সালে বিসিআইসি সার সরবরাহের দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত কোথাও সারের সংকট বা মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে সার লোপাট ও নষ্ট হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়। এর কারণ সার সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। এখন বিএডিসির পুরনো ও জীর্ণ গুদামে ৩ লাখ টন রাখলেও বাকি ৩০ লাখ টন সার বছরজুড়ে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের উদ্যোগে ১৩টি বাফার গুদাম নির্মাণ হচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এগুলো নির্মাণ শেষে এক লাখ ৩০ হাজার টন রাখা যাবে। দ্বিতীয় দফায় ৩৪টি গুদাম নির্মাণ হলে আরো ৭ লাখ টন রাখা যাবে। এই ৪৭টি গুদাম নির্মাণ শেষে সব মিলিয়ে ১২ লাখ টন সার সংরক্ষণ হলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে। এ ছাড়া সার আমদানিতে নানা জটিলতা এবং ভর্তুকির কারণে এখন ব্যয় বেশি হচ্ছে। জানা যায়, বর্তমান সরকার সারের উৎপাদন বাড়াতে এ শিল্পে নজর দিয়েছে। সার উৎপাদন বাড়লে আমদানি ব্যয় কমে আসবে। নিয়মিত গ্যাস পেলে অল্প সময়ে বিসিআইসি লাভজনক হবে বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এখন কারখানাগুলো সাত থেকে আট মাস বন্ধ থাকলেও বেতন-ভাতা ও ইউটিলিটিসহ নানা ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। সারা বছর উৎপাদন করতে পারলে খরচ কমে আসবে। বর্তমানে ভর্তুকি দিয়ে প্রতি টন ইউরিয়া সার ১৪ হাজার টাকায় কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ বিদেশ থেকে প্রতি টন ৩০ হাজার টাকায় আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য লোকসান দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া এখন এলএনজি আসছে বলে গ্যাস পাওয়ার আশা আছে। তিনি বলেন, ঘোড়াশাল ও পলাশে আগের দুটি কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগত তাতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টন সার উৎপাদন হয়েছে। একই পরিমাণ গ্যাস খরচ করে সেখানে নতুন কারখানায় প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ টন পাওয়া যাবে। এতে বাড়তি গ্যাসের প্রয়োজন হবে না। এ কারণে নতুন বিনিয়োগে গেছে বিসিআইসি। নতুন কারখানায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ আছে। বর্তমান প্রযুক্তিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে উড়ে যায়। নতুন প্রযুক্তিতে তা হবে না এবং পুনর্ব্যবহার উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে। এতে বাতাস দূষিত হবে না। তবে পুরনো কারখানায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই। বিসিআইসির অস্থায়ী কেমিক্যাল গোডাউন নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, কেমিক্যাল গোডাউন নির্মাণ কাজ দ্রæত শুরু হবে। বর্তমানে এই প্রকল্প ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে। আগামী বছরের জুনের আগেই কাজ শেষ হবে। এর একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। এই গোডাউন ভাড়া নেবেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে শুধু কেমিক্যাল সংরক্ষণ করা হবে। এদিকে চট্টগ্রামের মাধবকুণ্ড কেমিক্যাল গোডাউনের জায়গায় গ্যাস কারখানা করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিসিআইসি। এ ছাড়া ছাতক সিমেন্ট লাভজনক করতে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী পেপার মিলের উন্নয়নে সৌদি আরবের একটি কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ সই হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জের সার কারখানার জায়গায় একটি গ্রানুলার সার কারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App