×

জাতীয়

লাঙ্গল নিয়ে কাড়াকাড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:৪৯ পিএম

লাঙ্গল নিয়ে কাড়াকাড়ি
জাতীয় পার্টির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে লাঙ্গল নিয়ে শুরু হয়েছে কাড়াকাড়ি। মনোনয়নের উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন এরশাদের আত্মীয়রা। এই দ্বন্দ্বে রয়েছে সিনিয়র নেতাদের ইন্ধন। দিন দিন তা সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। এতে দলটি আরেক দফা ভাঙনের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এর আগে চেয়ারম্যান পদ নিয়েও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা। যা আপাতত স্তিমিত হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা কে হচ্ছেন সে বিষয়টিরও মীমাংসা করতে পারেনি জাতীয় পার্টি। এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে এরশাদপত্নী রওশনের। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান রওশন, তাতেও আপত্তি রয়েছে দেবর জি এম কাদেরের। তিনি নিজে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান। ইতোমধ্যে তার পক্ষের নেতারা তাকে এ পদে দেখতে চান বলে মতামত দিয়েছেন। এর ওপর রংপুর-৩ আসনের মনোনয়ন নিয়েও শুরু হয়েছে চতুর্মুখী কোন্দল। মনোনয়ন চান এরশাদ পুত্র রাহগীর আল মাহী সাদ। যিনি ‘সাদ এরশাদ’ নামে সমধিক পরিচিত। এতে সমর্থন রয়েছে তার মা রওশন এরশাদের। অন্যদিকে এরশাদের ছোট ভাই সাবেক এমপি প্রয়াত মোজাম্মেল হক লালুর একমাত্র ছেলে হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফও চান মনোনয়ন। মনোনয়ন চান এরশাদের বোন সাবেক এমপি মেরিনা রহমানের মেয়ে ও দলের সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্ত্রী মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ফ্যাকাল্টির পরিচালক টুম্পা কিছু দিন আগেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাকে নীলফামারী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির কার্যকরী সদস্য পদ দিয়েছেন। পারিবারিক বলয়ের বাইরে জাপার যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকও মনোনয়ন চান। এরশাদ ও বিদিশার প্রতিবন্ধী সন্তান এরিক এরশাদকে নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে অবশ্য নেতাদের তোপের মুখে পড়েছে এসএম ইয়াসির। এরই মধ্যে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার পালিচড়া বাজারে রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য এরশাদের আপন ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফের সমর্থকদের দায়ী করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় জাপা নেতাকর্মীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে জাপায় বড় ধরনের সংকট দেখতে পাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। পারিবারিক কোন্দল ও মনোনয়ন নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চান না জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। এরশাদ পুত্র সাদ এরশাদ বলেন, দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে চাই। মোজাম্মেল হক লালুর ছেলে হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ বেশ কিছুদিন ধরে নগরীতে শোডাউন করে যাচ্ছেন। তিনি বহিষ্কৃত থাকায় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলছেন তিনি। তার দাবি, রংপুরের জনগণ চায় রংপুর সদরের এই আসনটিতে যেহেতু আমার বড় আব্বা এরশাদ ৩০ বছর ধরে এমপি ছিলেন, তাই এখানে তার পরিবারের যারা রংপুরে দলের দুর্দিনে জনগণের সঙ্গে থাকেন তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হোক। তাই বলে উড়ে এসে জুড়ে বসে সাদ কেন মনোনয়ন চায়? এরশাদের ভাগনি মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পা বলেন, শিক্ষকতার মাধ্যমে আমি এত দিন দেশ সেবা করেছি। এবার আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। দলের যুগ্ম মহাসচিবের ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির বলেন, আমি বহুদিন ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছি। গত নির্বাচনে স্যার (এরশাদ) অসুস্থ থাকায় তার হয়ে আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। যে পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে রংপুর সদর উপজেলা গঠিত, সেসব ইউনিয়নে আমার সমর্থন রয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩২ জন কাউন্সিলরের সমর্থনও রয়েছে আমার পক্ষে। রংপুর-৩ আসনে এরশাদ প্রার্থী হওয়ায় আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। তবে এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিও এখানে প্রার্থী দিচ্ছে। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান বিএনপির রেজাউল হক সরকার রানা। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল গণি স্বপন জেতার পর থেকে এই আসনটি আর কখনো হাতছাড়া হয়নি জাপার। ১৯৮৮ সালে মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০১ সালে জি এম কাদের, ২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০৯-এ (উপনির্বাচন) রওশন এরশাদ, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসনে নির্বাচিত হন। এ আসনে আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে বলে ইতোমধ্যে ইসি জানিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App