×

জাতীয়

ফাইভ-জি কতটা বাস্তবসম্মত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২২ এএম

ফাইভ-জি কতটা বাস্তবসম্মত
দেশে মানসম্পন্ন থ্রি-জি বা ফোর-জি সেবা নিশ্চিত না করেই সরকার নতুন করে এ খাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘ফাইভ-জি’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় এ সেবা দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় দুই অপারেটরের পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্ব এখন লাইসেন্স বাতিলের নোটিসের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাকি অপারেটরগুলোর সক্ষমতাই ফাইভ-জি চালুর অনুকূলে নেই। ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখনো ফোর-জির আওতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ফাইভ-জি চালুর সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত। বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশে ফাইভ-জি চালুর জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা ও নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন খান জানান, গত ৪ আগস্ট গঠিত ওই কমিটিতে সরকার, বিটিআরসি ও অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তারা আগামী জানুয়ারি নাগাদ ফাইভ-জি চালুর রূপরেখা, সম্ভাব্য তরঙ্গ, তরঙ্গমূল্য এবং বাস্তবায়ন সময়কাল প্রভৃতি বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা ও নীতিমালা তৈরি করবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে যেখানে থ্রি-জি সেবাই ঠিকমতো পাওয়া যায় না, সেখানে দেশে ফাইভ-জি চালুর সিদ্ধান্তকে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফাইভ-জি চালুর সিদ্ধান্তে সবচাইতে খুশি হওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু খুশি না হয়ে আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ ফোর-জি চালুর ১৭ মাস পার হলেও সারাদেশে ফোর-জি তো দূরে কথা, থ্রি-জি সেবাও সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। সেই সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে ৬৪ ভাগ মার্কেট দখলকারী গ্রামীণ ফোন ও রবির বিরুদ্ধে পাওনা নিয়ে ঝামেলা। বিটিআরসি তাদের এনওসি বন্ধ করার ফলে গ্রাহকরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে এমনিতেই বঞ্চিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে পাওনা আদায়ের জন্য অপারেটর দুটির লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আবার অন্যদিকে ফাইভ-জি চালুর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি এমন, যে ডালে বসে আছেন, সে ডালই আপনি কাটছেন। এনওসি বন্ধের ফলে অপারেটর দুটি আর নতুন করে স্পেকট্রাম কিনতে পারবে না। তবে ফাইভ-জি কাদের মাধ্যমে চালু করা হবে, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, বর্তমান সময়ে কোয়ালিটি অব সার্ভিস যদি মাপা হয় তাহলে দেখা যাবে যে কোনো সময়ের চাইতে তা অনেক নিম্নমানের। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক এখনো ফোর-জি চালু করতে পারেনি। গ্রাহকদের ৯০ শতাংশ এখনো ফোর-জি সেবাই গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে ফাইভ-জির ডিভাইসও দেশে পর্যাপ্ত নয়। ফাইভ-জির উপযুক্ত সেট হবে অনেক বেশি মূল্যের। ফাইভ-জি চালুর ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অপারেটরদের এখন পর্যন্ত স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ফাইভ-জি করতে লাগবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এ অবস্থায় ফাইভ-জি চালু করা হলে তা কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটব জানায়, সরকারের ফাইভ-জি পরিকল্পনা কমিটির বৈঠকটি ছিল সূচনা মাত্র। কমিটি ফাইভ-জি চালুর বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করবে ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবে। তবে ফাইভ-জি চালুর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবসরপূর্ব ছুটিতে থাকা শিক্ষক ড. মো. কায়কোবাদ বলেন, আমরা টু-জি থেকে থ্রি-জি, আবার থ্রি-জি থেকে থ্রি পয়েন্ট ফাইভ-জি, এরপর ফোর-জিতে গেলাম। কিন্তু আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, সে সময় আমাদের লক্ষ্য কী ছিল। সে লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কি না। তিনি বলেন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে শুধু অবকাঠামো তৈরির বিষয়ে আমরা খুব পারদর্শী। কিন্তু এর বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন তুলে আনা ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা নিয়ে ভাবি না। এটা অনেকটা গরিবের ঘোড়া রোগের মতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। নইলে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের মোবাইল সেবার মান এতো নিচে থাকতো না। প্রসঙ্গত, দেশে টু-জি মোবাইল ফোন সেবার পরিবর্তে ২০১৩ আওয়ামী লীগ সরকার থ্রি-জি সেবা উন্মুক্ত করে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় ফোর-জি সেবা। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবার সর্বশেষ সংস্করণ ফাইভ-জি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ফোর-জি প্রযুক্তির চেয়ে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো যায়। বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল গ্রাহক হিসেবে শুধু মানুষকে বিবেচনা করা হলেও ফাইভ-জি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সেবা হল ‘ইন্টারনেট অব থিংস- আইওটি’, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকেও গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App