×

জাতীয়

দুর্গাপূজায় ‘আনন্দ’ থাকছে না হিন্দুদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫২ এএম

দুর্গাপূজায় ‘আনন্দ’ থাকছে না হিন্দুদের
শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনভর ক্লাস করে, কিশোররা বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এবং প্রাপ্ত বয়স্করা রংপুরে ভোট দেয়ার মাধ্যমেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আসন্ন দুর্গোৎসব কাটাবেন। এতে তাদের পূজার আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হচ্ছে। সংবিধান অনুসারে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর থাকলেও সেই রাষ্ট্রই একটি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কর্মসূচি ঘোষণা করে বসে আছে। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত শামিল থাকেন। ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ পূজা আয়োজনের দায়িত্বেও থাকেন। এ রকম পরিস্থিতিতে একটি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে রাষ্ট্রের এ ধরনের আয়োজন পূজার আনন্দকে মাটি করে দেবে। উল্লেখ্য, আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর দুর্গাপূজা শেষ হবে। জানতে চাইলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেছেন, পূজার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি, ভর্তি পরীক্ষা এবং রংপুরে ভোটের তারিখ ঘোষণা করায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হীন মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। এতে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশ এখনো পাকিস্তানি মানসিকতা থেকে বেরোতে পারেনি। যারা পূজার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটির তালিকা প্রণয়ন করেছেন, ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছেন এবং রংপুরে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছেন তারা ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণের জন্য তৎপর। কাজেই পূজার সময় এই সবকিছু পিছিয়ে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানান। হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক ভোরের কাগজকে বলেছেন, পূজার মধ্যে এসব সূচি ঘোষণার জন্য তীব্র নিন্দা জানাই। যত কাজই থাকুক না কেন, সব কাজ পূজার পরে নেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা। সরকারের শিক্ষা বিভাগের দিনপঞ্জি ঘেঁটে দেখা গেছে, উৎসবে শিশুদের আনন্দ এমনিতেই একটু বেশি থাকে। কিন্তু এই শিশুরা এবার সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এবার ৪ অক্টোবর থেকে পূজা শুরু হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ থেকে ৯ অক্টোবর। অন্যান্য বছর দুর্গাপূজার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমপক্ষে একসপ্তাহ থাকলেও এবার মাত্র তিনদিন। অন্যদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ অক্টোবর থেকে ৮ দিনের জন্য পূজার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিভাগের পূজার ছুটি নিয়ে আপত্তি না থাকলেও প্রাথমিকের ছুটি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তি। তারা এই ছুটি ৪ অক্টোবর থেকে ঘোষণা করার জন্য দাবি তুলেছেন। জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসাইন বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবুও দুর্গাপূজায় অন্যান্যবার যদি সাতদিনের ছুটি থাকে তাহলে এবার কেন তিনদিনের ছুটি দেয়া হলো তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জানতে চাইব। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে সাধারণত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ থাকে মেডিকেল কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ জন্য উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতিও নেন। কিন্তু এবার মেডিকেল কলেজ (এমবিবিএস কোর্স) ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ঘোষিত তারিখ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। এবার মেডিকেল ও বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা হবে পরপর দুই দিনে। এর মধ্যে আগামী ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা। দেশের ১৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। এর ঠিক একদিন পর ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বুয়েটে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য এই ভর্তি পরীক্ষা আরো কষ্টের। কারণ দুর্গাপূজার প্রথম দিন অর্থাৎ ৪ অক্টোবরে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা। পূজার দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ৫ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা। হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থী বলেছেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। আর বুয়েটের পরীক্ষা হয় ঢাকায়। এর ফলে যারা ঢাকার বাইরের কেন্দ্রে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন তারা বড় সমস্যায় পড়বেন। যাতায়াতসহ বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকের বুয়েটে পরীক্ষা দেয়াই কঠিন হতে পারে। এর মধ্যে আবার আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। কাজেই সব বিবেচনায় নিয়ে তারা পরীক্ষা দুটি পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছেন। আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৫ অক্টোবর দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন। একটি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন ভোট। অনেক জায়গায় ভোটকেন্দ্র ও পূজামণ্ডপ পাশাপাশি থাকবে। তাতে ভোটগ্রহণে সমস্যা দেখা যেতে পারে। সবমিলিয়ে পূজার আগে অথবা পরে রংপুরে ভোট নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নানা জন। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোখলেছুর রহমান দুর্গাপূজাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে ভোরের কাগজকে বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই ৫ অক্টোবরে ভোট নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পূজার জন্য চারদিন বাদ দিলেও ৮৬ দিন থাকছে। এই ৮৬ দিনের মধ্যে ভোট না নিয়ে পূজার সময় কেন ভোটের তারিখ ঘোষণা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি খানিকক্ষণ নীরব থেকে বলেন, আপনার এই প্রশ্নটি আমি কমিশনকে জানাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App