×

জাতীয়

এনজিওগুলোর প্ররোচনায়ই ভাসানচরে বিমুখ রোহিঙ্গারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৬ এএম

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করা ৪ লাখ রোহিঙ্গা মিলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ১১ লাখে। এতে ওই এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। পরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের একটু ভালো পরিবেশে রাখার উদ্যোগ নেয় সরকার। নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর অত্যাধুনিক আশ্রয় শিবির নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকির দোহাই দিয়ে এনজিওগুলোর বিরোধিতা ও রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছায় এখনো শুরু হয়নি ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তরের কাজ। সূত্র জানায়, উখিয়া ও টেকনাফে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া-টেকনাফ সড়কের পাশে ক্যাম্পগুলো হওয়ায় ইচ্ছা মতো অবাধে যাতায়াত করার পাশাপাশি রাতের আঁধারে মিয়ানমারেও যাচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে মিলছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। পাশাপাশি অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। একই সঙ্গে নারীদেরও পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সব মিলিয়ে একজন রোহিঙ্গাও ভাসানচরে যেতে রাজি না। ফলে ভাসানচরে যাওয়ার কথা উঠলেই রোহিঙ্গারা বলছে, বাংলাদেশ সরকার ফাঁসির হুকুম দিলেও তারা ভাসানচরে যাবে না। সবার মুখে এই একই কথা শুনে বোঝা যায়, এ যেন কোনো মহলের শিখিয়ে দেয়া বুলি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একবার রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন ভিডিওর মাধ্যমে ভাসানচরের সুযোগ-সুবিধাগুলো দেখিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা যেতে রাজি হয়নি। পরে অজানা কারণে কার্যক্রমটি বন্ধ রয়েছে। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নবীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ভাসানচরে আমরা কেন যাব। এখানেই অনেক শান্তিতে আছি। সবাই নিজের মতো করে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি। কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। অনেকে ব্যবসাও করছে। এখন ভাসানচরে নিতে চাইলে আমরা কেউ যাব না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফ মিয়ানমার সীমান্ত হওয়ায় ওখানকার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা সহজ। এখন আমাদের ভাসানচরে পাঠানো হলে এ সুযোগটা থাকবে না। ভাসানচরে চারিদিকে পানি হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি বন্দি জীবন কাটাতে হবে। এ জন্য কোনো রোহিঙ্গা এত দূরে যেতে রাজি না। একই ক্যাম্পের ছকিনা খাতুন বলেন, উখিয়া টেকনাফের মতো সুযোগ-সুবিধা ভাসানচরে পাওয়া যাবে না। এককথায় ভাসানচর আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এ জন্য আমরা সেখানে যেতে রাজি না। বাংলাদেশ সরকার যদি ফাঁসির হুকুমও দেয় তবুও আমরা এক চুলও নড়ব না। বাকিটা সময় বলে দেবে। টেকনাফের শালবাগান এলাকার ২৬ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. রিয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা গত দুই বছরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছি। বর্তমানে মিয়ানমারের চেয়ে এই ক্যাম্পে অনেক শান্তিতে আছি। এখান থেকে ভাসানচরে পাঠানো হলে আবারো নিজেদের গুছিয়ে তুলতে সময় লাগবে। আর এখানে আমরা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি সেগুলো ভাসানচরে পাওয়া সম্ভব না। তাই আমরা কেউ ভাসানচরে যাব না। ২৬ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ খালিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য একবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন ভাসানচরের ভিডিও দেখিয়ে সেখানকার সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের বোঝানো হয়েছে এই ক্যাম্পগুলো থেকে ভাসানচরে তোমরা ভালো থাকবা। কিন্তু তারা তখন যেতে রাজি হয়নি। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে খালিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম কথা বলতে রাজি হননি। আপনার সময়ে কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে যান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App