রাজধানীতে শুরু হচ্ছে জামদানি উৎসব
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম
বাংলার অনন্য ঐতিহ্যের একটি কিংবদন্তি জামদানী শাড়ি। হাজার বছর ধরে এই বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে জামদানী। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে এই অঞ্চলে এবং ইউরোপে ও ইংল্যান্ডে পুরুষ ও মহিলাদের সৌখিন বস্ত্র হিসেবে জামদানি অত্যন্ত আদরণীয় ছিল। বর্তমানেও মর্যাদাপূর্ণ পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জামদানি বস্ত্র অপরিহার্য পরিধেয়। কিন্তু কালের বহমানতায় জামদানী তার আদি রূপ থেকে সরে গেছে, ক্ষয়েছে আদি সুনাম।
তাই নতুন করে আবার আদি সুতো এবং মোটিফে পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করে চলেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পুরনো সংরক্ষিত শাড়ির সংগ্রহ, গবেষণাসঞ্জাত তথ্যউপাত্তসহ সোনারগাঁয়ের কৃতী জামদানী বয়নশিল্পীদের তৈরি একশ বছরের পুরনো নকশার অনুকরণে অবিশ্বাস্য নতুন বয়নকৃত জামদানী শাড়ি ও বস্ত্রসম্ভার নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ‘ঐতিহ্যের বিনির্মাণ’ শীর্ষক জামদানী উৎসব।
রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে পাঁচ সপ্তাহব্যাপী এই জামদানি উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর। এ উৎসব শেষ হবে আগামী ১২ অক্টোবর (শনিবার)। যৌথভাবে উৎসবটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। জামদানি বয়ন শিল্পের চর্চা ও উন্নয়নে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করে আসছে এমন চারটি প্রতিষ্ঠান আড়ং, ঢাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, কুমুদীনি ও অরণ্য এই প্রদর্শনীতে অংশ নেবে।
শুক্রবার বিকেলে ৫টায় এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিল এশিয়া প্যাসিফিক রিজনের প্রেসিডেন্ট ড. গাদা হিজাউয়ি-কাদুমি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ কারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম। উদ্বোধনী দিনে জামদানী উৎসবের সঙ্গে যুক্ত চারজন শ্রেষ্ঠ বয়নশিল্পী ও তাদের সহকারীদের শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার প্রদান করা হবে।
উৎসবে প্রদর্শনীর জন্য আনা হচ্ছে জামদানি কারিগরদের উত্তরাধিকারদের মাধ্যমে নতুন করে তৈরি জামদানি শাড়ির মধ্যে ৩০টি শাড়ি। এক্ষেত্রে ঐহিত্যবাহী জামদানি সংগ্রহ করে, আদি মানসম্মত সুতা সরবরাহ, মোটিফ অনুসারে কাজ করা হয়েছে। প্রদর্শনীর জন্য এভাবে তৈরি ৮০টি শাড়ির জন্য সময় লেগেছে ৬৪০ সপ্তাহ। এসব শাড়ি তৈরিতে ৪৫ জন ওস্তাদ তাঁতী ও ৫৬ জন সাগরেদ তাঁতী কাজ করেছেন। মঙ্গলবার ধানম-ির বেঙ্গল বইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামদানী বিনির্মাণের এই পুরো পক্রিয়া ও এই উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সভাপতি রুবী গজনভী, বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের নির্বাহী সদস্য চন্দ্রশেখর সাহা, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের স্বত্বাধিকারী মনিরা এমদাদ, আড়ং এর চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম, অরণ্য ক্রাফটস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশিন খায়ের ও কুমুদিনী হ্যান্ডি ক্রাফটস এর পক্ষে হেনা সুলতানা। এছাড়া সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বয়নশিল্পী জামাল হোসেন ও আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এই পুরো আয়োজনে এদেশের জামদানীর একটি ঐতিহাাসিক রূপরেখা ফুটে উঠবে। প্রদর্শনীতে থাকেবে জামদানী বুননের উপকরণ, ডিজাইন ও সেগুলোর ইতিহাস, বুনন প্রক্রিয়াসহ নানা দিক। একই প্রদর্শনীতে স্থান পাবে বিভিন্ন সময়ে সংগৃহীত পুরনো জামদানী কাপড়ও। বয়নশিল্প ও বয়নশিল্পীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসব চলাকালে আগামী ৭ সেপ্টেম্বও লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এন্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক সেমিনার।
সকলের জন্য উন্মুক্ত এ প্রদর্শনী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রোববার থাকবে সাপ্তাহিক ছুটি।