×

জাতীয়

থ্রি-জি সেবাই নিশ্চিত হয়নি ফাইফ-জি কতটা বাস্তবসম্মত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:০৬ পিএম

দেশে মানসম্পন্ন থ্রি-জি বা ফোর-জি সেবা নিশ্চিত না করেই সরকার নতুন করে এখাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘ফাইভ-জি’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় এ সেবা দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় দুই অপারেটরের পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্ব এখন লাইসেন্স বাতিলের নোটিশের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাকি অপারেটরগুলোর সক্ষমতা ফাইফ-জি চালুর অনুকূলে নেই। ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখনো ফোর-জির আওতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে ফাইফ-জি চালুর সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণারই শামিল।

বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশে ফাইভ-জি চালুর জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা ও নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. জাকির হোসেন খাঁন জানান, গত ৪ আগস্ট গঠিত ওই কমিটিতে সরকার, বিটিআরসি ও অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তারা আগামী জানুয়ারি নাগাদ ফাইভ-জি চালুর রূপরেখা, সম্ভাব্য তরঙ্গ, তরঙ্গমূল্য এবং বাস্তবায়ন সময়কাল ইত্যাদি বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা ও নীতিমালা তৈরি করবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে, যেখানে থ্রিজি সেবাই ঠিকমতো পাওয়া যায় না, সেখানে দেশে ফাইভজি চালুর সিদ্ধান্তকে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফাইভ-জি চালুর সিদ্ধান্তে সবচাইতে খুশি হওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু খুশি না হয়ে আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ ফোর-জি চালুর ১৭ মাস পার হলেও সারাদেশে ফোর-জি তো দূরের কথা,থ্রিজি সেবাও সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। সেই সাথে বর্তমানে যোগ হয়েছে ৬৪ ভাগ মার্কেট দখলকারী গ্রামীণ ফোন ও রবির বিরুদ্ধে পাওনা নিয়ে ঝামেলা। বিটিআরসি তাদের এনওসি বন্ধ করার ফলে গ্রাহকরা কাঙ্খিত সেবা থেকে এমনিতেই বঞ্চিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা একদিকে পাওনা আদায়ের জন্য অপারেটর দুটি লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আবার অন্যদিকে ফাইভজি চালুর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি এমন যে, যে ডালে বসে আছেন সে ডালই আপনি কাটছেন। এনওসি বন্ধের ফলে অপারেটর দুটি আর নতুন করে স্পেকট্রাম কিনতে পারবে না। তবে ফাইভ-জি কাদের দিয়ে চালু করা হবে- প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কোয়ালিটি অব সার্ভিস যদি মাপা হয় তাহলে দেখা যাবে যে কোন সময়ের চাইতে অনেক নিম্মমানের। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অত্যান্ত দুর্বল। রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক এখনও ফোর-জি চালু করতে পারেনি। গ্রাহকদের ৯০ শতাংশ এখনও ফোর-জি সেবাই গ্রহণ করেন নি। অন্যদিকে ফাইভ-জির ডিভাইস দেশে পর্যাপ্ত নয়। ফাইভ-জি উপযুক্ত সেট হবে অনেক বেশি মূল্যের। ফাইভজি চালুর ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, অপারেটরদের এখন পর্যন্ত স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ফাইভজি করতে লাগবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এ অবস্থায় ফাইভজি চালু করা হলে তা কেবল কাগজ কলমেই সীমাবন্ধ থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দেশে টু-জি মোবাইল ফোন সেবার পরিবর্তে ২০১৩ আওয়ামী লীগ সরকার থ্রি-জি সেবা উন্মুক্ত করে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় ফোরজি সেবা। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবার সর্বশেষ সংস্করণ ফাইভ-জি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ফোর-জি প্রযুক্তির চেয়ে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো যায়। বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল গ্রাহক হিসেবে শুধু মানুষকে বিবেচনা করা হলেও ফাইভ-জি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সেবা হল ‘ইন্টারনেট অব থিংকস- আইওটি’, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকেও গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ফাইফ-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App