×

জাতীয়

চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদ্মা নদী শাসনের কাজ শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪১ এএম

চ্যালেঞ্জ নিয়েই পদ্মা নদী শাসনের কাজ শুরু
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বহুল আলোচিত মেগাপ্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রমত্তা পদ্মার প্রতিক‚ল অবস্থার কারণে সার্বিক নির্মাণকাজের গতি কিছুটা কমেছে। তীব্র স্রোতের ফলে গত দুই বছর ধরে থেমে আছে নদী শাসনের কাজ। নদীর তলদেশে পলি জমে যাওয়ায় নাব্য সংকটও দেখা দিয়েছে। ফলে গত দুই মাসে একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। মূল সেতুর নির্মাণ কাজের ৮৩ ভাগ অগ্রগতি হলেও নদী শাসনের কাজ হয়েছে মাত্র ৬১ ভাগ। তবে কাজ এগিয়ে নিতে এবার পরিকল্পনা বদল করে চ্যালেঞ্জ নিয়েই বর্ষা মৌসুমে নদী শাসনে জোর দিয়েছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুর বাকি কাজের মধ্যে এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদী শাসন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু গত দুই বছরে নদী শাসনের কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তির এই মেগা প্রকল্পটি কাজ সম্পন্ন করতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ সব ধরনের কারিগরি জটিলতার অবসান হওয়ার পর পুরোদমেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত অগ্রগতিও বেশ ভালো ছিল। ওই সময় পর্যন্ত সেতুর মূল কাজের ৭৫ ভাগের বেশি শেষ হয়। বর্ষা মৌসুমে পদ্মার স্রোতের বিপরীতে পিলার নির্মাণকাজ চালানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই পিলার নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া হয়। পাইলিং শেষে সব পিলার উঠে গেছে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মূল কাজের ৮১ ভাগ শেষ হয়। এরপর গত দুই মাসে মাত্র ২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ৮৩ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। নদী শাসনের কাজ থেমে থাকার কারণেই সার্বিক কাজের বেশি অগ্রগতি হয়নি। বর্ষার তীব্র স্রোতে বারবার সেতুর নির্মাণকাজ ব্যাহত করছে। স্রোতের ফলে নদীর তলদেশে পলির স্তর জমে যাওয়ায় একদিকে স্প্যানবাহী ক্রেন চলাচল করতে পারছে না, অন্যদিকে নদী শাসনের কাজও চালিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মূল সেতুর নির্মাণকাজের ৮৩ ভাগ অগ্রগতি হলেও নদী শাসনের কাজ হয়েছে মাত্র ৬১ ভাগ। প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে গত জুলাই মাসের পর আর কোনো স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে গত ২ বছর নদী শাসনের কাজ বন্ধ ছিল। তবে এবার পরিকল্পনা বদল করে বর্ষা মৌসুমেও নদী শাসনের কাজ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতে সেতুর নির্মাণকাজের প্রধান অন্তরায়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নদী শাসনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পদ্মার স্রোতের কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় আরো এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরও শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় প্রকল্পের কর্মকর্তারা পরিকল্পনা বদল করে নদী শাসনের কাজের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নদী শাসনের কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কোম্পানি অবশ্য মেয়াদ আরো ২ বছর বাড়ানোর পক্ষে। এদিকে বন্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে পদ্মার তীব্র স্রোতের কারণে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে মূল সেতুর অবকাঠামোতে একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। অথচ প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩টি করে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নিয়েই সেতু কর্তৃপক্ষ কাজ চালিয়েছে। জুলাই মাসে ৩টি এবং আগস্ট মাসেও কমপক্ষে ৩টি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা ছিল। গত দুই মাসে ৬টি স্প্যান বসানো সম্ভব হলে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২০টি বসে যেত। সেতু আরো বেশি দৃশ্যমান হতো। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে নদীর তলদেশে পলিমাটি জমে নাব্য সংকটের সৃষ্টি হয়। ড্রেজিং করা হলেও স্রোতের ভয়াবহতায় স্প্যান বহনকারী ক্রেন চলাচল করতে পারেনি। নদীর মাওয়া প্রান্তে স্রোতের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি নিরাপদে রাখার জন্য মাওয়ার কুমারভোগ প্রান্ত থেকে সরিয়ে জাজিরা প্রান্তে সরিয়ে নিতে হয়। এবার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ২ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১০ কিলোমিটারসহ সব মিলিয়ে ১২ কিলোমিটার নদীর পাড় ও নদীর তলদেশের নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে। বালির বস্তা ও কংক্রিটের ব্লক তৈরির পর প্রায় প্রতিদিনই তা নদীতে ফেলা হচ্ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নদীর স্রোত কমে এলে নদী শাসনের কাজ আরো গতিশীল হবে বলে কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, নদী শাসনের কাজ পিছিয়ে আছে। এখন পরিকল্পনা বদল করেই বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই নদী শাসনের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমান কাজের অগ্রগতি নিয়ে আমি আশাবাদী। নদী শাসনের যেটুকু কাজ পিছিয়ে আছে তা আগামী এক বছরের মধ্যেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। আমরা সময় বাড়াতে রাজি নই। সময় না বাড়িয়ে প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্য দিয়েই কাজ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, নানান প্রতিক‚লতার মধ্যেও সেতুর সব পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ। ৩০টির বেশি পিলারের পুরো কাজ শেষ। স্প্যান তৈরি হয়ে আছে। নদীর স্রোত ও নাব্য সংকটের সমাধান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে। ফলে বছরের শেষ দিকে অগ্রগতি আশানুরূপ হবে বলেই আশা করছি। সেতুতে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। একদিকে স্প্যান উঠতে থাকবে, অন্যদিকে স্প্যানের ওপর রোড স্ল্যাব বসানো হবে। পদ্মা সেতুতে মোট ২৯১৭টি রোড স্ল্যাব বসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App