×

জাতীয়

জঙ্গিদের সংশোধনে কাজে লাগানো হতে পারে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২০ পিএম

জঙ্গিদের সংশোধনে কাজে লাগানো হতে পারে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের

ফাইল ছবি

দেশে বড় ধরনের হামলা বা নাশকতা চালানোর সক্ষমতা এখন আর জঙ্গিদের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে বা পুলিশকে টার্গেট করছে। এক সময় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করত এমন কিছু লোকও জড়িয়ে পড়েছে এমন অপকর্মে। তাদের কাজের ধরন অনেকটাই নব্য জেএমবির অনুরূপ। এরকম অনেকের বিষয়েই তথ্য-প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। তবে যারা জনমনে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টায় রয়েছে, তারা কেউই ছাড় পাবে না।

অন্যদিকে কারাগারে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সংশোধনের জন্য আইনগত বিধিবিধানের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুরে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গি তৎপরতা এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এটা সবাই স্বীকার করেন। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। এটা বৈশ্বিক সমস্যা এবং এই মতাদর্শের লোকজন আমাদের সমাজে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় সজাগ রয়েছে। বিশেষ করে জনগণ জঙ্গিদের প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করায় জঙ্গিদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নব্য জেএমবির কিছু সদস্য বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তির সহায়তায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি করে অপকর্মের পরিকল্পনা করে আসছে। তবে গোয়েন্দা তথ্য ও নানা সূত্রে প্রাপ্ত খবরে চালানো অভিযানে তাদের অনেক পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। যারা এখনো জঙ্গি তৎপরতায় সক্রিয় রয়েছে তারাও ধরা পড়বে। কারো ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।

মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজের একটা ইন্টেলিজেন্স, আরেকটি অ্যাসেসমেন্ট। যে সব ঘটনা ঘটে, তার তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলো জড়ো করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স। আর এর ওপর ভিত্তি করে আমরা যা নির্ধারণ করি, তা হচ্ছে অ্যাসেসমেন্ট। এটা যে সব সময় ঠিক হবে, এমন নয়। এর বাইরে গিয়ে অনেক ঘটনা ঘটে। আমাদের ভাষায় যাকে বলে ল্যাক অব ইমাজিনেশন। জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের নতুন কৌশল গ্রহণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় থাকে। তাই আমরাও গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভাবার চেষ্টা করি, সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।

কারাগারে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সংশোধন বা উগ্র মতাদর্শ থেকে ফিরিয়ে আনার (ডির‌্যাডিক্যালাইজেশন) কার্যক্রম অনেক জরুরি উল্লেখ করে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের ডির‌্যাডিক্যালাইজেশনের জন্য পৃথক কেন্দ্র করাসহ বেশ কিছু কাজের অনুমোদন আমরা পেয়েছি। কিন্তু এর জন্য আইনগত বিধিবিধানের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে। জামিন পাওয়ার পর বা সাজা ভোগ কারার পর কাউকে আলাদা করে কোথাও রাখতে চাইলে এটা লাগবে। কারাগারের ভেতরে প্রয়োজন অনুযায়ী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ধর্মীয় চিন্তাবিদদের পাঠাতে হলেও কারাবিধির সংশোধনী লাগবে। এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে আল-কায়েদা, আইএস, হিযবুত তাহরীর, জেএমবি, নব্য জেএমবি বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে আলাদা করে পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। কাজের ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতা বা সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা আছে কিনা, তা বিবেচনা করা উচিত। এই দুই ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ঘাটতি নেই। বিশ্বে ইসলামি উগ্রবাদের নামে এখন যে সংগঠনগুলো সক্রিয়, সেগুলোকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এর একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর। বিশ্বের ৫০টি দেশে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের শাখা রয়েছে। এদের কৌশল সবখানেই এক। আন্তর্জাতিক হিযবুত তাহরীরের যে কৌশল, বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের কৌশলও তাই। আল-কায়েদার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ১৯৯২ সালে হরকাতুল জিহাদ তৈরি হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে যে জেএমবি গড়ে উঠেছিল, সেটিও আল-কায়েদার অনুসরণেই। একটা সুন্নি শ্রেষ্ঠত্ব ও শরিয়াভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তারা কাজ করছে। কৌশল ভিন্ন হলেও আদর্শ এক। এরপর গড়ে ওঠা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আরো পরের সংগঠন আনসার আল ইসলামও একই আদর্শের অনুসারী। এই সংগঠন দুটি আল-কায়েদা বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে ‘আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টে’ এর আদর্শ ধারণ করলেও তাদের সঙ্গে সরাসরি সাংগঠনিক যোগাযোগের কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। ঠিক তেমনিভাবে যখন আইএস হলো, তখন এর আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি ও সংগঠনের অস্তিত্বও বাংলাদেশে মিলেছে। আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে যারা সিরিয়ায় গেছেন, তারা কিন্তু বাংলাদেশের কোনো সংগঠনের মাধ্যমে যাননি। তারা সরাসরি যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে যে হামলাগুলো হয়েছে, তা আইএসের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App