×

সাময়িকী

প্রকৃতিতে নজরুল ইসলাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০১৯, ০৭:০২ পিএম

প্রকৃতিতে নজরুল ইসলাম

কবি যে প্রকৃতিকেও খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলেন, সেই খবর কিন্তু আমরা খুব কমই রাখি। ছেলেবেলাতেই ছিল তাঁর দুখু, নুরু, ব্যাঙাচিসহ আরো অনেক নাম! নজরুলের প্রথম বয়সে ‘সালেক’ গল্পে মুক্তি কবিতায় এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে লিখিত কোনো কোনো রচনায় যে অলৌকিকতার সন্ধান পাওয়া যায় তা হয়তো প্রকৃতির বুক থেকেই আহরণ করা। প্রকৃতিকে জানা মানে নিজেকে জানা আর নিজেকে জানা মানে জীবনের সব গভীরতা ধীরে ধীরে আস্বাদন করা।

কোথায় যেন শুনেছিলাম, প্রকৃতি আর কবি একে অপরের পরিপূরক কোনো না কোনোভাবে। অবশ্য এই বক্তব্যকে অস্বীকার করারও কিন্তু কোনো উপায় নেই। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে জানাই হচ্ছে প্রতিটি লেখকের লেখালেখির হাতেখড়ি এবং আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। কি ভাবছেন? নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে যে এই মহান কবির জীবনের প্রতিটি কাব্য, প্রতিটি রচনা, উপন্যাস, গল্পগুলোর পেছনের ইতিহাস শুধুই প্রেম নামক বিষাদসিন্ধুর দীর্ঘশ্বাস? কিংবা শুধু বিদ্রোহেই কি কেটে গেছে উনার কবিতার এক যুগ? তাহলে বলতে হবে এই কবিকে আপনার ঠিকমতো চেনাই হয়নি। প্রকৃতির এই কবিকে এখনো চেনা অনেক বাকি আছে। আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতাগুলো পড়ে একটা ব্যাপার উপলব্ধি করেছিলাম যে, লেখালেখির মূলমন্ত্র কিংবা গল্পের উপন্যাসের গহীনে ডুব দেয়ার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে একটাই- প্রকৃতিকে জানা। প্রকৃতির কাছেই যেসব রহস্য লুকিয়ে আছে। আর তাকে যত জানা যায়, তত রহস্য উন্মোচিত হয়। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও কিন্তু এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। প্রকৃতিতে তাঁর বিচরণ কিন্তু খুব একটা কম ছিল না। কীভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক। তো যাকে নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেয়া এই কবি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জনপ্রিয় বাঙালির কবি হিসেবে। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী এই কবি যে প্রকৃতিকেও খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলেন, সেই খবর কিন্তু আমরা খুব কমই রাখি। ছেলেবেলাতেই ছিল তাঁর দুখু, নুরু, ব্যাঙাচিসহ আরো অনেক নাম! নজরুলের প্রথম বয়সে ‘সালেক’ গল্পে মুক্তি কবিতায় এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে লিখিত কোনো কোনো রচনায় যে অলৌকিকতার সন্ধান পাওয়া যায় তা হয়তো প্রকৃতির বুক থেকেই আহরণ করা। প্রকৃতিকে জানা মানে নিজেকে জানা আর নিজেকে জানা মানে জীবনের সব গভীরতা ধীরে ধীরে আস্বাদন করা। তাঁর আচার-আচরণে এই ঔদাসীন্য, প্রকৃতি প্রেম লক্ষ করে লোকে তাঁকে ‘তারাক্ষেপা’ বলেও ডাকতো। কেউ কেউ আদর করে বলতো নজর আলী। প্রকৃতির বিচিত্র সব রূপ তাঁর কাছে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে প্রতিনিয়ত। তাঁকে নব সৃষ্টিতে উৎসাহ জুগিয়েছে প্রতিনিয়ত, গড়ে তুলেছে একটু একটু করে। তাই তো কবি বলেছেন- ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর! ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়’। আর এ থেকেই বোঝা যায় কবি কত রূপে, কত ভঙ্গিতে একই প্রকৃতিকে বারবার আবিষ্কার করেছেন। তিনি তাঁর অনেক বইয়ের নামকরণে বেছে নিয়েছেন পুষ্পরাজি। দোলনচাঁপা, ঝিঙেফুল, ফণীমনসা, রাঙা-জবা, মহুয়া আরো কত নাম। এসব নাম তাঁর অনুভব, তাঁর সেইসব রচনাকে সুরভিত করেছে বারবার। তাঁর রচনাসম্ভারে নানাভাবে পুষ্প-বৃক্ষের প্রসঙ্গ এসেছে। কখনো উপমায়, কখনো সরাসরি। যেমন- নার্গিস কখনো প্রিয়তমা, কখনো ফুল হিসেবে এসেছে। তিনি গেয়েছেন-

‘বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে

ঝরা বন-গোলাপের বিলাপ শোনে’

নার্গিস মূলত ফুলের নাম। আমাদের দেশে গুলনার্গিস নামে একটি কন্দজ ফল আছে। ধারণা করা হয় এই নার্গিস ফুলকে ঘিরেই রচে উঠেছিল এই কাব্য। সুতরাং নজরুলের প্রকৃতিপ্রেম কতটুকু ছিল আশা করি তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নেই কারো। ২৭ আগস্ট ছিল কবির প্রয়াণ দিন। ১৯৭৬ সালে এই দিনে এই মহান কবি মৃত্যুবরণ করেন। না! মৃত্যুবরণ বললে ভুল হবে। কারণ প্রকৃতিকে যিনি ভালোবেসেছিলেন, তাঁর মৃত্যু বলে কিছু নেই। তিনি হারিয়ে গেছেন আবার প্রকৃতির মাঝেই। আমরা যদি কখনো কোনো পুষ্পরাজির দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে’ গানটি শুনি, আমরা তাঁকে দেখতে পাবো। প্রতিটি ইন্দ্রিয়তে অনুভব করতে পারবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App