×

আন্তর্জাতিক

আমাজনের আগুনের আঁচে পুড়ছে দুনিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৪ এএম

আমাজনের আগুনের আঁচে পুড়ছে দুনিয়া
গহন আগুনে পুড়ছে গহীন সবুজে ঢাকা আমাজন বন। ছারখার হয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার ফুসফুস। ভীষণ শ্বাসকষ্টে ভুগছে সুস্থ মানুষ। প্রাণের তাগিদে তাই বিশ্বের দিকে দিকে রব উঠেছে, সর্বনাশা এ আগুন নেভাও, আমাজন বাঁচাও। মানচিত্রে দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় অর্ধেক এবং ইউরোপের দুই-তৃতীয়াংশ আয়তনের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে সাড়ে পাঁচ কোটি বছর পুরনো বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিবন আমাজন। তিন কোটির বেশি মানুষের বাস এই বনের গভীরে। এ ছাড়া আরো যারা এই বনের বাসিন্দা তাদের মধ্যে আছে হাজার হাজার উভচর ও সরিসৃপ প্রাণী, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও লক্ষাধিক প্রজাতির পাখি। সুবিশাল এই জীববৈচিত্র্য বিশ্বের কাছে এতটাই অজানা, বস্তুত, এখনো প্রতি দুই দিন পরই একটি নতুন গাছ কিংবা একটি নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান দিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী নামের এই গ্রহের মোট অক্সিজেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ জোগান দিচ্ছে আমাজন। অঘটনের শুরু ২০১৯ সালের শুরুর দিকেই। আট মাস পুরো হওয়ার আগে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) দেশটিতে মোট ৭৩ হাজার আগুন লাগার ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি আগুনের খবর আসে আমাজন থেকে। ইনপের পরিসংখ্যানে, প্রতিদিন আপনার হাতের ঘড়ির কাঁটায় একটি মিনিট পার হওয়ার আগেই কমপক্ষে দুটি ফুটবল মাঠের সমআয়তন সবুজ গাছপালা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে আমাজন বনে। এ গতিতে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে মহাদেশের আটটি দেশ জুড়ে ছড়ানো পুরো বনটি জ¦লেপুড়ে এক পোড়াজমিনে পরিণত হওয়া অল্প কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র! ইনপে জানায়, বনপোড়ার হার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে গত বছরের তুলনায়। কোপার্নিকাস নামে ইইউর স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম যে মানচিত্র তৈরি করছে তাতে দেখা গেছে, ব্রাজিলের অর্ধেকের বেশি পুড়িয়ে এখন পূর্বাঞ্চলে আটলান্টিক উপক‚ল বরাবর সম্প্রসারিত হচ্ছে আগুন। আগুনের আঁচে ঝলসাতে শুরু করেছে বলিভিয়া, পেরু এবং প্যারাগুয়ে। দুদিন আগের এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দেড় হাজার মাইল দূরবর্তী ব্রাজিলের সব থেকে জনবহুল শহর সাও পাওলোর আকাশ আগুনের ধোঁয়া আর ছাইয়ে বিকাল তিনটার দিকেই ঢাকা পড়েছে নিকষ কালো অন্ধকারে। ভয়াবহ এ আগুনের ছবি আর ভিডিও সামাজিক নেটওয়ার্কে শেয়ার করছে দুনিয়াজুড়ে লাখ লাখ লোক। আমাজন ওয়াচ নামে পরিবেশের ওপর নজরদারি সংস্থার তদন্ত অনুসারে, আমাজন এলাকার বিবেচনাহীন মানুষের হাতেই বর্তমান আগুনের সূত্রপাত। বন উজাড় করে নিজেদের কৃষিজমি ও পশুচারণ ভূমি তৈরির জন্য নিজেরাই তারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বনে। বহু বছর ধরেই চলে আসছে তাদের এ প্রবণতা। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে বনে আগুন লাগিয়ে একটু একটু করে নিজেদের দখলদারি বাড়িয়ে নিচ্ছে তারা। এর আগে খনিব্যবসায়ী, কাঠ পাচারকারী, কৃষিখামার, জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য বাঁধ আর সড়ক নির্মাণকারীদের খপ্পরে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে আমাজনের ২০ শতাংশ বাস্তুসংস্থান। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাজন পুড়ে যাওয়ার ফলে সামনে কী ধরনের সর্বনাশের মুখে পড়তে যাচ্ছি আমরা? চলতি দফায় সর্বানাশা আগুনের জন্য বিশেষত ব্রাজিলের বর্তমান ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো এবং তার রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশ আইন শিথিলকরণ এবং বন উজাড়করণকে প্রণোদনা দিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন বোলসোনারো। ইতোমধ্যেই পরিবেশ তহবিল থেকে আড়াই কোটি ডলার খারিজ করেছেন তিনি। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে অভিযুক্ত করে এও বলেছেন, আমরা এনজিওর টাকা কেড়ে নিয়েছি। এ নিয়ে তারা মর্মপীড়ায় ভুগছে। হতে পারে প্রতিশোধ নেয়ার মানসে আমার ও ব্রাজিলের সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বকে খেপিয়ে তুলতে নিজেরাই তারা জড়িয়ে পড়েছে এসব অপরাধ তৎপরতায়। এদিকে আমাজনের ভয়াবহ আগুনের আঁচ থেকে নিরাপদ থাকতে পারছেন না বিশ্বনেতারাও। আমাজনের আগুন নিয়ে মিথ্যাচার করায় দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য ব্লকের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন একে অভিহিত করেছেন ‘বৈশ্বিক বিপর্যয়’ হিসেবে। গত বৃহস্পতিবার টুইটারে তিনি লেখেন, আক্ষরিকঅর্থেই, আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আমাদের বাড়ি। চলমান জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন আমাজনের আগুন নিয়ে আলোচনার জন্য। ঘটনাটিকে ‘আতঙ্ক এবং হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছে জার্মানি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App