×

জাতীয়

ঢাকায় গাঁজার নিয়ন্ত্রণ ১০ মহাজনের হাতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ১১:১৮ এএম

ঢাকায় গাঁজার নিয়ন্ত্রণ ১০ মহাজনের হাতে
দুই বাংলার চোরা-কারবারিদের সহায়তায় সীমান্তপথে ভারত থেকে প্রতিদিন অবাধে আসছে শত শত কেজি গাঁজার চালান। এরপর নানা অভিনব পন্থায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে গাঁজার কারবারিরা। বর্ডার পার হওয়ার পর কসবা, ব্রাহ্মণপাড়া, আখাউড়া, বিজয়নগর, ভাইটাপাড়া এই ৫টি স্টপেজ হয়ে বিশেষ কৌশলে পিকআপ-কার্ভাডভ্যান ও মিনি ট্রাকে করে গাঁজার চালান ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর এবং ঢাকার আশপাশে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর এলাকায় ১০-১২ জন মহাজন এই গাঁজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বাহকরা ধরা পড়লেও অধরা থেকে গেছে গাঁজার মহাজনরা। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ৭৫ কেজি গাঁজাসহ রিপন নামে এক কারবারি ধরা পড়ার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫০ হাজার কেজি ও ৩ হাজার ১০০ পুরিয়া গাঁজা। সে হিসাবে প্রতি মাসে ৪ হাজার ১৬৬ কেজি গাঁজা আটক করা হচ্ছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে। তবে ধরা পড়ার পর জামিনে বের হওয়ার পর নাম, ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুনভাবে একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। দুই বাংলার গাঁজার কারবারিরা একে অন্যের আত্মীয় : গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় গাঁজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বেশ কয়েকজন মহাজন। যারা সম্পর্কে আত্মীয়। বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক ভারতে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে, যাদের আত্মীয়-স্বজনরা এদেশে আছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত চলাচলও আছে। ট্রানজিট হিসেবে দুই দেশে থাকা লোকগুলো কাজ করে থাকে। ভারতের ত্রিপুরার বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রামে গাঁজার চাষ করা হয়। বাংলাদেশি মহাজনরা আগে থেকে ত্রিপুরায় তাদের পূর্ব পরিচিত গাঁজা চাষিদের কাছে টাকা দিয়ে রাখে। গাঁজা উৎপাদনের পর সেগুলো প্যাকেট করে বস্তায় ভরে ভারতীয় মহাজনরা সীমান্ত এলাকার নির্জন কোন বাড়িতে রেখে দেয়। পরে সুযোগ বুঝে বর্ডার পার করে বাংলাদেশি মহাজনদের কাছে গাঁজা পৌঁছে দেয়া হয়। গাঁজার চালান যেভাবে বর্ডার পার করা হয় : ভারতীয় মহাজনরা বিএসএফ কিংবা বিজিবির অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করে গাঁজার চালান বর্ডার পার করার চেষ্টা করে। অর্থের বিনিময় সমঝোতা হলে সীমান্তে আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয় কিংবা লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময়ে বর্ডার দিয়ে গাঁজার বস্তা পার করা হয়। কিন্তু বিএসএফ বা বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করতে না পারলে খুব ভোরের দিকে ভারতীয় মহাজনের লোকজন কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে কিংবা নিচ দিয়ে গাঁজার বস্তা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুঁড়ে মারে। আগে থেকে সীমান্তের এপাশে থাকা বাংলাদেশি মহাজনের লোকজন বস্তাগুলো নিয়ে এসে নিরাপদ কোনো বাড়িতে রাখে। সীমান্ত থেকে গাঁজার চালান যেভাবে ঢাকায় আনা হয় : সীমান্ত থেকে গাঁজার বস্তাগুলো ঢাকায় আনার জন্য মহাজনরা নিরাপদ বাহন হিসেবে পিকআপ, কার্ভাড ভ্যান বা মিনি ট্রাককে বেছে নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখে ধুলা দিতে পিকআপ বা কার্ভাড ভ্যানে পেছনের অংশে স্টিলের বাউন্ডারি তৈরি এবং ইঞ্জিনের নিচে বক্স তৈরি করে। এরপর উভয়স্থানে ৫০ কেজি থেকে ১০০ গাঁজার বস্তা বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়। এছাড়া মিনি ট্রাকে ডবল পাটাতন দিয়ে তার মাঝখানে কৌশলে গাঁজা রেখে পাচার করা হয়। কিন্তু এসব পিকআপ, কার্ভাড ভ্যান বা মিনিট্রাকের চালকরা গাঁজার চালান নিয়ে ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত জানে না এগুলো কার কাছে পৌঁছানো হবে। তারা শুধু ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করেন। গাঁজার চালান নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর পর চালক সীমান্ত এলাকার মহাজনকে ফোন করলে ঢাকা মহাজনের ফোন নম্বর দেয়া হয়। পরে ঢাকার মহাজনকে ফোন করলে তার লোকজন এসে গাঁজার বস্তাগুলো নিরাপদ কোনো স্থানে নিয়ে যায়। পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ছড়িয়ে দেয় মহাজনের লোকজন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহররম আলী ভোরের কাগজকে বলেন, দুই বাংলার সীমান্ত এলাকায় গাঁজার ব্যবসায়ীরা (মহাজন) একে অন্যের আত্মীয়। পরস্পরের যোগসাজশে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্ডার দিয়ে গাঁজার চালান নিয়মিত ঢাকায় আনা হচ্ছে। পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান চালকরা কেবল ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। ঢাকায় গাঁজা পৌঁছানোর পর সীমান্ত এলাকার মহাজনের সঙ্গে ঢাকার মহাজনের টাকার লেনদেন হয়। তিনি আরো বলেন, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ১০-১২ জন মহাজন গাঁজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। যাত্রাবাড়ী থেকে রিপন নামে এক মহাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরে খাদিজা, কেরানীগঞ্জে ইব্রাহীম নামে আরো দুইজনের নাম পেয়েছি। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, জামালপুর, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুরে গাঁজার চালান যায়। সেখানে আলাদা মহাজন রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App