×

মুক্তচিন্তা

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৪৩ পিএম

মোবাইল টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন তথা তেজস্ক্রিয়তা কতটা উচ্চপর্যায়ের এবং তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে গড়ালে গত ২৫ এপ্রিল ক্ষতিকর রেডিয়েশনের বিষয়ে সমীক্ষা করে ৪ মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। পাশাপাশি এ বিষয়ে ১১ দফা নির্দেশনাও দেন তারা। কিন্তু ওই নির্দেশনার ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও টাওয়ার অপসারণের উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। জনগুরুত্বপূর্ণ এমন একটি বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের গাফিলতি কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মোবাইল টাওয়ারে বিকিরণমাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১০ ভাগের এক ভাগ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কারাগার, খেলার মাঠ, জনবসতিপূর্ণ ও প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা থেকে ক্ষতিকর বিকিরণ ছড়ানো টাওয়ার সরানো, বিটিআরসির স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করাসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। কিন্তু অপারেটরদের যত্রতত্র টাওয়ার স্থাপন নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। ফলে যেখানে-সেখানে বাসাবাড়ির ছাদেও টাওয়ার স্থাপন করা হয়। শহর থেকে গ্রামাগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে পাঁচটি মোবাইল অপারেটরের প্রায় চল্লিশ হাজার টাওয়ার। মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে কয়েক বছর আগে আদালতে রিট করেছিলেন একজন আইনজীবী। তখন আদালত মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কমিটি করে মন্ত্রণালয় এবং সে কমিটি ঢাকার কিছু মোবাইল টাওয়ার থেকে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তার প্রমাণ পায়। এরপর আর কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। নতুন করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বিষয়টি আবারো সবার নজরে এসেছে। রেডিয়েশনের মাত্রা যে কত ক্ষতিকর তা আমাদের ভাবনার বাইরে। চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শরীরে সেলগুলো একে অন্যের সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ করে তাকে বাধাগ্রস্ত করে এক্সটারনাল রেডিয়েশন। আর এর পরিণতিতে ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকিও তৈরি হয়। তবে শিশুদের শরীরে ফ্লুইড বেশি থাকার কারণে তারা বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও এ রেডিয়েশন দায়ী। এর বাইরেও যে কারো মধ্যেই জেনেটিক পরিবর্তন, অবসন্নতা, লিউকেমিয়াসহ আরো কিছু রোগের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে রেডিয়েশনের কারণে। রেডিয়েশন মানবদেহ কোষের ক্রোমোজোমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে টিউমার হতে পারে- যা ক্যান্সারে রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক থাকা সত্ত্বেও দেশের বেশিরভাগ মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে নজর দেয়ার মতো যেন কেউ নেই। স্বাস্থ্যকর, সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য এখনই আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App