×

জাতীয়

স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১২:২৪ পিএম

স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়ছে
২০১৮ সালের নভেম্বরের পর গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশা জেগে ওঠে। কিন্তু মিয়ানমারের জুড়ে দেয়া শর্তে অবিশ্বাস ও সন্দেহ জোরাল হয় রোহিঙ্গাদের। ফলে বাংলাদেশ সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্তে¡ও মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি তারা। আর এতেই একে একে দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। কী কারণে এবারো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, এর পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অচিরেই কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উখিয়া-টেকনাফের সব মহলের মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, আরাম আয়েশে থাকায় মিয়ানমারের ওপর দোষ চাপিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করতে চাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। অন্যদিকে, মানবিকতার দোহাই দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার ইন্ধন জোগাচ্ছে এনজিওগুলো। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যবস্থায় গিয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসনবিরোধী অভিযোগ পেয়েও নিশ্চুপ থাকেন তারা। তবে স্থানীয়দের এ অভিযোগ অস্বীকার করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কমিশনার আবুল কালাম ভোরের কাগজকে বলেন, প্রত্যাবাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি শুরু না হওয়া পর্যন্ত থেমে থাকার সুযোগ নেই। যদি এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কোনো এনজিও জড়িত থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে সেটি বের করবে। দুই বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারায় উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমরা সন্দেহ করছিলাম, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিলতার দিকে যাবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। এর প্রধান কারণ মিয়ানমারের জুড়ে দেয়া শর্তে রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস ও সন্দেহ। পাশাপাশি ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার নেপথ্য ভ‚মিকা রাখছে। মানবিক দিক বিবেচনার অজুহাতে তারা নিজ স্বার্থে উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কেউ অনুধাবনের চেষ্টা করছে না। এনজিওগুলো কিছু প্রভাবশালীকে কিনে নেয়ায় মুখ খুলছে না সাধারণ মানুষ। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। দুই বছর আমরা অপেক্ষা করেছি। আর কিছুদিন হয়তো দেখব। এরপর অচিরেই সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে প্রত্যাবাসনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো এনজিও সংস্থা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের কাউন্সিলিং বা ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো পরামর্শ দিচ্ছে না। উল্টো রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ স্থানীয়দের ক্ষতি করে চলেছে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী মুসা ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মানবিকতা বলতে কিছু নেই। তারা খুন থেকে শুরু করে একের পর এক জমি দখল করছে। অথচ স্থানীয়রা এসব অসহায়ের মতো দেখা ছাড়া কিছু করতে পারছে না। কেউ কিছু বলতে গেলেই প্রশাসনের রোষানলে পড়ে। ফলে স্থানীয় সবার মাঝে চাপা আতঙ্ক কাজ করছে। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বড় আন্দোলনের সৃষ্টি হতে পারে।তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। এখানে আসার পরে জুন মাস পর্যন্ত ৬০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয়রা হবে সংখ্যালঘু। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। রাজাপালং এলাকার বাসিন্দা উখিয়া ডিগ্রি কলেজের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল শুক্কুর ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গা আসার আগে খুব সহজে যাতায়াত করা যেত। এখন গাড়ি পাওয়া যায় না। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ এক ঘণ্টা লাগে। ফলে ঠিকমতো ক্লাসে যেতে পারি না। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, প্রত্যাবাসনে প্রথম পদক্ষেপ ব্যর্থ হওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম প্রথমবার তাড়াহুড়ায় প্রক্রিয়াটি শুরু হচ্ছে না। কিন্তু দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়া খুবই উদ্বেগকজনক। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এখন যদি বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কোনো সমাধান না করে তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে, নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে, উখিয়াবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে অচিরেই আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো। উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই। তারা যা মন চায় তাই করছে। কাউকে খুন করতেও পিছ পা হচ্ছে না। আবার চেকপোস্ট পেরিয়ে সব জায়গায় যাতায়াত করছে। যা শুধু উখিয়াবাসী নয়, পুরো দেশের জন্য হুমকি। অবিলম্বে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি। উখিয়ার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার মফিজ মিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে উখিয়ায় ব্যবসার ধস নেমেছে। হাটবাজার-রাস্তা সবই তাদের দখলে। আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। অথচ তারা এসবের কর্ণপাত না করে শত শত দোকান খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। তাই একটিই দাবি- সরকার যেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। না হলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের ৩০টি সীমান্ত চৌকিতে একযোগে হামলার পর বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই বছরের নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু মিয়ানমারের শর্তে সেখানে যেতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো ভেস্তে গেল ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App