×

মুক্তচিন্তা

সড়ক শৃঙ্খলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৪৭ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সরকারি-বেসরকারি ও নিজস্ব সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রণীত হওয়ায় এই রিপোর্টটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। এই পরিসংখ্যান আমলে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার। সড়ক শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনারোধে নানা উদ্যোগ আমরা দেখি। এবার সড়ক শৃঙ্খলায় গত বৃহস্পতিবার সুপারিশযুক্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে। সুপারিশ প্রণয়নে ছিল সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন গঠিত কমিটি। এই প্রতিবেদনে ১১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আশু করণীয় ৫০টি, স্বল্পমেয়াদি ৩২টি ও দীর্ঘমেয়াদি ২৯টি। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সড়কে চলাচলের পরিবেশ, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, চালকের অসতর্কতা, সড়ক নির্মাণ প্রকৌশলগত ত্রুটি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর ও সংস্থায় দায়িত্ব পালনে অনীহা, সড়কের পাশে বসবাসরত জনগণের অসচেতনতা এসব বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে শিগগির টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়। সুপারিশগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। কতটুকু বাস্তব প্রতিফলন হবে তা দেখার বিষয়। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাই রিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এ ছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেট ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানি ঘটছে। ইদানীং মোবাইল ফোন কানে রেখে গাড়ি চালানো যেন ফ্যাশন অনেক চালকের কাছে। যদিও এ কাজ থেকে বিরত রাখতে আইন আছে। কিন্তু সে আইনের ব্যবহার হয় না। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে। দেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নাধীন আছে। আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর যেন দীর্ঘ না হয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ চলাচলের বিষয়টি পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবার উপলব্ধিতে আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App