×

সাময়িকী

রিজিয়া আপা আমাদের স্মৃতির জোনাকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০১৯, ০৬:৫১ পিএম

রিজিয়া আপা আমাদের স্মৃতির জোনাকি
রিজিয়া আপা আমাদের স্মৃতির জোনাকি

এবার তিনি সেই পদক পেলেন। পুরস্কার পাবার পর অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলাম, আমি প্রতি ফেব্রুয়ারিতে যাই। এবার গিয়ে দেখা করবো। সে দিন আপা আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন- ‘দুলাল, তুমি কি ভাবে সত-বোনটাকে ভুলে গেলে ভাই! তুমি ছাড়া আমাকে তো কেউ ‘জোনাকি বুবু’ বলে ডাকে না। আমাদের ভাইবোনের কি আর দেখা হবে না?’

আমার প্রথম কবিতার বই ‘তৃষ্ণার্ত জলপরী’ রিজিয়া আপাকে দেয়ার পর বললেন, বাহ! খুব চমৎকার নাম। কিন্তু কেন? আমি S. T. Coleridge-এর কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললাম, ‘Water Water everywhere/ (but) Not a drop to drink’… তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কেন? আমি বললাম, আমরা চার ভাই। আমার বোন নেই। তাই সেই তৃষ্ণাবোধ থেকেই এই নামকরণ। তিনি বললেন, আমি তো তোমার বোন, বুবু! চমকে উঠলাম তাঁর কথা শুনে! এভাবেই তিনি ১৯৮২ সালে আমার বুবু হয়ে গেলেন!

দুই. তার আগে, আমি ১৯৮০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘প্রতিরোধ’ পত্রিকায় যোগ দেই। সেখানে আমার সহকর্মী বাবুল মোশাররফ। আমাদের সম্পাদক আরেফিন বাদল ১৯৮২ সালে উদ্যোগ নিলেন আমাদের সবার বই বের করবেন। কিন্তু বাবুল মোশাররফের মৌলিক লেখা নেই। তাই তাকে দেয়া হলো- ‘কথাশিল্পীদের লেখা কবিতা’ সম্পাদনার দায়িত্ব। শুরু হলো তালিকা, যোগাযোগ এবং লেখা সংগ্রহ। আমরা দুজনে মিলে যাই বেইলি রোডে রাবেয়া আপা অর্থাৎ রাবেয়া খাতুনের বাসায়। তিনি নানা পদের খাবার বানিয়ে রমনার ‘খাবার দাবারে’ দেয়ার আগে আমাদের দিয়ে টেস্ট করাতেন। বলতেন- ‘দুলাল-বাবুল, দেখো তো হয়েছে?’ রিজিয়া আপার মধুবাগ বাসায় গেলে সরাসরি খাবার টেবিলে ডেকে বলতেন, ‘এখানেই বসো। খাবার দিচ্ছি!’ তাঁর এই অসাধারণ আন্তরিকতা, আপ্যায়ন ও আদরে খুব দ্রুত আপন করে নিতেন। তাঁর সান্নিধ্য, স্নেহ, ভালোবাসার তুলনা নেই। তিনি আমাকে ‘সত-ভাই’ মানে আপন ভাই ডাকতেন আর আমি দুষ্টুমি করে বলতাম- ‘সৎ ভাই’! আপার ডাকনাম ধরে ডাকতাম- জোনাকি বুবু!

আপার সাথে পরিচয় তাঁর ‘রক্তের অক্ষর’-এর ছোট্ট একটা রিভিউ করার মাধ্যমে। আমি ১৯৭৭ সালে ঢাকায় আসি। তখনই এই উপন্যাসটি সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়; পরে ১৯৭৮ সালে চিত্ত দা মুক্তধারা থেকে বের করেন। আমি বইটি নিয়ে সাপ্তাহিক পূর্ণিমায় আলোচনা করি। পূর্বাণীতে কাজ করতেন কবি ইকবাল হাসান। তাকে দিয়ে খবর পাঠালেন, যেন দেখা করি। সেই থেকে আমাদের শুরু।

কত কথা আপার ঝুলিতে, কত গল্প তাঁর ভা-ারে। রাজিয়া খানের ‘বটতলার উপন্যাস’ এক চিত্র সাংবাদিক রিজিয়া রহমানের নামে চালিয়ে দিয়েছে। পান চিবুতে চিবুতে মজা করে বলতেন- জানো, সাংবাদিকদের আমি নানা কারণে ভয় পাই। একবার মিলন আর ইকবাল ঈদ সংখ্যার জন্য লেখা চাইতে এলো। ঈদ সংখ্যা বিচিত্রার জন্য উপন্যাস লিখে মাত্র শেষ করলাম। এখন আরেকটি উপন্যাস লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। এ কথা শুনে তারা দুজন মিলে রীতিমতো থ্রেট করলো। ঘটনাটা পরে আপা মজা করে লিখেছিলেন- ‘ইকবাল আরো একপ্রস্থ চড়া- যদি না দেন, সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না জানিয়ে রাখি। কী হবে আমার জানতে চাইলে মিলন বলল- আপনাকে আমরা ব্ল্যাক লিস্টেড করব, আপনার কোনো লেখা, কোনো ছবি, আপনার সম্পর্কে কোনো খবর, সমালোচনা-আলোচনা আমাদের পত্রিকায় যাবে না’।

... দুই তরুণ লেখকের কথাবার্তা-হাবভাবে আমি প্রথমে হতবাক হলাম, তার পরই রেগে গেলাম, বললাম- তোমরা কি আমাকে হুমকি দিতে এসেছ! ভয় দেখিয়ে লেখা নেবে? শোনো, উপন্যাস তোমাদের আমি দেব না। কোনো লেখাই আর দেব না, যাও, আমাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করলে কর গিয়ে, ও নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই’। (দ্রঃ জন্মদিনে মিলনের জন্য লেখা/রিজিয়া রহমান/ সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬। বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা।)

ইমদাদুল হক মিলনের সাথে আপারও খুব মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। মিলনের লেখা থেকে পাই- ‘লেখালেখি নিয়ে এক ধরনের উন্মাদ জীবনযাপন করছি। পকেটে পয়সা নেই। সকালবেলা বেরিয়ে রাত করে বাড়ি ফিরছি। দুপুরে অনেকদিন খাওয়াও হয় না। রিকশা ভাড়ার পয়সা, চা-সিগারেটের পয়সাও পকেটে থাকে না। হেঁটে হেঁটে যাই। কোনো কোনো দুপুরে চলে গেছি রিজিয়া আপার বাসায়। আমার মুখ দেখেই তিনি বুঝতে পারতেন খাওয়া হয়নি। ঘরে যা আছে তাই খেতে দিতেন বা আমাকে বসিয়ে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে কিছু একটা রান্না করে নিয়ে আসতেন। সামনে বসিয়ে খাওয়াতেন। কত দিন আপার কাছ থেকে ৫০ টাকা, ১০০ টাকা চেয়ে নিয়ে আসতাম। তিনি কখনো না করতেন না। গভীর মমতায় হাসিমুখে দিতেন। যেন নিজের আদরের ছোট ভাইটিকে দিচ্ছেন। (দ্রঃ পিছনে ফেলে আসি : স্নেহময়ী রিজিয়া রহমান/ইমদাদুল হক মিলন। বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৮ জুন, ২০১৯, ঢাকা।)

এভাবেই রিজিয়া রহমান আমাদের সকলের বড় বোন হয়ে ওঠেন। আবার উল্টো করে আপার লেখায় ভাইবোনের গল্পের একই চিত্র পাই- ‘সেই সব দিনে, কোনো দুপুরে হঠাৎ এসে টিপে দিত আমার বাড়ির দরজার বেল। ঢুকেই বলত- খিদে পেয়েছে খুব, রিজিয়া আপা। বলি- এসো, আমার সঙ্গে ভাত খাও। রাজ্যের গল্প হয় খাবার টেবিলে বসে। (দ্রঃ জন্মদিনে মিলনের জন্য লেখা/রিজিয়া রহমান/ সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬। বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা)। আমাদের লেখকদের মধ্যে কবি শামসুল ইসলাম, কবি আসাদ চৌধুরী এবং রিজিয়া রহমান নিয়মিত পান খান। রাবেয়া আপার মুখটা সব সময় লাল টুকটুকে থাকতো। আমি একবার আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সাজনা গাছে বেড়ে ওঠা ‘গাছপান’ এনে দিয়েছিলাম। প্রায়ই সেই কথা মজা করে বলতেন- বরের পানের (বরপান) চেয়ে ভাইয়ের পান (গাছপান) এর স্বাদ আলাদা।

তিন. ১৯৮২ সালে প্রকাশিত আমাদের ‘কথাশিল্পীদের কবিতা’ সংকলনে ‘দুঃখগুলো’ নামে একটি অপ্রকাশিত কবিতা দেন। কবিতা সম্পর্কে বলেন- ‘কবিতা লিখি মনের আনন্দে। কিন্তু বই বের করতে চাইনি হয়তো। তবে ছোটবেলায় ভাবতাম, কবি হব। সবাই কবি বলেই ঠাট্টা করত। কিন্তু কীভাবে যেন গদ্যে এসে পড়লাম। কবিতা লিখি, যখন মন চায়। দু-একটা কবিতা ছাপাও হয়েছে। (দ্রঃ সাক্ষাৎকার/রিজিয়া রহমান, দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারি ০১, ২০১২, ঢাকা)। তিনি বলতেন, গদ্য লেখার চেয়ে পদ্য লেখা কঠিন। জীবনের দুঃখগুলো কবিতাতেই ভালোভাবে ফুটে ওঠে।

হ্যাঁ, জোনাকি আপার জীবনেও দুঃখ ছিল, তিনিও নানান বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। পারিবারিক ঐতিহ্য আর এক সাংস্কৃতিক আবহের মধ্যে বেড়ে উঠেও তাঁকে একবার বোরখা পরতে হয়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর মামার কাছে বড় হওয়া, স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। সেখানে কোয়েটা গভর্নমেন্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে দুই বছর লেখাপড়া করেন। কিন্তু মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত জটিলতার কারণে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়নি। তবু তিনি দমেননি। এ কারণে তিনি দেশে ফিরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

রিজিয়া রহমান কর্মজীবনের শুরুতে সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রিভুজ’ সম্পাদনা করেন। সাহিত্য পত্রিকার প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। লিটলম্যাগের লেখকদের সম্পর্কে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন : ‘প্রতিষ্ঠিতদের চাইতে অনেক তরুণের ভালো লেখা দেখি। সেগুলো অনেক সুন্দর। তারা লিটলম্যাগে লেখেন। তাদের বড় পত্রিকায় খুঁজে পাই না। ঈদ সংখ্যা বা বিশেষ সংখ্যায় তাদের লেখা দেখি না। দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা যারা দেখেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্যের মান নির্ণয় করার ক্ষমতা তাদের কিছুটা কম। তারা সেটাকে একটা রাজত্ব বলে মনে করেন।’

....আমি শুনেছি, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রকাশকরা টাকা নিয়ে বই করে। আমাদের সময়ে প্রকাশকরা টাকা নিয়ে বই করতেন না, বরং উল্টো রয়্যালিটি দিতেন। যেসব ছেলেমেয়ে টাকা জোগাড় করতে না পারে তাদের বই করার সুযোগ হয় না। এতে তারা খুবই মর্মাহত হয়। সুতরাং এ দিকটা নিয়ে চিন্তা করার আছে। (সাপ্তাহিক, ১১/৩০ সংখ্যা, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ঢাকা।)

প্রিয় পত্রিকা ত্রিভুজ আবার বের করার জন্য আমার সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যস্ততার তা আর হয়ে ওঠেনি। ঠিক তেমনি হয়ে ওঠেনি, তাঁর গল্প থেকে নাটক লেখা। শামসুর রাহমান, আহমদ ছফা, হারুন হাবীবের গল্প থেকে নাটক লেখার পর সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী রিজিয়া আপার গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক তৈরির জন্য প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে আপার মগবাজার বাসায় কয়েক দফা আলোচনা করার পরও আমাদের ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে গেছে! কারণ, পরবাসে চলে আসা।

আমার জোনাকি বুবুর জন্ম কলকাতার ভবানীপুরে। বাবার চাকরির কারণে ফরিদপুর, বাবার মৃত্যুর পর নানাবাড়ি ঢাকা, তারপর মামার সাথে চাঁদপুর, বিয়ের পর খনিজ ভূতত্ত্ববিদ স্বামী মীজানুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে এবং কিছুদিন কাটান আমেরিকায়।

সেই সব স্মৃতিকথা থাকছে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। শৈশব পর্ব নিয়ে লিখেছেন ‘অভিবাসী আমি’, তারপর লিখছেন- ‘নদী নিরবধি’ ১৯৫২ পর্যন্ত। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি তিন দেশ ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ দেখেছি। বিশ্বযুদ্ধ দেখেছি। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, ভারত-পাকিস্তান ভাগ, রাজনৈতিক টানাপড়েন, মুক্তিযুদ্ধ এসব আমি দেখেছি। ঐ সময়টা আমাদের সমাজ, সাহিত্য এবং রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়। ঐ সময়টাকে ধরে রাখার জন্যই স্মৃতিকথা লিখছি। তার নাম দিয়েছি- ‘প্রাচীন নগরীতে যাত্রা’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখে উঠতে পারবো কিনা জানি না।

চার. ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ আপার জন্মদিনের দুদিন আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর তা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। যাতে মূল বক্তব্য ছিল- এখনো তাঁকে একুশে পদক দেয়া হয়নি। সেখানে প্রায় দু’শ মন্তব্য এবং ১০/১২টি শেয়ার হয়। সেই লেখাটি দেখে সংবাদের সাহিত্য সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ একটি বিশেষ সংখ্যা করার কথা বলেন। আফরোজা পারভিন জানান- আপা লেখাটি দেখেছেন এবং আমাকে ফোন করতে বলেছেন। আপাকে ফোন দিলাম। তাঁর কথা শুনে যেমন ভালো লাগলো; অপর দিকে মনটা খারাপ হয়ে গেল। চোখের জ্যোতি হারিয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। চোখে প্রায় দেখতেই পাচ্ছিলেন না। চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে। কিডনি কাজ করছিল না। হার্ট দুর্বল। ক্যান্সারে ভুগছিলেন। লিখতে পারছেন না। তবু মনোবল অটুট। এবার তিনি সেই পদক পেলেন। তার পেছনে আমার যৎসামান্য ভূমিকা আছে। কথাশিল্পী আফরোজা পারভিন জানালেন, আপা বিষয়টি একটু আঁচ করতে পেরেছেন এবং খুশি হয়েছেন।

পুরস্কার পাবার পর অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলাম, আমি প্রতি ফেব্রুয়ারিতে যাই। এবার গিয়ে দেখা করবো। সে দিন আপা আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন- ‘দুলাল, তুমি কি ভাবে সত-বোনটাকে ভুলে গেলে ভাই! তুমি ছাড়া আমাকে তো কেউ ‘জোনাকি বুবু’ বলে ডাকে না। আমাদের ভাইবোনের কি আর দেখা হবে না?’ (২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৯, ১৬ আগস্ট ২০১৯)

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App