বিএসইসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্তে দুদক
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০১৯, ০২:৩৮ পিএম
দেশের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিশনের একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠীর যোগসাজশে দুর্বল কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত সময়ে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছে দুদক।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সুপারিশের আলোকে বিএসইসির পুনর্গঠনও করে সরকার। পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিভিন্ন অনিয়ম ও আইনি দুর্বলতা দূর করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ড. খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেন। তবে টানা আট বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করলেও আইপিও ও প্লেসমেন্ট নিয়ে বিতর্ক এড়াতে পারেনি বিএসইসি। নিম্নমানের কোম্পানির তালিকাভুক্তি, অযৌক্তিক প্রিমিয়াম ও লাগামহীন প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের অনুমতির মাধ্যমে কিছু কোম্পানিকে পুঁজিবাজারকে টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন এসইসির চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন। অচেনা, স্বল্প পরিচিত বিভিন্ন কোম্পানি আইপিও প্রসপেক্টাসে তথ্য অতিরঞ্জিত ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আয় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখালেও কয়েক বছরের মধ্যেই কোম্পানির আসল চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আইপিওর অনুমোদন পাওয়ার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়ে মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। আইপিও পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১ সালের ১৫ মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বর্তমান কমিশনের অনুমোদন নিয়ে মোট ৮৫টি কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে আইপিওর পারফরমেন্স পর্যালোচনার জন্য ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ সময়ে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অনুমোদন নিয়ে মোট ৭১টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি বা ৫৩ শতাংশ কোম্পানিই ছিল নিম্নমানের। উৎপাদন বন্ধ ও লোকসানের কারণে ইতোমধ্যেই ১০টি কোম্পানি ‘জেড ক্যাটাগরি’তে নেমেছে। আইপিওর মাধ্যমে বর্তমান কমিশন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে কোম্পানিগুলোকে। এর বাইরে রাইট ও রিপিট পাবলিক অফারের মাধ্যমে আরো হাজার হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছে কমিশন। প্রিমিয়াম পেতে যেসব কোম্পানি আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছিল, সেগুলোর বড় অংশের আয়ই কমে গেছে। কোনো কোনো কোম্পানি পড়েছে লোকসানে।
জানা গেছে, মূলধন উত্তোলন বিষয়ে এসইসির আলাদা বিভাগ ও কমিশনার থাকলেও আইপিও অনুমোদনে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ইচ্ছাই প্রাধান্য পায়। আইপিওতে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতও উপেক্ষা করা হয়েছে। আইপিও প্রসপেক্টাসে দেয়া তথ্যের সত্যতা ও যথার্থতার দায় রাখা হয়েছে ইস্যু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। যদিওতে আইপিওতে দেয়া ভুল বা মিথ্যা তথ্যের কারণে আজ পর্যন্ত কোনো ইস্যু ম্যানেজারকে শাস্তি পেতে হয়নি। বিতর্ক এড়াতে আইপিওর আবেদন করা কোম্পানির বাস্তব পরিদর্শন প্রক্রিয়াও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এসইসির অনুমোদনে খেলাপি প্রতিষ্ঠানও নাম পাল্টিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পেরেছে। আবার দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি শুধুমাত্র কাগজে-কলমে মুনাফা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে শত শত কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করতে পেরেছে। দুর্বল কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয়ায় ২০১৩ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এক কোম্পানির অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়া আটকে দেন।