×

জাতীয়

প্রাপ্তি অনেক, তবে প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৮ এএম

প্রাপ্তি অনেক, তবে প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের ঢাকা সফর রুটিন ওয়ার্ক হলেও এই সফরকে ঘিরে নতুন প্রত্যাশার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান, নতুন আরো চুক্তি স্বাক্ষরসহ ঢাকা-দিল্লির ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা ঢাকার। এস জয়শঙ্করের সদ্য এই সফরে বহুল আকাক্সিক্ষত তিস্তাসহ ৫৪ নদীর পানি বণ্টনের সুস্পষ্ট আশ্বাস না মিললেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রাপ্তির খাতা একেবারে শূন্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের এগুলো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ এবং ক‚টনীতিকরা। গত মঙ্গলবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমারের জন্যও ঝুঁকির কারণ হবে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই একমত যে, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন হতে হবে। এ সংকটের দ্রুত সমাধান জরুরি। প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভারত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫০টি বাড়ি নির্মাণ করেছে বলেও তিনি জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের এই প্রথম মুখ খোলাকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ক‚টনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এই প্রথম রোহিঙ্গা ইস্যুকে নিজেদের সমস্যা মনে করে খোলামেলা আলোচনা করেছে ভারত। চীন আমাদের কথা দিয়েছে, তারা মিয়ানমারকে বুঝিয়ে রাজি করাবে। এখন ভারত আমাদের পাশে দাঁড়ালে আমাদের হাত আরো শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো গত ১০ বছরে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ভোরের কাগজকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এস জয়শঙ্কর প্রথম সফরেই একটি নতুনত্ব এনেছেন। চমক এনেছেন। তিনি রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এতে আমাদের প্রত্যাশা আরো বেড়েছে। আশা করি, অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মাধ্যমে আরো প্রাপ্তি যোগ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়শঙ্করের ঢাকা সফর সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও এই সফরে আমাদের প্রাপ্তি কম নয়। গত ১০ বছরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। অনেক অমীমাংসিত ইস্যুর মীমাংসা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার তিন দেশের স্বার্থেই বাস্তবসম্মত এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আসাম রাজ্যের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) কার্যক্রম ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে ওয়ালিউর রহমান বলেন, আসাম নিয়ে আমাদের এক ধরনের দুশ্চিন্তা ছিল। জয়শঙ্কর অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু, ভারত নিজেই তা সমাধান করবে। বর্তমানের উত্তম কূটনীতি হলো অনেস্ট ওয়ার্ড, অনেস্ট ম্যান। আমরাও এই নীতিতে বিশ্বাসী। ফলে আসাম ইস্যুতে আমাদের আর চিন্তার অবকাশ নেই। অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আসামের এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তার কথার পর আমরা আশা করছি, শেষ পর্যন্ত এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়েই থাকবে এবং তারা নিজেরাই সমাধান করবে। এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফরে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের কানেকটিভিটি চুক্তি রয়েছে। রেল, সড়ক, আকাশ পথ ছাড়াও জাহাজে ভারতের সঙ্গে যাতায়াত শুরু হয়েছে। এতে করে সুবিধা আরো বাড়বে। তবে জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে অক্টোবরে ভারত যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আরো ১৪-১৫টি চুক্তি স্বাক্ষর হবে। সেখানে অমীমাংসিত ইস্যুসহ নতুন বিষয়গুলো তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে। অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে ঝুলে থাকা তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে নতুন উপায় খোঁজার চেষ্টা করার কথা বলেছেন জয়শঙ্কর। অন্যদিকে জয়শঙ্করের ঢাকা সফরে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি ভারতের কাছে বাংলাদেশের চাহিদা সম্পর্ক জানতে পেরেছেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App