×

সাময়িকী

নির্বিঘ্ন ও জেলাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০১৯, ০৬:২৩ পিএম

নির্বিঘ্ন ও জেলাস

ঘুম থেকে উঠেই হৃদিমার মেজাজ বিগড়ে আছে। ফেসবুকে যেয়েই দেখে হোমপেজে রক্তিমের মাখোমাখো সেলফি। সুন্দরী এক মেয়ের সাথে। মেয়েটাকে চিনেও না! যে মেয়েটাকে ট্যাগ করেছে খোঁজ নিতে যেয়ে দেখে প্রোফাইল লক। ক্যাপশনের নমুনা দেখে হৃদিমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে! এত ছোটলোক মানুষ কীভাবে হয়? নির্লজ্জ বেহায়া স্বভাব ছিঃ! রক্তিম লিখেছে, সুন্দরীদের সাথে সেলফির মজাই আলাদা। ছিঃ ছিঃ এইটা কোনো ভাষা হলো? কোনো ভদ্র ছেলে এভাবে লিখতে পারে? হৃদিমার ইচ্ছে করছে ছোটলোক রক্তিমের সাথে এক্ষুনি এই মুহূর্তে ব্রেকআপ করতে! এই রকম লুইল্যা পড়া ছেলের সাথে রিলেশন রাখার কোনো মানেই হয় না। যার রিলেশনের প্রতি ন্যূনতম রেস্পেক্ট নেই! ব্রেকআপই ওর জন্য উপযুক্ত শাস্তি!

কই হৃদিমা তো আজ পর্যন্ত কারো সাথে এমনভাবে সেলফি দেয়নি আর ওর কোনো ছেলের পিছনে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরতেও ঘিন্না লাগে! হাউ ডেয়ার! না, এর একটা বিহিত করতেই হবে যেন এই জীবনে সেলফি তোলার সাধ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

হৃদিমা চটপট রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশে রওয়ানা হলো। ভার্সিটিতে পৌঁছে হৃদিমার মেজাজ আরো বিগড়ে আছে, ও ভেবেছিল আশপাশেই রক্তিমকে দেখতে পাবে অন্য সব দিনের মতো করে। আর ও পাশ কাটিয়ে চলে যাবে দুমদাম করে অথচ উল্টো তাকেই নাকি আশপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে হচ্ছে, ভাবা যায়! এত অপদস্ত!

রাগে হৃদিমা থরথর কাঁপছে অথচ রক্তিমের পাত্তা তো নেইই একটা কল, ম্যাসেজ, মিসকল কিচ্ছু নেই। ফোনটা দেখবে না করেও মিনিটে ৬০ বার দেখছে, নিজের ওপর বিরক্ত হৃদিমা, হচ্ছেটা কি!

হৃদিমার মনটা বিগড়ে আছে। কারো সাথেই ভালো করে কথা বলছে না। হৃদিমার ক্লোজ ফ্রেন্ড যে কি-না হৃদিমার হাঁড়ির খবরও জানে স্বাগতা বলল কিরে ফের ঝগড়া করেছিস? হৃদিমা কথাটা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল!

বয়েই গেছে ওই ছোটলোকটার সাথে ঝগড়া করতে? আমি রিলেশনটা অচিরেই ব্রেকআপ করছি!

স্বাগতা হাসতে হাসতে বলল একদম ঠিক ‘মুক্তিতেই বন্ধন’।

হৃদিমা কথাটা শুনে আরো রেগে গেল। বলল, দেখ তুই কি আমাকে তোর মতো আঁতেল পেয়েছিস, আমি এসব আজগুবি কথা মানিও না বিশ্বাসও করি না। পাগলদের যত উদ্ভট কথা। হৃদিমা মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনলাইনে গেলো। আসলে হৃদিমা রক্তিমকে খুঁজছে! না রক্তিম প্রায় ১০ ঘণ্টা আগে অনলাইনে এসেছিল। তার মানে সে নিশ্চয়ই আর রাত জেগে মেয়েটার সাথে ফোনে কথা বলেছে যাতে হৃদিমা বুঝতে না পারে। এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে! হৃদিমা স্বাগতার কথার সূত্র ধরে বলল, কেউ মুক্তি চাইলে যাক না, কে ধরে রাখছে বন্ধনে। অনেক মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শোন স্বাগতা, আমি শিয়াল না যে আঙুর ফল টক বলে গাছের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে চলে আসব!

হৃদিমা আবোল-তাবোল কথা বলছে। ভিতরে ভিতরে ভীষণ ছটফটাচ্ছে এতক্ষণ পর্যন্ত নো ফোন, নো মেসেজ ভাবা যায়? হৃদিমা আবার অনলাইন দেখল, না রক্তিমের কোনো মেসেজ নেই কিন্তু মনে মনে জেদ ধরে বসে আছে ও নিজেও ফোন দিবে না! কি ভেবে হুট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দিল ‘ব্রেকআপ থেকে যদি নতুন প্রেম হয় তাহলে ব্রেকআপই ভালো।’

এখন একটু হৃদিমার ভালো লাগছে। কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগছে!

আসলে মানুষ কখন যে কীভাবে শান্তি পায় আগে থেকে কিছুই বুঝতে পারে না! তবে সবচেয়ে মানুষ বেশি শান্তি পায় কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলে তার ভিতরে রক্তক্ষরণ করাতে। খুন করলে মানুষ দেখতে পায় কিন্তু কথার আঘাতেও যে মানুষ খুন করা যায় এই সত্যটা কেউ জানে না! কাউকে ছুরির আঘাতে খুন করার চেয়ে কথার আঘাতে খুন করা আরো ভয়াবহ তার রেশ থেকে যায় দীর্ঘদিন! আর খুন হলে কিছুক্ষণ ছটফট করে মরে যায়, সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় না।

একটু পরেই হৃদিমার ফোনটা বেজে উঠল। রক্তিমের ফোন হৃদিমা কেটে দিল। আবার কল, আবার কেটে দিল। পর পর ৭ বারই হৃদিমা কেটে দিল। রক্তিম বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে হৃদিমার কি হলো? এভাবে ফোনটা কেটে দিচ্ছে কেন? এনিথিং রং?

হিসাব মিলাতে পারছে না রক্তিম। হৃদিমাকে কানেক্টও করতে পারছে না! রক্তিম শেষমেশ মেসেজ দিল। তুমি এসব কি স্ট্যাটাস দিছ? কারে লিখছ এইগুলো পাগলের মতো করে? হৃদিমা জবাবে লিখল আমি কি লেখি না লেখি এসব নিয়ে ভাবতে হবে না মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ! রক্তিম : আচ্ছা আমি বুঝলাম না তোমার হইছেটা কি? হৃদিমা : আমার কিছু হয় নাই! রক্তিম : তাইলে ফোন ধরো না কেন? হৃদিমা : ইচ্ছে করে না তাই! তারপর কয়েকদিন বিরতি। কেউ কারো সাথে মেসেঞ্জার বা ফোনে যোগাযোগ করেনি। কারণ দুজনেরই প্রেস্টিজ আছে! কেউ কারো কাছে ছোট হবে কেন?

প্রেম করার জন্য দুজনের হাতেই ডজনখানিক অফার আছে! দুজনই ভাবছে একজনের পেছনেই ঝুলে থাকতে হবে, কোনো মানেই হয় না! রক্তিম ভাবছে এসবের কোনো মানে আছে? কথা নাই বার্তা নাই এমন রাফ বিহ্যাভ কেউ করে? আরে বাবা বলবি তো আমার দোষটা কই? আজিব তো! হৃদিমা ভাবছে, কত বড় লম্পট একটা ভাবা যায়? এত বড় একটা কাণ্ড ঘটানোর পরও একবার সরি বলা তো দূরের কথা, যোগাযোগই বন্ধ করে দিয়েছে? কত বড় স্পর্ধা! চোরের মার বড় গলা একেই বলে!

এর মধ্যে কেউ এই কয়দিন ফেসবুকে কোনো স্ট্যাটাস বা ছবি আপলোড করেনি। ভার্সিটিতে দেখা হচ্ছে না, ইচ্ছে করেই যেন দুজন দুজনকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুজনেরই মন খারাপ। কেউ কারো কাছে নতি স্বীকার করবে না।

ইগো প্রবলেম! কয়েকদিন পর রক্তিমের ফোন। হৃদিমা এখন কিছুটা নরম। ফোনটা আসা মাত্রই রিসিভ করল যেন এই কয়দিন এই ফোনের আশায়ই বসেছিল! রক্তিমই প্রথম কথা বলল রাগ কমছে? হৃদিমা : হুম কমছে! রক্তিম : আচ্ছা বলতো তুমি আমার উপর ক্ষেপছিলা কেন? আমি তো চিন্তা করে খুঁজেই পেলাম না! হৃদিমা : তা পাবা কেন? তুমি একটা ছোটলোক এবং অসভ্য! সেলফি তুলছ ভালো কথা, তারপর কি লিখছ সুন্দরী মেয়েদের সাথে ছবি তোলার মজাই আলাদা! ছিঃ ছিঃ কি লোভী তুমি! রক্তিম : এইখানে লোভের কি হইল? হৃদিমা : সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ছোক ছোক করো এইটা লোভ না? তোমার যে একটা রিলেশন আছে বেমালুম ভুলে যাও? তার মানে কি? তুমি কমিটেড না! রক্তিম : তুমি কিন্তু ছোট একটা ব্যাপার নিয়া অনেক প্যাঁচাইতেছো! এইটা ঠিক না! হৃদিমা : মোটেই না! ধরো আমি একটা কিউট ছেলের সাথে সেলফি তুলে ক্যাপশন দিলাম- কিউট ছেলের সাথে m 1:44 PM. কিউট ছেলের সাথে সেলফি তোলার মজাই আলাদা। তখন তুমি আমার রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। আর তুমি যদি বলো তোমার কিছুই হতো না তাহলে অন্যকথা। রক্তিম : আসলেই কিছু হতো না, তুমি লিখতেই পারো। হৃদিমা : তুমি তাহলে আমাকে ভালোই বাসো না। আমি আকাশের মতো উদার কোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারব না। এই ভালোবাসাবাসির ক্ষেত্রে খুবই সংকীর্ণ মন আমার। আমার ভালোবাসায় কোনোরকম ভাগাভাগি আমি মানব না। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত আমার একচ্ছত্র অধিকার। ভালোবাসায় আমি স্বৈরাচারী। সো, তুমি তোমার মতো উদার কাউকে বেছে নিতে পারো। যেখানে জেলাস নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App