×

মুক্তচিন্তা

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৮:২০ পিএম

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, তবুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় প্রায় প্রতিদিনই আদালত চত্বরে যেতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। কিন্তু অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে বলে গত মঙ্গলবার পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ বিশেষত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারার দায় মূলত রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। আমরাও আদালতের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করছি। আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি মনে করছি। জানা যায়, প্রায় নব্বই শতাংশের উপরে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হয় না। লোকলজ্জা, পারিবারিক ও সামাজিক লজ্জার কারণে এসব ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একই সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষকদের থাবা থেকে। জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন জোরালো ভূমিকা দেখা যায় না। সাধারণত দরিদ্র ও দুর্বল ঘরের মেয়েরাই ধর্ষণের শিকার হয়। দীর্ঘমেয়াদে মামলা চালানোর মতো অর্থ ও সময় তাদের পরিবার দিতে পারে না। সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী নয়। বিপরীত দিকে অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা থেকে শুরু করে তদন্ত, বিচার সবখানেই নারীকে প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়। ফলে দেখা যায় প্রভাবশালীদের চাপে অনেক ঘটনাতেই আপস করতে হয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ শতকরা ৪-৫ ভাগ শাস্তি হয়। আমরা চাই সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App