×

অর্থনীতি

৭০০ কোটি টাকার সিইটিপি অকার্যকর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০১৯, ১২:০৮ পিএম

৭০০ কোটি টাকার সিইটিপি অকার্যকর
সাভার চামড়া শিল্পনগরীর অকার্যকর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নিয়ে বিপাকে ট্যানারি মালিকরা। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিইটিপি শুরু থেকেই নির্মাণ ত্রুটির কারণে বর্জ্য শোধন করতে পারছে না। যার কারণে বিসিকের এই চামড়া শিল্পনগরীতে অবস্থিত ট্যানারির প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ব্যবহার করতে পারছে না রপ্তানিমুখী চামড়াজাত শিল্প। ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানি। কমছে কার্যাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে সিইটিপি নির্মাণে। অথচ নির্মাণ ত্রুটির কারণে শিল্পনগরীর তরল বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে না। দূষিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ। বুড়িগঙ্গার মতোই ভয়াবহ দূষণের শিকার সাভারের ধলেশ্বরী নদী। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাভারে ১৯৯ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরের সব ট্যানারির বর্জ্য পরিশোধনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পের এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৬৪২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সিইটিপি এবং অন্যান্য বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিইটিপিতে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ লবণ থাকলে বর্জ্য পরিশোধনে ব্যবহারিত রাসায়নিক কোনো কাজ করে না। চামড়া শিল্পে প্রচুর লবণ ব্যবহার হয়। যে কারণে বর্জ্য পরিশোধন করা হলেও শোধিত পানিতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আসছে না। একই সঙ্গে বর্জ্য শোধনের পরিমাণগত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এখনো স্থাপন করা হয়নি টেস্টিং ল্যাবরেটরি এবং কন্ট্রোল ও মনিটরিং সিস্টেম। এসব কারণে সিইটিপি লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ এখনো পায়নি। ফলে বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না বড় ব্র্যান্ডগুলো। ফলে দেশে ভালো মানের কম দামি চামড়া থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম বলেন, সিইটিপিতে লবণ পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক ট্যানারিতে মেশিনের মাধ্যমে চামড়া থেকে লবণ ঝেড়ে ওয়াস করা হয়। যে কারণে পানিতে লবণের মিশ্রণ কম থাকে। এই বিষয়ে শ্রমিকদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য আমরা ট্যানারি মালিকদের অনুরোধ করেছি। তবে বিপুল টাকা ব্যয়ে এত বড় নির্মাণ ত্রুটি স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পরিবেশবান্ধব করতে এখনো অনেক কাজ বাকি। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ড্রেনেজ অবস্থা খুবই খারাপ। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) ঠিকমতো কেমিকেল দেয়া নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থাও নেই। ফলে তরল বর্জ্য সঠিকভাবে পরিশোধন হচ্ছে না। বিটিএ সভাপতি বলেন, সাভারে পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে না ওঠার পেছনে বিসিকের গাফিলতিও রয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়ে হাজারিবাগের ট্যানারিকে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করেছে। এ ছাড়া বারবার সময় বাড়ানোর পরও শিল্পনগরীর কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। জানতে চাইলে চীনা ঠিকাদারি কোম্পানির প্রকল্প কনসালট্যান্ট ও সাভার চামড়া শিল্পনগরীর সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, এখন তরল বর্জ্য ফিল্টার করার কাজ (ডি-ওয়াটারিং) করা হচ্ছে না। কারণ এ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতিও এখনো আসেনি। তবে কাজ শুরুর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো যন্ত্রপাতি কেন আসেনি জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App