×

জাতীয়

জঙ্গি দমনে আমেরিকা-ভারতের চেয়ে আমরা এগিয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১২:২৪ পিএম

জঙ্গি দমনে আমেরিকা-ভারতের চেয়ে আমরা এগিয়ে
জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই মন্তব্য করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য আমরা শান্তিতে রয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পারিনি। যে কোনো সময় তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এ নিয়ে নিরুদ্বেগ থাকার কোনো কারণ নেই। গতকাল ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। সাক্ষাৎকারে বৈশি^ক জঙ্গিবাদ, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, বিস্তার লাভ, জঙ্গি দমনে সরকারের পদক্ষেপ এবং সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা নিয়ে কথা বলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা কতটুকু? এ প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনেক ব্যবস্থা নেয়ার পরও দেশে এখনো জঙ্গি হামলার ঝুঁকি রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ উত্থান হয়। ওই বছরের মার্চে তিনটি ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা হয়েছে। ঢাকায় র?্যাবের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে সন্দেহভাজন আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার চেষ্টায় হামলাকারীর নিহত হওয়া, ঢাকায় একটি পুলিশ চেকপোস্টে হামলার চেষ্টা এবং সিলেটের আতিয়া মহলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ, যা আইসিসের ঘাঁটি বলে পরে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপর দেশের নিরাপত্তা বাহিনী অসংখ্য জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছে। কিন্তু এর মানে এই নয়, আমরা আশঙ্কামুক্ত রয়েছি। এমন গ্যারান্টি দেয়া অসম্ভব। বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের উদাহরণ তুলে ধরে এই সামরিক ব্যক্তিত্ব বলেন, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো শান্তিপ্রিয় দেশে জঙ্গি হামলার পর আশঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। আমেরিকায় অনেক বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়। গত দুই বছরে জঙ্গি দমনে আমেরিকা-ভারতের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি। দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঙ্গি হামলাপ্রবণ সময় ২০০৪-০৫ সাল। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৪ সালে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন একশ’রও বেশি মানুষ। ওই বছরের জানুয়ারিতে প্রথম দফা বোমা হামলা হয় হজরত শাহজালাল (র.) মাজার প্রাঙ্গণে। এতে প্রাণ হারান সাতজন। একই জায়গায় দ্বিতীয় বার গ্রেনেড হামলা হয় ২১ মে। হুজির ওই হামলায় তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনারসহ আহত হন ৭০ জন। সারা বছর নানা হামলায় নিহত হন সাংবাদিক মানিক সাহা ও হুমায়ুন কবির বালুসহ শতাধিক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গিনেতা বাংলা ভাইয়ের উত্থান দেশে-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে লোমহর্ষক। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় নিহত হন ২৪ জন। আহত হন আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জন। অন্যদিকে জঙ্গি তৎপরতা নতুন মাত্রা নেয় ২০০৫ সালে। লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, গাজীপুরের বিভিন্ন আদালতে হামলায় বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী, বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও কয়েকজন আইনজীবীসহ নিহত হন ১৮ জন। আহত হন ৯০ জনেরও বেশি। ওই বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা। একই দিনে জেএমবি ৬৩টি জেলার ৫১১টি স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। এ হামলায় তিনজন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। জঙ্গি দমনে সরকার কতটা সফল? এর উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জঙ্গিবাদে গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন স্বস্তির বাতাস মিলছে বাংলাদেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ‘জঙ্গি ডেরা’ ভেঙে তছনছ। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। জঙ্গিবাদকে ‘না’ বলুন- এ আহবানে সাড়া মিলেছে সব মহলেই। সরকারের পাশাপাশি জনগণও এখন অনেক সতর্ক। তবে জঙ্গিবাদ যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকবে হবে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App