×

জাতীয়

ডেঙ্গুর বিস্তার ফের ঊর্ধ্বমুখী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:৪৭ এএম

মাঝে দুয়েক দিন নিম্নমুখী থাকার পর আবারো বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর মৌসুম এখন চলছে। আগস্ট মাসের এখনো ১৫ দিন বাকি। এ ছাড়া পুরো সেপ্টেম্বরজুড়েই থাকবে ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই আপাত দৃষ্টিতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম মনে হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে গেছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ঈদের আগে পরে এবং ঈদের দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ওই সময় আক্রান্ত অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হননি। এখন তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাই সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা শতক পেরিয়ে হাজারের ঘরে পৌঁছে ২৯ জুলাই। ওই দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২১৭ জন। এরপর থেকেই ক্রমাগত বাড়তে থাকে এই সংখ্যা। মাঝে দুই তিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। আক্রান্তের এ সংখ্যা অর্ধ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ঢাকার বাইরেও ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে (ঢাকা শহর বাদে) আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল কিশোরগঞ্জে। সেখানে ৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আর চট্টগ্রামের চাঁদপুরে ৪৭ জন, খুলনার যশোরে ৩০ জন, রাজশাহীর বগুড়ায় ৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৮০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৪৪ জন। আর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। তবে গণমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ১৪০ ছুঁই ছুঁই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৮ ও ৯ আগস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল কম। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১২ তারিখ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও গতকাল এই আক্রান্তের সংখ্যা আবারো বাড়তে দেখা যায়। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৪৬১ জন। আর আগস্ট মাসের ১৫ দিনেই এডিস মশাবাহিত এই জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৮১৯ জন। এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ছুটির দিনে যথাযথ রিপোর্টি হয় না। এ ছাড়া ঈদের সময় কেউ হাসপাতালে থাকতে চায় না। তাই জ¦র হলেও অনেকে ডায়াগনসিস করেনি এবং হাসপাতালেও ভর্তি হননি। কিন্তু তারা এখন আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এডিসের বংশ বিস্তার রোধে কোনো ভ‚মিকা রাখবে কী না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে মশা উড়তে পারে না। এ ছাড়া আগের পানিতে জমে থাকা এডিসের লার্ভগুলো ভেসে অন্যত্র চলে যায়। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর এডিস মশা ব্যাপকভাবে ডিম পাড়ে এবং তাতে লার্ভা উৎপন্ন হয়ে এডিসের ব্যাপক বংশ বিস্তার হয়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়া ও কমার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর মৌসুম। এসময় রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তবে চলতি মাসেই গত কয়েক দিনে আমরা দেখেছি আক্রান্তের সংখ্যা ওঠানামা করছে। শতক পেরিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে পৌঁছেছে অনেক আগেই। এরপর তা দুই হাজারও ছাড়িয়ে যায়। তবে গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নেমে আসে। তবে গতকালের তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যাটা আবারো বাড়ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে তা এখনই বলা যাবে না। ৬/৭ দিন যদি আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে তবেই তা বলা যাবে। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে বলে মনে করেন না প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেনিন চৌধুরী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আক্রান্তরা ডায়াগনসিসের আওতায় আসেনি তাই মনে হচ্ছে সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার মনে হয় ছুটিতে হাল্কা জ¦র নিয়েও যারা ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে গেছেন তারা এখন রাজধানীতে ফিরছেন। যেখানে ছিলেন সেখানে হয়ত ডাক্তার দেখানোর কিংবা পরীক্ষা করার সুযোগ পাননি। এখন ঢাকায় ফিরে তারা ডাক্তার দেখাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, আগস্টের ১৫ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারে পৌঁছেছে। এডিস মশা এবং এর লার্ভা ধ্বংস করা না গেলে আক্রান্তের সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল। ৪ জনের মৃত্যু : গতকাল ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুর স্বাস্থ্য সদর কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী তপন কুমার মণ্ডল, ঢাকা শিশু হাসপাতালে রাজ চৌধুরী (২), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আগারগাঁও তালতলার মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মৌসুমি আক্তার (২৫) এবং মাগুরা সদর উপজেলার নরসিংহাটি গ্রামে জয়নাল শরীফ (৫২) মারা যান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App