১৫ অগাস্ট, ১৯৭৫
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট, আমাদের স্বাধীনতা দিবস,
ইস্কুলে পতাকা তোলা হবে, ভাষণ, জিলিপিতে শেষ,
লাইনে দাঁড়িয়েছি, পতাকা তোলা হলো, ভাষণ নেই,
জিলিপি নেই, বলা হলো বাড়ি চলে যাও, বঙ্গবন্ধু নেই,
কে বঙ্গবন্ধু? ওহ, শেখ মুজিবুর! তিনি নেই, কেন?
বাসায় বাবার থমথমে মুখ, কথা বলছেন না, নিশ্চুপ,
কি হয়েছে? বাবা বললেন শেখ মুজিবুর রহমান
কেঁদে ফেললেন তিনি, ওরা ওকে মেরে ফেলেছে
সবাইকে গুলি করে হত্যা করেছে সমস্ত পরিবারকে
এমনকি শেখ রাসেলকেও তোর বন্ধু, এত ছোট...
বুকের মধ্যে তীব্র চাপ অনুভব করলাম, রাসেল নেই?
রাসেল আমার বন্ধু, কেউ কাউকে কখনো দেখিনি,
আলাপ পরিচয় হয়নি কখনো, শুধু কিছু পোস্টকার্ড
পত্র পাঠিয়েছিলাম তাকে, পত্রমিতালি পাতানোর জন্য...
উত্তর পাইনি প্রথমে... হঠাৎ গোটা গোটা অক্ষরে...
‘প্রিয় দোস্ত’... বাংলাদেশের চিঠি... শেখ রাসেলের...
তারপর থেকে আমরা লিখে লিখে কথা বলতাম...
কথা ঠিক নয়, পুরোটাই এতাল-বেতাল আবেগের...
এক চিঠিতে রাসেল লিখেছিল সে কলকাতায় আসবে...
দেখা হবে তো? আমি লিখলাম- এসো, আমরা
দুজনে ঘুরে বেড়াব ভিক্টোরিয়া, তারামণ্ডল, চিড়িয়াখানা...
রাসেল উত্তর দিল- না, না, ওসব নয়, আমি তোমার
বাড়ির পিছনের কলাবাগান দেখতে যাব যেখানে সব
মৌমাছিরা সভা করে, যেখানে ঝগড়া করে পাখিরা...
নাহ। তার আর কোনো চিঠি পাইনি, ওটাই শেষ,
ভাবতে ভাবতেই মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল,
হাতে নিলাম দাদার তরোয়াল, দেওয়ালে ঝুলছিল,
সোজা হাজির হলাম আমাদের বাড়ির কলাবাগানে,
এক এক কোপে ভূপাতিত করলাম সবক’টি গাছ,
চিৎকার করে বলছিলাম- ফারুক, রশিদ, ডালিম...
তারপরেই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো প্রথম...
‘শুয়োরের বাচ্চা’... বাবা পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন...
লক্ষ করলাম, তিনি আমায় কিছুই বললেন না।