×

সাময়িকী

দোহারের ছদ্মবেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০৮:০২ পিএম

এদিকে এমন ঘটনায় হালদারদের সঙ্গে মল্লিকদের প্রতিবেশীর সম্পর্কেরও তো খানিকটা এদিক-ওদিক ঘটে। আবার, গোড়াখালের দীনেশ মলঙ্গির কাছ থেকে সুদে টাকা আনার যে প্রস্তাব রণজয়কে দিয়েছে সঞ্জয়দের জ্ঞাতি দেবু, সেখানেও তো কিছুটা ওলটপালট ঘটেছে।

ভাসার হাটখোলায় হওয়া কমিটিতে কিংবা উপজেলার কমিটির লোকজন কিংবা উত্তর মঘিয়ার বিএনপির লোকজন পরিতোষকে তাদের গোনায় না ধরলেও বড়পুকুরিয়ার যারা জানে তারা পরিতোষকে ওই কাতারেই রাখে। এখন শোনে হাসিনার দল খালেদার সরকারকে প্রায় বেকায়দায় ফেলছে। মাগুরা না কোথায় এক নির্বাচনের পরে এই ঘটনা, দেশে সামনে অবরোধ আসতে পারে। কিছুদিন আগে গোড়াখালের মলঙ্গি বাড়িতে হরিসভা মন্দির নিয়ে যে মিটিং হয়েছিল, সেখানে আসার কথা থাকলেও আসতে পারেনি অনিমেশ মলঙ্গি। এত বড়ো অফিসার, সেও নাকি অবরোধ না হরতালের জন্যে খুলনায় মিটিং বাতিল করেছিল। সেদিনই অনেকেই বুুঝতে পেরেছে সামরে দেশ অচল হয়ে যাবে।

এই সমস্ত ঘটনা আগে পাছে মিলিয়ে এই রসিকের দোকানের সামনে আগেও তো এসব কথা আলোচনা হয়েছে। দাঁত কেলিয়ে হেসে পরিতোষ যতই নিজেকে সে জায়গা থেকে সরিয়ে আনুক, অনেকেই পরিতোষের বিষয়টা খারিজ করে দেয় না। কিন্তু এখন অজিয়র না-এলে বোঝাও যাবে না, আসলে কী নিয়ে কথা বলতে আসবে। যদি এই-ই বিষয় হয় তাহলে রণজয় মনে সাজিয়ে রেখেছ কী বলবে। তবে এখন রসিক খুড়াই পরিতোষকে খোঁচাটা দেয়, ‘ভাইপো রণ যা বোজজে বোজজে, তুই কী বুজিচিস সেইয়ে ক’ দেই (বল দেখি)?’

পরিতোষ হঠাৎ রসিকের এই প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খায়। বিকাল ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। কোনো গাছের মাথায় এখন আর পশ্চিমে ডুবে যাওয়া সূর্যের আলোর আভা নেই। সন্ধ্যা হওয়ার আগের এই ঘণ্টাখানেক আগে চারধারে এক ধরনের স্তব্ধতা ভর করে। রসিকের দোকানের সামনে রাস্তা তারপরই খাল। সে জলে ভাটার টান। সেখানেও অতি ধীরে গোড়াখালের দিকে জলের স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এ বাড়ির বিভিন্ন শরিকের হাঁসগুলো সব প্রায় এক জায়গায়। মাঠে এখন ধান আর মাসখানেক বাদে বতি হবে। এখন হাঁসদের মাঠে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এই প্রায় স্থির সময়ে রসিকের মতন ধীরস্থির মানুষের কথায় পরিতোষ যে খাবি খাবে তাই স্বাভাবিক। কারণ এ সময়ে এখানে যারা আছে সবাই তাদের গুষ্টির মানুষ। এদের সামনে পরিতোষের গলা উঁচু হবে না। তা হলো না। সে হাসে। তারপর বলে, ‘আমি আর কী বোঝবো, ও রসিক ভাই?’

‘তা’লি রণজয়রে জিগাইলি কী?’

‘না, এমনি-’

‘না এমনি না। তুইও তো বিএনপি করতে গেলি। ভাসায় যাইয়ে নাম লেহালি। ফিরোজ আমারে কই নি? কী লেহাইলি না?’

‘ওই। হইচে-’

‘ওই হইচে না। মোস্তাফিজুর রহমান সাহেব যখন আন্দারমানিক আসল সেইয়ের পর পর, মনে নেই তোর?’

‘না।’ রণজয় হাসে। ‘না ও খুড়ো, নাটাইখালি আসলি পর-’

‘হয়, নাটাইখালি আসলি পর। সেদিন সেই অনুষ্ঠানে রণজয়ও ছেল। সেই সময় নাম লেখাইসনি, ও পরি?’

পরিতোষ বলে, ‘হয়, লেহাইলাম নাকি মনে নেই। তয় ও দলের মিটিং-টিটিংয়ে সেরাম যাইটাই নেই কিন্তু। সেয়া তো তোমরা জানো।’

রণজয়ের এসব কথা এখন আর ভালো লাগছে না। এমন ঘটনা এ গ্রামে ঘটেছে বলে এত কথা! পরিতোষ ঘটিয়েছে কি আজগর ঘটিয়েছে, আজগর একটু বেশি বেশি। কিন্তু শহরে নেতারা এমন কত ঘটায়! আজ জাতীয় পার্টি, কয়দিন বাদে এরশাদ জেলে যাওয়ার পর যে-ই খালেদা ক্ষমতায় সব বিএনপি। এহোন নেতারা বদল না হলেও হাসিনা ক্ষমতায় আসলে গ্রামকে গ্রাম কত আওয়ামী লীগ হবে। তবে অন্যদের দোষ না হলেও, এই গ্রামের কেউ কখনও প্রায় বিএনপি করেনি, যা করেছে তা ওই উত্তর মঘিয়ার মুসলমানরা, তাদের ঘাড়ে দোষ আসা স্বাভাবিক। উত্তর মঘিয়ার ওরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও বিএনপিই থাকবে। কিন্তু কোনোদিন কচুয়ায় সুনীল কিংবা শ্রীধরকে হিরুভাই যদি জিজ্ঞাসা করে বসে তারা থাকতে তাদের গ্রামের পরিতোষ কিংবা হবির ছেলে আজগর কীভাবে কার বুদ্ধিতে ওই দলে গেছিল- এর কোনো উত্তর রণজয়ের জানা নেই। আচ্ছা, রণজয় ভাবে, এবারের ইলেকশনে হিরুভাই জিততে পারবে তো? রণজয়ের সন্দেহ হয়। আগের বার কয়েক ভোটে হেরেছে। এবার কর্নেল সাহেব অনেক বড়ো ক্যানডিডেট। পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোজা কথা?

তার এই ভাবনার ভিতরে আর পরিতোষের জায়গা কোথায়? কিন্তু জায়গাটা আবার পারিতোষই নেয়। স্বপন কোথাকে এসে হাজির। হালদারবাড়ির দিক থেকে আসেনি, সেদিকে রণজয়ের মুখে। এসেছে ভাসার দিক থেকে। স্বপনকে দেখেই রণজয়ের ভুরুতে একটু গিঁট পড়ে। সঞ্জয় আর রচনার ঘটনার পর থেকে এটা ঘটছে। যদিও রণজয় চায় সব সময়ই স্বাভাবিক থাকতে। দোষ তার মেয়েও করেছে। যদিও সঞ্জয় বুঝমান, রচনার চেয়ে বয়েসে কয়েক বছরের বড়ো আর কচুয়ায় থাকে। গ্রামে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে আবার সেখানে চলেও গেছে। আর তার মেয়েটা ঘরে বাইরে বেরুলেই সংকোচে জড়োসড়ো হয়ে থাকে। রণজয়েরই সেদিন অত মাথা গরম করা উচিত হয়নি। এত লোক জানাজানি না হওয়াই ভালো ছিল। মেয়েটার কথা ভাবলে, আর ওই ঘটনার জন্যে এখন স্বপনকে দেখে রণজয় ভাবে ঘরে চলে যায়। কিন্তু অজিয়র ছোড়া আসছে না কেন?

এদিকে পরিতোষ যেন নিজেকে উদ্ধারের সুযোগ পায় স্বপনকে দেখে। সে জানতে চায়, ‘আসলি কোয়ানদে?’

‘এই এট্টু ভাসার দিক গেছেলাম।’

‘কোন কাজে, না এমনে?’

‘আরে আছে এক কাজ, হইল না। বড়দা কইল সের এট্টা দরকার। দেহি এখন বাড়ির দিক যাই। তুমি কচুয়া যাবা নাকি আইজ কাইল?’

‘আইজ আর যাব কহোন?’

‘এ কৃপা, তুই যাবি?’

এই প্রথম কৃপাসিন্ধুকে এতক্ষণের ভিতরে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করল। সে দোকানের ছোট দরজায় বসেছে, তা যেন পরিতোষ রণজয় কি দোকানদার রসিক কেউ খেয়ালই করেনি। অথবা আজকাল কৃপাসিন্ধু এইভাবেই বসে থাকে। অথবা এটাই তার ধরন। মানুষের ভিতরে থাকলেও সে যেন নেই। কৃপাসিন্ধু স্বপনের কথায় উত্তর দেয় না। তার আপাতত কচুয়া যাওয়ার কোনো কারণ নেই। স্বপনের দরকারটা জরুরি। তা বুঝে পরিতোষ, অজিয়র আসবে এখনই, রণজয় তাদের বলেছে অজিয়র কচুয়া যাবে- এই কথা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই কৃপাসিন্ধু হঠাৎই স্বপনের কাছে জানতে চায়, ‘কেন, সঞ্জয় আসপে না আইজ কাইল?’

হঠাৎ সঞ্জয়ের প্রসঙ্গ আসায় স্বপন খানিকটা বিব্রত। রণজয় সামনে। তাছাড়া সঞ্জয় কবে আসবে তা তো জানে না।

রণজয় এর ভিতরে বলে, ‘স্বপন, সঞ্জয়রে এট্টু কম আসতে কইস-’

‘কেন, ও রণদা? ওয়ার বাড়ি ও আসপে তাতে কোম আর বেশি কী?’

‘না, কথাডা কইচি শুনিস।’

গোঁয়ার হিসেবে স্বপনকে সবাই জানে। সে গোঁয়ার্তুমির জন্যেই তার জীবনটা এমন। সেই জেদ যেন এখন আরও বাড়ে। পাতলা শরীরে সে তার একটু ভিতরে ঢোকা বড়ো চোখ দুটো আরও একটু বড়ো করে বলে, ‘কইলি আসতে ক’বানে, দেহি আপনে পারলে ঠেকাইয়েন।’

রণজয় উঠে দাঁড়ায়। রাস্তার উল্টো দিকে জিয়ল গাছের সঙ্গে রাখা সাইকেলটা হাতে নেয়। তারপর বলে, ‘গলা বাড়াইস না, গলা বাড়াইস না। যাই কইচি শোন।’

কিন্তু স্বপনের গলা সব সময়ই বাড়ানো। সে ফিসফিসিয়ে কথা বললে অনায়াসের পাশের লোক শোনে। এখন তার গায়ে লেগেছে। কথা সে বাড়াবেই। কিন্তু রণজয় তখন হেঁটে তার ঘরের দিকে যেতে লাগলে স্বপন তাবুও গজরায়, কোনোভাবেই বোঝে না রণজয় তার সঙ্গে কথা কইতে চাইছে না।

রণজয় রসিককে বলে, ‘খুড়া, হবির ছওয়ালডা আসলি কইয়ো আমি ঘরে আছি।’ এ কথাটারও এমনভাবে বলল যেন ওই স্বপনের জন্যে এখানে বসা গেল না।

রণজয় একই সামনে এগিয়ে রাস্তা থেকে নিজের উঠোনে ঢুকতেই স্বপন, রসিক পরিতোষ আর কৃপাসিন্ধুকে বলতে থাকে, ‘কইলেই হইল, হালদাররা এই গ্রামে ভাইসে আসেনি। আমার ভাইরে কয় কোম আসতি। কয়দিন বাদে কবে আমার বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে তোরা হাঁটপি না।’

পরিতোষ বলে, ‘না ও বাবাজি, রণজয় খুড়া ওই কথা কবেনানে। কোহানদে আইচিস্ এহোন বাড়ির দিক যা। যাইয়া মা ঠাইরেনের হাত দিয়ে এক গেলাস জল নিয়ে খাইয়ে ঠাণ্ডা হইয়ে এক জায়গায় বয়।’

স্বপনের মনে হয়, এরাও তো মল্লিক গুষ্টির। এদের সামনে সে এভাবে কথা বলে সুবিধা করতে পারবে না। স্বপনও রণজয়ের পিছন পিছন নিজেদের বাড়ির দিকে হাঁটে। যাওয়ার আগে একই কথা বলে। একটু গজরায়।

স্বপন এগোতেই রসিক পরিতোষ আর কৃপাসিন্ধুকে সেই কথাটা বলে। বয়েসে প্রবীণ রসিকেরই তা ভালো মনে থাকার কথা। সেই কতদিন আগে রসিকের সেই জ্ঞাতি বোনটার হাত ধরে টেনেছিল স্বপনের জ্ঞাতি জেঠা। হালদার গুষ্টির পুরুষে ওই দোষ গেল না। আবার গলার জোরও আছে।

পরিতোষ আর কৃপাসিন্ধু পরস্পরের দিকে তাকায়। তারাও একদিন শুনেছিল এমন কথা। কবে কোন কালে। সে ঘটনা তো তাদের জন্মেরও আগে। সেই মুছে যাওয়া ঘটনাই আবার সামনে আনল ওই সঞ্জয় আর রচনা!

কয়েক দিন ধরে খুদি সব সময়ে মুখখানা কেমন ভার হয়ে থাকে। তাকালে হয়তো তা বোঝাও যায়, কিন্তু পুরুষরা তা ঠিকঠাক বুঝতে পারে কই? আবার সম্পর্কে তার ছেলের বয়েসী কৃপাসিন্ধু কিংবা শ্রীধর যদি তা বুঝতেও পারে, কিছু বলবেও না। অথচ খুদি জানে পিছনে তাকে নিয়ে রসিকতাও করে তারা। এমনিতে তার আর রসিকের সম্পর্ক নিয়ে রসিকতার শেষও নেই। খুদির ভাষায়, রঙ্গ করা। খুদি জানে তেমন রঙ্গ তারা করতেই পারে। বিপত্নীক ভগ্নিপতি আর বিধবা শালি একসঙ্গে থাকে, তা নিয়ে জোয়ান ছেলেরা একটু আধটু রঙ্গ করবে তাই স্বাভাবিক। যদিও আগে ঠারে ঠারে অর্থাৎ আকার ইঙ্গিতে সামনেই বলত, এখন বড়ো হয়েছে, ওদের ছেলেমেয়েরাও দিনকে দিন বুঝমান হচ্ছে তাই সামনে প্রায় কিছু বলেই না। তবে পিছনে বলে। আগে সামনেই বলত, ‘ও খুড়ি? থুড়ি, ও মাসি, তোমার মুখ কালা কেন? খুড়োর সাথে বাধিচে নাই (নাকি)?’ অথবা, সম্পর্কে নাতি পরিতোষ ওদের সামনেই উঁচুগলায় বলত, ‘ও দি, ঘটনা কী? রসিক ভাইর মনে কয় আর তোমারে দরকার নেই। কী সেইয়ে না? বুড়োর মনে কয় রস কুইমে গেইচে?’ কিন্তু এখন সামনে না-বললেও, পিছনে পিছনে তারা একে অন্যের সঙ্গে এ নিয়ে যে কথা বলে তা বুঝতে পারে। সামনে হয়তো বলে অন্য কথা, ‘ও মাসি, আইজকাল খুড়ো তোমারে আর মহাভারত কি ভাবগৎ পইড়ে শুনোয় না?’

এ কথা সত্যি, সারা গ্রাম কি ইউনিয়নের প্রায় সবাই জানে রসিক ভাগবৎ পড়ে অসাধারণ! লোকটার জীবনে যাই ঘটুক, পরম বৈষ্ণব ভাব তার আছে। কৃপাসিন্ধুর বাপ কেষ্ট মল্লিকের মতন তিলকের ফোঁটা কেটে, গলায় গেরুয়া রঙের উত্তরীয় পরে গ্রামময় নিজের বৈষ্ণবভাব রসিক জানিয়ে বেড়ায় না বটে, কিন্তু নিজে নিজে সে চৈতন্যচরিতামৃত পড়ে, কাউকে পড়ে শোনায়, সে পাঠ শোনার মতো! যদিও সাধারণত তার সে পাঠের শ্রোতা থাকে একজনই, সে খুদি। দোকানের সামনের ঝাপ খোলা কি ফেলানো, পিছনে তাদের ঘরে দিক থেকে তাকালে কিংবা পাশের ছোট দরজা থেকে দেখা যায়, খুব সকালে কিংবা অলস দুপুরে রসিকলাল মল্লিক তার শালিকা খুদিরানি পাঁড়েকে ভাগবৎ পড়ে শোনাচ্ছে।

খুদি ভাবে, সেদিন গেছে। যদিও তার এই মন খারাপ কিংবা গাল ফোলা নিয়ে ছেলেরা কিছু না বললেও কৃপাসিন্ধুর বউ পার্বতী ঠিকই বুঝতে পারে। এমনিতে বউটাকে দজ্জাল বলো আর অসাইল্যর ভাণ্ডো বলো কিংবা বলো এমনি মুখ যে সেখানে একগাছা নারকেলের বাইল ধরলে তা ফুৎ করে জ্বলে উঠবে! কিন্তু খুদির খোঁজ-খবর যা নেওয়ার সে-ই নেয়। ওই শ্রীধরের বউ ছবি তেমন তো নেয় না। তবে পার্বতী আর ছবির তফাৎটাও বোঝে খুদি। একজন খানে দজ্জাল। কথা-লাগানোয় ওস্তাদ। নিজের আগ্রহে খোঁজখবর নেয় ঠিকই, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সুযোগে থাকে। অন্যজন একেবারেই চুপচাপ। কারও সঙ্গে নেই পাছে নেই। শ্রীধরেরই মতন ওর বউটাও একই পদের। তবু খুদির মনে হয়, ওই ছবিই যদি তার কাছে কখনও মনকষ্টের কথা জানতে চাইত, তাহলে সে তাকে অন্তত দুটো কথা মন খুলে বলতে পারত। অথচ গত কিছুদিনে একটিবারের জন্যে কখনওই কোনোদিন ছবি তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। যা করেছে পার্বতী।

পার্বতীই একসকালে দোকানের সামনে এসে খুদির কাছে জানতে চায়, ‘ওদি, আইজকাল তোমার মুখকান ওইরাম কালো থাকে কী জন্যি?’

খুদি সবে দোকানের কাপ তুলেছে। রসিক কাছেপিঠে নেই। হয়তো হরিসভার দিকে গেছে। অথবা, একটু আগে পার্বতীর শ্বশুর কেষ্টর সঙ্গে কথা বলতে দেখছিল, তখন দুজনে হয়তো হাঁটতে হাঁটতে সামনের ঘরামিবাড়ির পোল পার হয়ে ওপারে গেছে। সেখানে কেষ্টর আর রসিকের একই দাগে জমি আছে। হতে পারে কেষ্টই বলেছে, ‘চলো খুড়ো, ওপার যাই এট্টু জমি দেইখে আসি।’ পান্তা খাওয়ার পরে দোকানে ভিতর গড়াগড়ি দেওয়ার চেয়ে হেঁটে আসা ভালো। রসিক আজকাল ফুলে যাচ্ছে। এমনিতেই একটা ভারী শরীরের মানুষ সে, তারপর যদি আরও মোটা হয়! তবে আশপাশের আট-দশজনের চেয়ে রসিক স্বাস্থ্যবান ও সুপুরুষ। তার যে অত বড়ো মেয়ে আর নাতি আছে দেখলে তা বিশ্বাস হবে না। রসিক তার মেয়েকে দেখে না কতদিন! খুদিও বোনঝিটার মুখখানা ভুলে গেছে।

এখন সেকথা বলবে খুদি পার্বতীকে? নাকি বলবে না? পার্বতী তার মুখ দেখে পড়ে নিয়েছে মনের ভিতর! খুদি পার্বতীর জনতে চাওয়ায় চট্ করে ওর মুখের দিকে দেখে, আর ভাবে তাহলে তার আর রসিকের ভিতরের বিষয়টা পার্বতী জেনে গেল নাকি। (চলবে)

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App