×

জাতীয়

গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০১৯, ১২:৫৩ পিএম

গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বরেণ্য সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছরের এ দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সাংবাদিকতার বাতিঘরখ্যাত গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার পরিবার ও সমকালসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার গোলাম সারওয়ার ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব। ষাটের দশকে সাংবাদিকতার শুরু থেকে একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তি, পেশাদারত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গোলাম সারওয়ারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে চাকরিরত ছিলেন গোলাম সারওয়ার। এরপর তিনি নিজ এলাকা বানারীপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহসম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদপত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বার্তা বিভাগে গোলাম সারওয়ারের সৃজনশীলতা, সংবাদবোধ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এদেশের সংবাদমাধ্যম জগতে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাকে দীর্ঘ ২৭ বছর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক পূর্বাণীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তিনি দেশের দুটি সেরা দৈনিক ‘যুগান্তর’ ও ‘সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক এবং ২০০৫ সালে আরেকটি নতুন দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। আমৃত্যু তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদক ছিলেন। একই সময়ে বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল গোলাম সারওয়ারের অবাধ বিচরণ। ‘রঙিন বেলুন’ নামে শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত ছড়ার বইটি তার ছড়া সৃষ্টির উজ্জ্বল নির্দশন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় গরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাক’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে তার ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সহকর্মী, বন্ধু, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের লেখনীতে সমৃদ্ধ স্মারকগ্রন্থ ‘সুবর্ণরেখায় বাতিঘর’ প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকতায় জীবনব্যাপী ভূমিকার জন্য গোলাম সারওয়ার ২০১৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে তিনি কালচারাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। এ বছর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল তাকে মরণোত্তর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদকে ভূষিত করে। মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উৎকৃষ্টতার কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার হাতে গড়া অন্তত পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক এখন দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন মাধ্যমে নিজ নিজ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সংগঠন বেশ কয়েকটি স্মরণসভার আয়োজন করেছে। ঢাকায় তার উত্তরার বাসভবনে এবং তার জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়ায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির পর দৈনিক সমকাল ও গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই পথিকৃৎ সম্পাদকের প্রথম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App