×

জাতীয়

ছুটি নেই, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই চলছে পুরোদমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০১৯, ১১:৩৯ এএম

ছুটি নেই, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই চলছে পুরোদমে
ডেঙ্গু রোগীদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডেঙ্গুর প্রকোপ সামাল দিতে এর আগে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সব ছুটি বাতিল করে সরকার। রোগীদের পূর্ণ সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতাল ঘুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন, ছুটির দিনেও পুরোদমে চলছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য বিভাগের লোকজনও। ছোটখাটো কিছু অভিযোগ থাকলেও চিকিৎসক ও নার্সদের তৎপরতায় সন্তুষ্ট এসব হাসপাতালের রোগীরা। রোগী ও তাদের স্বজনদের ভাষ্য, যথেষ্ট করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ঢামেক হাসপাতালে সব সময়ই রোগীর বাড়তি চাপ থাকে। ডেঙ্গুর মৌসুমে এই চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। হাসপাতালে মেঝেতেও জায়গা হচ্ছে না রোগীদের। মেডিসিন বিভাগের মেঝে ছাড়িয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছেছে রোগীর বিছানা। তবে হাসিমুখে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। হাসপাতালের পাঁচ তলার মেডিসিন বিভাগের মেঝেতে ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন বাংলা মোটর এলাকার বাসিন্দা রেখা আক্তার তামান্না (২২), ১৬ নম্বর বেডের নরসিংদীর শান্তা বেগম (২০) এবং ছয় তলার ৬২০ নম্বর রুমের সামনে ইসলামবাগের খলিল মিয়া (২৭) জানান, সকালেও চিকিৎসক এসে দেখে গেছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত রুমে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকরা রোগীদের বিভিন্ন কথা শুনছেন, কাগজপত্র দেখছেন। ডাকলে নার্সরাও এসে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ তলায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. অনিন্দিতা দাস বর্ষণ ভোরের কাগজকে বলেন, এত রোগীর চাপ সামাল দেয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কর্তব্যরত নার্স আয়শা বেগম বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেন আমরা সেবা দিচ্ছি না। কথা সত্য নয়। আমরা চেষ্টা করছি। সীমিত লোকবল দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে। বিএসএমএমইউর ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলে চিকিৎসাধীন রাকিব (১৮) আর ইকবালও (২৪) চিকিৎসক ও নার্সদের সেবায় সন্তুষ্ট। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ আল হাসিব ভোরের কাগজকে বলেন, এই বিপদে যদি রোগীদের পাশে থাকতে পারি, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, এটাই আমাদের আনন্দ দেয়। গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। লাইনের এক পাশে দুই বছরের আফরোজের কান্না থামাতে ব্যস্ত শাহিনুর বেগম। শাহিনুর ভোরের কাগজকে জানান, দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি সিরিয়াল পাননি। হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডের ৪৮ নম্বর বেডে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি সাড়ে ৫ বছরের শিশু ফালাকের মা পিংকি খাতুন জানান, গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ভালো সেবা পাচ্ছেন। এমনকি গতকাল ছুটির দিনেও ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১নং ওয়ার্ডের বারান্দার সি-২০ নম্বর বেডে ভর্তি মো. মাসুম বলেন, সরকারি হাসপাতাল হলেও ডেঙ্গু রোগীদের বেলায় এখানে সবাই খুব আন্তরিক। ছুটির দিনেও চিকিৎসক এসে খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এই ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক ফারহা আহম্মেদ বলেন, সকালে চিকিৎসক এসে সবাইকে দেখে গেছে। আমরাও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। নার্সরাও কেউ ছুটি নেয়নি। এ ছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। এখানে কিছু কিছু রোগী অভিযোগ করলেন, দুপুর গড়িয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ডাক্তারের দেখা পাননি। তবে অনেক রোগী জানালেন, সকালে ডাক্তার দেখে গেছেন, রাতেও আবার আসবেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমিন আহমেদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ ৪৫০ জন স্টাফের কেউই ছুটিতে নেই, সবাই অফিস করছেন। ডাক্তার, নার্সরা রোস্টার অনুযায়ী নিয়মিত ওয়ার্ডে যাচ্ছেন, রোগীদের খেয়াল রাখছেন। হয়তো কোনো রোগী বাথরুমে আছেন, ওই সময় ডাক্তার ওয়ার্ড পরিদর্শনে গেছেন, তখন হয়তো ওই রোগী ডাক্তারকে পাননি এমনটা হতে পারে। গতকাল আক্রান্ত ৩,০৫৭ জন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন। ঢাকার বাইরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৮৫ জন। মারা গেছে ২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ২ জন। ঢাকার বাইরে এই সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ জন। চারজনের মৃত্যু : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে দুই শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া বরিশাল ও ফরিদপুরে আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বারিধারার সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মেহরাব, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিপি আক্তার (৩০)। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিফাত (১০)। এদিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে মারা গেছেন বরগুনার মজিবর রহমান মঞ্জু। ডেঙ্গু চিকিৎসায় বিএসএমএমইউ দৃষ্টান্ত, বললেন নাসিম : এদিকে বিএসএমএমইউর ডেঙ্গু চিকিৎসা সেল পরিদর্শনে গিয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের নিচতলায় ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেল পরির্দশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App