×

সাময়িকী

ঘাসকন্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০১৯, ০৬:১৭ পিএম

ঘাসকন্যা

তোমার লাইগা একটা ভালো কাম পাইচি। করবা মিস জরিনা বেগম? জরিনা রান্নাঘরে হাঁড়িপাতিল ধুুচ্ছিল। পেছনে দাঁড়ানো আবদুল কাদের দেখছে জরিনার চিকন কোমর। পরনের শাড়ি অতিক্রম করে জরিনার সাবলীল শরীরের মানচিত্র ভেসে উঠছে। লোভাতুর চোখে দেখছে আর মনের ভেতরে হরেক রঙের একটি কালারফুল ছবি আঁকছে। অবশ্য ছবিটার আইডিয়াটা দিয়েছে কন্টাক্টর মিনহাজুর রহমানের শ্যালক চিনটু। চিনটুর সঙ্গে কাদেরের সম্পর্কটা হঠাৎই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পেছনের অনুঘটক জারিনা বেগম। যাকে নিয়ে চিনটুর সঙ্গে কাদেরের এই নতুন সম্পর্কের অনুঘটক, সেই জরিনা এই ঘটনার বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানে না। কি কাম? হাঁড়িপাতিল ধোয়া রেখে দাঁড়ায় জরিনা। একটা বড় বাসার কাম। বেতন পাইবা মেলা। জরিনার চোখ চকচক করে, কত? আগে তুই বাড়িঘর দ্যাখ, পছন্দ অইলে করবি, পছন্দ না অইলে করবি না। দুলাভাই, আগে কও কত টাকা বেতন দিবো? আবদুল কাদেরের কাছে জরিনা এসে দাঁড়ায়। একটু তেরছা চোখে তাকায়, এই দৃষ্টিটা খুব পছন্দ করে কাদের। মেয়েটার শরীরের মধ্যে একটা নিশুতি রাতের আকর্ষণ আছে। কিন্তু জরিনার চাচাতো বোন, মর্জিনা বেগমের জন্য কিছুই করতে পারে না। মর্জিনা বেগম শকুনের চোখ রাখে আবদুল কাদেরর দিকে। রাগে ক্ষোভে দুঃখে আবদুল কাদেরর মাথায় বায়ু চড়ে যায়, মাইয়া মানুষের শকুনের নাহান চোউখ ক্যান? নিজে জরিনারে না পাইলেও...আবদুল কাদেরের মনের কথা মনে থাকে। আবদুল কাদেররে চেনা অতো সোজা না। কত ঘাটের পানি খাইয়া কাদের আইজ ঢাকা শহেরর মিনহাজ কন্টাকটারের সঙ্গে কাম করতে পারছে, হেইডাতো জানে না মর্জিনা বেগম।

জরিনা বেগম দুতিন মাস ঢাকায় এসেছে। উঠেছে মর্জিনার বাসায়। বড় চাচার মেয়ে, আপন চাচাতো বোন, ফেলে দেয়া যায় না। ছোটবেলায় এক সঙ্গে বড় হয়েছে। কষ্ট হলেও জায়গা দিতে হয়। মগবাজারের রেল লাইনের বস্তিতে থাকে আবদুল কাদের। একেবারে বস্তি না, বস্তির চেয়ে একটু উন্নতমানের দেড় রুমের বাসা আবদুল কাদেরের। ঢাকা শহরের একজন নামী কন্টাক্টরের সঙ্গে কাজ করলে একেবারে বস্তিতে থাকা মানায় না। সে জন্য মাসে তিন হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। দেড় রুমের বড়টায় থাকে আবদুল কাদের, মর্জিনা আর তাদের তিন বছরের পুত্র আবদুল মোমিন। আর অর্ধেক রুমে রান্না, থালাবাটি রাখে মর্জিনা। জরিনা এসে পড়ায় রাতে তার থাকার জায়গা রান্না ঘরে হয়েছে। প্রথম মাসেই মর্জিনাকে আবদুল কাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘাস লাগানোর কাজে দিয়েছিল। নিজের কন্টান্টরের কাজ, কাউকে কিচ্ছু বলতে হয় নাই। মিনহাজ কন্টাক্টরের লগে কাদের উদ্যানের ঘাস লাগানোর কাজ তদারকী করছে। জরিনাকে ঘাস কাটার কাজের প্রস্তাব দিলে জরিনা অবাক, কন কী দুলাভাই, ঘাস আবার লাগায়নি? ঘাসতো এমনে এমনে অয়। সিগারেট টান দিতে দিতে কাদের উত্তর দেয়, এইডা কী তোমাগো বরিশালের মাডি পাইচো? ঘর বাড়ি উডানের চাইরদিকে খালি ঘাস আর ঘাস। এইডা ঢাকা শহর। এইহানে ঘাস লাগাইতে অয়। কোম্মে ঘাস লাগামু? সরোয়ার্দী উদ্যানে। হেইডা কোতায়? তুমি ঘাস লাগানের কাম করতে চাইলে কও, লইয়া যামু কাইল। কয় টাহা পামু? ওই ছেমরি, তুই ফডর ফডর এতো কতা কস ক্যান? তোর দুলাভাইর লগে যাবি। হেহানে ঘাস লাগানোর কাম কী তুই একলা করবি? আরো মাইয়ারা আছে। হেগো লগে লাগাবি। হেরা যে টাহা পাইবো তুইও হেই টহা পাবি, মর্জিনা বেগমের কাটা কাটা কথা। মর্জিনা চায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জরিনা একটা কাজে লেগে যাক। না হলেতো বসে বসে খাবে। পনেরো দিনতো হলো, বাসায় বসে শরীরে বাতাস লাগাচ্ছে আর খাইতেছে আর খাইতেছে। আর ছেমড়ি খাইতেও পারে। একবলোয় আধা কেজি চালের ভাত খায়। ঠিক আছে দুলাভাই, কাইলই আপনার লগে কামে যামু। সকালে কাদেরের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে জরিনা আরো অবাক। এতবড় মাঠ। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। বড় বড় গাছপালা। এখানে-ওখানে চা সিগারেটের দোকান। বাইশ তেইশজন নানা বয়সের মহিলা বসে বসে ঘাস লাগাচ্ছে। নরম মাটিতে ছোট্ট একটা লাঠি দিয়ে গর্ত করে, গর্তের মধ্যে পাশে এনে রাখা লম্বা সবুজ ঘাসের গোড়া ঢুকিয়ে দিতে হয়। একটা বয়স্ক মহিলাকে ডাকলো কাদের, ওই কদমের মা এদিকে আহো। ঘাস লাগানো রেখে কদমের মা বিরক্তির সঙ্গে কাছে এলে কাদের বলে, আমার বুইন জরিনা বেগম। আইজ থাইকা তোমাগো লগে কাম করব। একুট বুঝাইয়া দেও কেমনে ঘাস লাগাও তোমরা। কদমের মায়ের পান খাওয়া মুখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখতে পায় জরিনা, পানের পিক ফেলে জরিনাকে ডাকে, আমার লগে আহো মাইয়া। কদমের মায়ের সঙ্গে কাজে লাগে জরিনা। দূরে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারছে কাদের। যতোটা সহজ মানে করেছিল কাজাটা আাসলে সহজ না। মাঠের নরম কাদা শরীরে জামা কাপড়ে মেখে যায়। পাশে কয়েকজন পুরুষ কামলা আগের ঘাস কোদাল দিয়ে ছেচে তুলছে। তারা কাজ করতে করতে মেয়েদের দিকে চোখ রাখে। জরিনা কদমের মায়ের কাছে জানতে যায়, খালা- ঘাস উঠাইয়া আবার ঘাস লাগায় ক্যান? বিরক্ত গলায় জবাব দেয় কদমের মা, চুলকানী অইলে মাইনষে চুলকায় ক্যান? হতম্ভব জরিনা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়। কী প্রশ্নে কী উত্তর। ঘাস লাগানোর সঙ্গে চুলকানোর কী সম্পর্ক? আর কদমের মা কতো সহজে বললো, চুলকানী অইলে মাইনষে চুলকায় ক্যান! তাজ্জব। হোনো মাইয়া, তোমার বিয়া অইচে? ঘাড় নাড়ে জরিনা, না খালা। পিক ফেলে কদমের মা, দেইখাই বুজঝি। হোনো আমাগো দ্যাশের সরকারের নানা বেহুদা কাম থাহে, এইহানের পানি ওইহানে হলায়, ্ওই হানের কাদা সেইহানে ডালে। ডালে আর হালায়, হালায় আর ডালে। মাঝখান দিয়া হেরা কোচর ভরে। হেরা ভরে লাক টাহার কোচর আর মোরা ভরি দেড় টাহা দুই টাহার কোচর। এই কাম পাই বইলা দুইডা খাই। বোঝতে পারচো? পারচি। তয় আর কতা না কইয়া কাম হরো। কন্টাক্টরের শালা চিনটু আইয়া পরে যাতা গালাগাইল দেবে। ওই হারামজাদার আবার চৌউখ বালো না। জরিনা ঘাস লাগাতে লাগাতে হাসে। বাড়ির উঠানে, আনাচে-কানাচে কত ঘাস, আর ঢাকা শহরে হেই ঘাস কিনে ট্রাক ভরে এনে লাগাতে হচ্ছে। বাড়ির ঘাস গরুতে ছাগলে খেয়েও শেষ করতে পারে না। মুরগি আর হাসেও ঘাস খায়। তারপরও ঘাস কমে না। ঘাস বাড়তেই থাকে। এই জাগায় ঘাস লাগাইতেছে ক্যান? ঘাস লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করে পাশের শেফালিকে। মাঝ বয়সী শেফালীর শরীরের রঙ ফরসা। কিন্তু চোখ মুখ দেখতে বিশ্রী। কথা বলার সময়ে শ্বাস নেয় ঘনঘন, জবাব দেয় শেফালি, এই জায়গাডা চেনলা না? এই জায়গাডা অইলো যুদ্ধের জায়গা। ভ্রু কুঁচকে তাকায় জরিনা, যুদ্ধের জায়গা? হ, শেখ মুজিবুর এই জায়গায় একাত্তর সালে ভাশোন দিছিল। এই জায়গায় ভাশোন দিছিল? হাতে ঘাস নিয়ে দাঁড়ায় জরিনা। তাকায় চারদিকে, এইডাতো বড় একখান মাট।এই মাটের কোনহানে ভাশোন দিছিল। হের ভাশোনতো টেলিভিশনে দেকচি। ভাইরে, মজিবের কী গলা? আর কতা কইচে কী জোরে জোরে! মনে অয় মাই্ক ভাইঙ্গা যাইবে। জরিনার সঙ্গে কথায় তাল মেলায় শেফালি, হ আর দেকচো ছবিতে কাতারে কাতারে মানুষ। কত মানুষ অইবে? এতক্ষণ জরিনা আর শেফালির কথা শুনছিল পাশের রেহানা বেগম। রেহানা বেগমের থলথলে শরীর। কিন্তু এক ধরনের লাবণ্য চিক চিক করে শরীরে। পুরুষের লোভ জাগে তার শরীর দেখলে। তার শরীরে যে পুরুষের কাছে লোভনীয় বোঝে ভালো করে রেহানা বেগম। সুযোগ পেলে সে লাবন্যমাখা শরীরের দাম তোলে। দুই তিন লাক তো অইবেই- রেহানা বেগম হাতে ঘাস নিয়ে দাঁড়ায় দুজনার মাঝখানে, আমাগো আতিকের বাপে আমলীগ করে। বাসার টেলিভিশনে শ্যাক মজিবরের ভাশোন অইলেই হে দেহে। চোহে পলক পরে না। ভাশোন শেষ অইলে পোলাপানরে কয়, ব্যাডা আছিল একখান। কাউরে ডরায় নাই। মানুষটারে তো বাঁচতে দিলো না হারামজাদারা, শেফালির দাঁত কিড়মিড় করে, কুত্তাগো আতের কাচে পাইলে পিচা দিয়া পিডাইতাম। আহারে কী মানুষ আছিল। মারবি মার। হের লাইগা জানে মারবি? দ্যাশ সাধিন কইরা দিয়া হে নাইলে বুল করছে, হের বৌ পোলাপানরা কী ক্ষেতি করচে? হেগো মারলি ক্যান? এখানে কী হচ্ছে? চমকে তাকায় শেফালি আর রেহানা বেগম। তাদের সঙ্গে তাকায় জরিনাও। পেছনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে চিনটু। চোখে ক্রোধ। ঘাস লাগাচ্ছে বাইশ তেইশজন শ্রমিক, নারী ও পুরুষ মিলে। সবাই কাজ করছে। মাঝখান থেকে তিনজনে গল্প জুড়ে দিয়েছে। চিনটুকে আসতে দেখেও কেউ সাবধান করেনি। তোমরা রাজনীতি করছো আমার কাজ বাদ দিয়ে? তোমাগো তো সাহস কম না? কাদের? এই কাদের? চিনটু কাদেরকে ডাকছে। এই লোকটা কই যে যায়? তাকে দিয়েতো আমার কাজ উঠবে না। এই ফকর? মাটি সমান করছে ফকরুদ্দিন। দৌড়ে আসে কাছে, কন মহাজন। কাদের কই? কাজে আসে নাই? আসছে তো। নতুন ওই মাইয়াডারে কামে দিয়া কইলো চা খাইয়া আহি। যা, ডেকে নিয়ে আয়। ফকরুদ্দিন দৌড় শুরু করে শাহবাগের দিকে। চিনটর গলায় সোনার চেইন। চোখে কালো চশমা। ডান হাতে আধুনিক মোবাইল সেট। বাম হাতে দামি সিগারেট। সিগারেট টানতে টানতে তাকায় জরিনার দিকে। জরিনা নুয়ে নুয়ে কদমের মায়ের পাশে পাশে ঘাস লাগাচ্ছে। জরিনার শরীরের বাঁধন খুব পছন্দ হয়েছে চিনটুর। কাদের কোথায় পেলো মেয়েটিকে? দেখেতো মনে হয় গ্রামের মেয়ে। একেবারে আধাপাকা আম। সদ্য আমদানি হয়েছে ঢাকায়। প্রথমে চিনটুর জীবে পানি আসে, মুহূর্তে নোনতা পানিতে মুখ ভরে যায়। মুখের থুথু সোহারাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাসে ফেলতে না ফেলতেই সামনে দাঁড়ায় আবদুল কাদের, চিনটু ভাই কহন আইলেন? অনেকক্ষণ হলো এসেছি। কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে? চিনটুর কড়া গলা। আবদুল কাদের দেখছে তার স্ত্রীর চাচাতো বোন মিস জরিনা বেগমের সামনে মি চিনটু তাকে ধোলাই দেয়ার ব্যবস্থা করছে। ইজ্জতের টায়ারতো পাংচার হয়ে যাবে। কাদের বিনীত ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করে, গলাটা শুকাইয়া গেছে চিনটু ভাই। চা খাইয়া গলা ভিজাইতে গেছিলাম। তুমি গেল গলা ভিজাইতে এদিকে এই মাতারিরা কাম বাদি দিয়া শুরু করেছে রাজনীতি।

রাজনীতি? হ্যাঁ, রাজনীতি। দেখো কাদের এইসব কিন্তু আমার কাছে চলবে না। আমি আজই দুলাভাইকে বলবো। এই মাসের লাস্ট তারিখে মাঠের কাজ তুলে দিতে হবে। আরো বিগলিত হওয়ার চেষ্টা করে কাদের, আপনে কোনো চিন্তা কইরেন না চিনটু ভাই। মাস শ্যাষ হওয়ার তিন দিন আগে যদি আপনের কাম আমি তুইলা দিতে না পারছি আমার নাম কাদের না। মোটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় চিনটু। আড় চোখে তাকায় জরিনার দিকে। জরিানা মাথা নিচু করে একের পর এক ঘাস লাগিয়ে যাচ্ছে। চিনটু তেতে ওঠে মনে মনে, শালার মেয়েটা তাকাচ্ছে না কেন? পুরনো স্যালোয়ার কামিজ পরায় জরিনার আটোসাটো শরীর, বিশেষ করে পিছনের নিতম্বসহ গোটা শরীর বিমূর্ত সৌন্দর্যের রূপ ধারণ করেছে চিনটুর কামনাদগ্ধ চোখে। চিনটুর সমস্যা, কাউকে প্রথম পলকে চোখের আয়াতক্ষেত্রের সরল রেখার বা কাজল রেখা বা সুবর্ণরেখার মতো একবার লেগে গেলে তার শেষ তলানী না দেখে স্বস্তি পায় না। এই মেয়েটা তার স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে, বুঝতে পারে চিনটু। আর মেয়েটাকে এনেছে আবদুল কাদের। তার দুলাভাই আবার কাদের বিশেষভাবে বিশ্বাস করে। ওকে হাতে রাখলেই মেয়েটার তল খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হবে না। তেতে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয় চিনটু। তেরছাভাবে সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে জিজ্ঞেস করে- নতুন মেয়েটা কে? আবদুল কাদেরের মুখের হাসি সম্পূর্ণ বিকশিত হয়ে গলে গলে পরছে- আমি আনচি চিনটু ভাই। সেটাতো বুঝতে পারছি। কিন্তু মেয়েটা কে? আমার শালী। তোমার আপন শালী? সঙ্গে সঙ্গে আবদুল কাদেরের মাথায় অন্য একটি এ্যান্টিনা নড়ে ওঠে। আপন শালী বললে বেশি দাম পাওয়া যেতে পারে। যত রিক্স তত টাকা, তত মাল। নিচের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে, খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত ঢংয়ে জবাব দেয়, হ, আমার আপন শালী। বিয়ে হয়েছে? না। বিয়ে হয়নি অথচ তাকে ঘাস লাগানো কাজে এনেছো? চিনটু ভাই, গরিবের মাইয়া। বিয়া অয় নাই তো আমি কী করুম। আমার কাছে পাডাইচে শ্বশুরে। যদি টাউনে বিয়া দিয়া দিতে পারি কোনো পোলার লগে হের লাইগা। আর না পারলে গারমেনসে চাকরি দিতে অইবো। গারমেনসের লাইগা কতা কইচি। অইয়া যাইবে- প্রসঙ্গ পাল্টায় চিনটু, এদিকে কাজের কী হলো? কাম অইতেছে, আপনে চিন্তা কইরেন না। তুমিতো বলেই খালাস চিন্তা কইরেন না। অন্যদিকে দুলাভাই প্রতি রাতে ফোন করে মালয়েশিয়া থেকে। এই কাজটা পেতে সরকারের একজন মন্ত্রীকে এককোটি টাকা দিতে হয়েছে। আঁতকে ওঠে কাদের- এক কোটি টাহা? হ্যাঁ, এক কোটি টাকা। এই ঘাস লাগানো লাইগা? হাসে চিনটু, তুমিতো কেবল ঘাস লাগানোর কাজ দেখছো। এই কাজের আড়ালে আরো অনেক কাজ আছে। সেসব তুমি বুঝবা না। আমি একটু রোকেয়া হলের সামনে যাচ্ছি। তুমি এদিকে খেয়াল রাখো। আইচ্ছা। হাতে গাড়ির চারি ঘুরাতে ঘুরাতে চলে চলে যায় চিনটু।

কয়েক দিনের মধ্যে জরিনা ঘাস লাগানো মহিলাদের সঙ্গে মিশে যায়। জরিনা বেশ মিশুক ধরনের মানুষ। ওর সঙ্গে রাগ করে থাকা যায় না। ঘাস লাগাত লাগাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা নানা কিসিমের ছেলে মেয়ের আসা যাওয়া দেখে। দেখে তাদের ঢলাঢলি। শুরুর দিকে একটু খটকা লাগলেও কয়েক দিনে সয়ে গেছে জরিনার। টাউনে যেমন গ্রামেও তেমন। গ্রামে এইসব চলে একটু আড়ালে আবডালে আর শহরে চলে লোকচক্ষুর সামনে, চলেতো! গ্রামে থাকার সময়ে চাচাতো ভাই এনায়েত কম জালিয়েছে? একটু আড়ালে, ঘাটলায় পানি আনতে গেলে হাত ধরেছে। দু’একবার জড়িয়েও ধরেছে। ঘাস লাগাতে লাগাতে জরিনা বলে শেফালিকে, জানেন এইসব লম্বা ঘাসে চিনা জোক থাহে। তোমারে কেডায় কইলো? হাসে জরিনা, এইসব ঘাস আমাগো বাড়িতে উঠানে রাস্তায় বাগানে। একটু বৃষ্টি অইলেই লকলকে কইরা লাল ছোট চিনা জোক হাজারে হাজোরে বাইরা আহে। কত কামরাইচে মোগো। কথা বলতে বলতে ফিক করে হাসে জরিনা। জোকের কথা কইতে কইতে হাসলা ক্যান? প্রশ্ন করে কদমের মা। জানেন- কী কতা কইবা তাড়াতাড়ি কও, হাসতে হাসতে বলে গোলাপি। তিন চাইর বচ্ছর আগে মায়ে দুপারের সমায়ে আমারে কইলো যাতো জরিনা মা, উঠান দিয়া মিঠা আলুর হাক লইয়া আয়। আমাগো উঠানে মিঠা আলুর খেত। মিঠা আলুর খ্যাতে চিনা জোঁকের বাসা। আমার অতো খেয়াল নাই, আমি খ্যাতের মধ্যে বইসা হাক তোলতে লাগলাম। হাক তোলতে তোলতে মনে অইলো আমার পেডের নিচে চুলকাইতেছে। নিচে আত দিয়া দেহি দুই তিনডা চিনা জোঁকে আমার রক্ত খাইয়া ঢোল অইচে। আরো নিচে জোঁক, বাইয়া বাইয়া জোঁক ভেতরে ঢোকতে আচে। হাচা? চোখ বড় বড় করে প্রায় সবাই শুনছে জরিনার অবিশ্বাস্য জোঁক কাহিনী। প্রশ্ন করে মাঝ বয়সী আমিরন। তুমি টের পাও নাই মাইয়া? কী সর্বনাশের কতা! বাকিরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে জরিনার দিকে। জরিনা নির্বিকার। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে ওর কথা, অবাক হচ্ছে, তাতেই খুব ভালো লাগছে জরিনার। টেরতো পাইচি খালা একেবারে শ্যাষ দিকে। নরম জায়গা পাইয়া বজ্জাত জোক ঢুইকা গেছে। আর জোঁক তো তেলতেলে। জায়গাও নরোম, ঢুইকা গেছে। জবাব দেয় জরিনা। শ্যাষে তুমি কী করলা? মুই চিককোইর দিয়া আলু খ্যাতে হুইয়া পইরা দুই আতে জোঁক ছাড়াবার চেষ্টা হরতে লাগলাম। মোর চিককোইর হুইন্না মায় আর ছোট বুইনে দৌড়াইয়া আইচে। মায়ে জিগায়, ও জরিনা তোর কী অইচে? মুই কই মোর ভেতরে জোঁক যাইতেছে। মায় হুইন্না হেই আলু খ্যাতে মোর পায়জাামা খুইলা মোর দুই পাও দুই দিকে ছড়াইয়া জোঁক টাইনা টাইনা বাইর করচে। আঁতকে ওঠে শেফালি, তোমার মায় হেই আলু খ্যাতের মইধ্যেই জোঁক বাইর করলো? হয়। তোমার মায়ের সাহস আছে- মন্তব্য কদমের মা’র। জোঁক বাইর করতে দেরী অইলে পেডের মইধ্যে যাইয়া নাড়িভুঁড়ি সব খাইয়া হালাইতো না? ওর মায়েতো ভালা কামই করছে, সমর্থন করে রেহানা। রেহানাকে সমর্থন করে জরিনা, রেহানা আফায় হাচাই কইছেন। প্রশ্ন করে হুরমতি, তোমার ভেতরে কয়ডা জোঁক ঢুকচিল? হাসে জরিনা, হেইডা আমি কেমনে কম? আমিতো আলু খ্যাতে পাও ছাড়াইয়া দিয়া চিল্লাইতেছিলাম। পেডের মধ্যে যুদি জোঁক এহনও থাহে? চোখ বড় বড় করে তাকায় রেহানা। ধমক দেয় কদমের মা, তুই যে কী কস না রেহানা? আপনেরা যাই কন, আমার পেডের মধ্যে জোঁক থাকলেও থাকতে পারে, জরিনার চোখে মুখে অসংবৃত হাসি। তোমার মাথা ঠিক আচেতো? হাসে শেফালি, পেডের মইধ্যে জোঁক থাকলে কবে তোমার পেডের নাড়িভুঁড়ি খাইতো। রক্ত খাইতো। পেডের ভেতর দিয়া রক্ত বাইর অইতো। তুমি মাইয়া আর বাঁচতো না। কবে মইরা যাইতো। কিন্তু আমার মনে কয়, আমার পেডের মইধ্যে হাজার হাজার জোঁক আডাআডি করতেচে। পান খাইতেচে। গান গাইতেচে। আলুর চাষ করতেচে। কিলবিল কিলবিল করতেচে লাক লাক জোঁক- হাসতে হাসতে বলে জরিনা। আমার মনে কয়, মায় সব জোঁক বাইর করতে পারে নাই। পিছলা পথে দুই একটা জোঁক ভেতরে ডুইকা বাড়িঘর বানাইচে। হ্যারা এহন আমারে জালায়। হেই জোঁকেরা আমার পেডের মইধ্যে আলু পাতার চাষ কইরা ঘর বানাইয়া থাকতেছে। আমার মাঝে মাঝে মনে অয় আমার পেডের মইধ্যে ঘাস লাগাইচে জোঁকেরা। ধুর মাইয়া, তুমি পাগল অইয়া গেছো। আহো, গলপে আর দরকার নাই, কামে লাগো। চিনটু মিয়া আইয়া পরলে খবর আচে- বলতে বলতে ঘাস লাগাতে শুরু করে কদমের মা। কদমের মা’র দেখাদেখি সবাই কাজে নামে। সত্যি চিনটু এসে গল্প করতে দেখলে যা তা করে গালিগালাজ করবে।

কয়েক দিনের মধ্যে সোহারাওয়ার্দী উদ্যানের ঘাস লাগানো শেষ। কদমের মা, শেফালি, রেহানা, আমিরন, হুরমতিরা চলে গেছে যে যার জায়গায়। জরিনাও চলে এসেছে মগবাজারের রেল লাইনের বস্তিতে, মার্জিনা বেগমের ডেরায়। আবার বসে বসে খাওয়া শুরু হলো। জরিনার ওপর ভেতরে ভেতরে খুবই বিরক্ত মর্জিনা। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। স্বামী আর আড়াই বছরের ছেলে আবদুল মোমেনকে নিয়ে নিরিবিলি সংসার। সেখানে আস্ত একটা সোমত্ত মেয়ে এসে জুটলে, সংসারটা একটু টলমল করবেই। এই জায়গায় বড় ভয় মর্জিনার। পুরুষ মানুষের চরিত্র তার চেনা। অস্থির সময়ে আবদুল কাদের নিয়ে আসে ধানমন্ডির বাসায় কাজ করার প্রস্তাব। ধীরে ধীরে মর্জিনার ব্যবহার অসহ্য হয়ে উঠছে জরিনার কাছে। আজকাল কথায় কথায় ধমক দেয়। অথচ বাসার সব কাজই করে জরিনা। কোলে আবদুল মোমিনকে নিয়ে মেমের মতো বসে থাকে মর্জিনা। বাসায় কাদের এলে মর্জিনা আরো রুক্ষ ব্যবহার করে জরিনার সঙ্গে। আশপাশে নিজেও চেষ্টা করছে জরিনা যদি একটা কাজ পায় চলে যাবে। একটা গারমেন্টেও গিয়েছিল কয়েকদিন। কিন্তু মেশিনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। নিজেকে একটা বোঝা মনে হচ্ছে জরিনার। তখন ধানমন্ডির এই বাড়ির কাজের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় জরিনা। সকালে রিকশায় চড়িয়ে জরিনাকে নিয়ে আসে আবদুল কাদের। রিকশা থামে বিশাল একটি এ্যাপার্টমেন্টের সামনে। রিকশা থেকে নেমে বিস্মিত জরিনা। এতবড় বাড়িতে কাম করবে সে? কাদেরের পিছু পিছু জরিনা লিফটে ওঠে। লিফটের বোতাম টিপলে লিফট উপরে উঠতে শুরু করে। জরিনা এক হাতে জড়িয়ে ধরে কাদেরকে, দুলাভাই? কী? মোরা কই যাইতেছি? নয় তালায়। নয় তালায়? আরো শক্ত করে ধরে আবদুল কাদেরকে, দুলাভাই আমার ভয় করতেছে। হাসে আবদুল কাদের, এই বাসায় কাজ করলে কয়েকফির ওঠানামা করলে আর ভয় থাকবে নানে। তহন তোর খালি লিপট দিয়া উঠতে আর নামতে মন চাইবে। এইডারে কী কয়? লিপট। লিপটো? হয়। মোরা এহন কয় তালায় উডচি? এইতো আইয়া পরচি। লিফটের দরজা খুলে যায়। জরিনার হাত ধরে নামায় কাদের- নামো। লিফট থেকে নেমে দুজেন দাঁড়ায় দামি একজোড়া দরজার সামনে। কাদের কলিংবেল টেপে। জরিনা বেগম চারদিকে তাকায় আর বিপন্ন বিস্ময় বোধ করে। মনে মনে ভাবে, পেরথম দিন যদি মর্জিনা আফায় লগে আইতো! কিন্তু হেয়তো এহন আমারে সইয্যে করতে পারে না। কিন্তু আইলাম কোতায়? হেরা মানুষ ক্যামন? দরজা খুলে যায়। দরজার সামনে দাঁড়ানো সোহরাওয়ার্দীর ঘাস লাগানো কাজের কন্টাক্টর মিনহাজের শ্যালক চিনটু। তাকে দেখে মৃদু হাসে জরিনা। লোকটা পরে আছে হাফ প্যান্ট। ওদের দেখে হাসে- এসেছো কাদের? হয়, আয়চি। এসো, ভেতরে এসো। আবদুল কাদেরের পিছনে পিছনে ঢোকে জরিনা। দরজা বন্ধ করে দাঁড়ায় চিনটু। সুন্দর সুসজ্জিত ঘর। দেখেই মনটা ভালো হয়ে যায় জরিনার। এসব বাড়িতে কাজ করেও সুখ আছে। তোমার শালী কাজ করবেতো কাদের? করবে। তয় বেতন একটু বাড়াইয়া দেবেন। সোফায় বসে সিগারেট ধরাতে ধরাতে জবাব দেয় চিনটু, আমার মনের মতো কাজ করলে বেতন বাড়ানো কোনো ব্যাপারই না। তাকায় জরিনার দিকে- যাও, ভেতরে যাও। রুমগুলো দেখো। জরিনা ভেতরে ঢোকে। চিনটু উঠে দাঁড়ায়। পকেট থেকে এক তোড়া নোট বের করে বাড়িয়ে ধরে আবদুল কাদেরের দিকে- গুনে দেখো। কাদের টাকাটা দ্রুত হাতে গুনে হাসি মুখে তাকায় চিনটুর দিকে। চিনটু প্রশ্ন করে- ঠিক আছে? ঠিক আচে বস। ওকে যাও। দরজা খুলে টাকা গোনার চেয়েও দ্রুত বের হয়ে যায় আবদুল কাদের। সঙ্গে সঙ্গে দরজা লাগায় চিনটু। দরজা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দরজায় এসে দাঁড়ায় জরিনা, এতবড় বাড়িতে আরতো কেউ নাই। হাসে চিনটু- কে বললো কেউ নাই? দেকলামতো। কেউ নাই। কেন তুমি আছো, আমি আছি। আপনের বৌ, পোলা মাইয়ারা কোতায়? ওরা আছে ওদের জায়গায়। তুমি থাকবে আমার সঙ্গে, বলতে বলতে হাত ধরে জরিনার, তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘাস লাগাতে, সেদিনই তোমাকে একটি নাম দিয়েছি। হাত ধরে টেনে ভেতরের রুমে নিয়ে যায় জরিনাকে। ভেতরে সুন্দর খাট। খাটে নরম বিছানা। বসে খাটে, পাশে বসায় জরিনাকে। জরিনার মুখে আধো হাসি, আধো দুষ্টুমী লেপ্টে আছে। চমকে ওঠে চিনটু। মেয়েটি কী জানতো- এমন ঘটবে? মনে মনে সে প্রস্তত? এটা কী করে সম্ভব? কাদের বলেছে জরিনার বিয়ে হয়নি। তাহলে? সরল আর স্বাভাবিক আচরন ভালো লাগে না চিনটুর। চাইলেই যদি পাওয়া যায়, তাহলে বেশ্যা আনলেই পারে। চিনটু অন্যরকম জান্তব সুখ চায়। সামনে বসা এই দোহানা গড়নের মেয়েটি একটু জোর করবে। প্রতিবাদ করবে, একটু মোড়চামুড়চি করবে। বাঁধা দেবে। আপনে আমার ধর্মের ভাই বলে পা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করবে। বিষণ্ন কণ্ঠে কাঁদবে। পুরো কক্ষটা হাহাকারে রোদনে ভরে উঠবে। সেই হাহাকারের ওপর দুর্ধর্ষ চিনটু রক্তাক্ত বিজয় পতাকা উড়াবে। যেটা সে করে আসছে অনেকদিন ধরে এই বাসায়। বাসাটা সে ক্রয় করেছে তার গোপান ব্যাবসার জন্য। ঠিকানা জানে খুব অল্প কয়েকজন মানুষ। তোমার কী নাম দিয়েছি জানতে চাইলে না? মুখ টিপে হাসে জরিনা, বলেন আপনে। তোমার নাম দিয়েছি ঘাসকন্যা। তুমি সবুজ ঘাসের মতো সুন্দর তকতকে, নতুন। তোমার ভেতরে আমি দেখেছি সাত সাগরের ঢেউ। তুমি আমার ঘাসকন্যা। খুবই সুন্দর নাম দিছেন আমার। অসস্থিবোধ করে চিনটু। এত স্বাভাবিক ব্যবহার করছে কেন মেয়েটি? মেয়েটির স্বাভাবিক ব্যবহারের কারণে চিনটুর ভেতরের পাশবিক বাঘ জেগে উঠতে পারছে না। আমাকে এখানে দেখে তুমি ভয় পাওনি? নাহ। নাহ? ভয় পাওনি? কেন ভয় পাওনি? কেন ভয় পাওনি? বাঘের ক্ষিপ্রতায় চিনটু দুহাতে জাপটে ধরে জরিনাকে। সঙ্গে সঙ্গে জরিনা খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। জরিনার খিলখিল হাসিতে চিনটুর শরীরে ক্রোধ জেগে ওঠে। সে মুহূর্তে জরিনাকে বিছনায় ছড়িয়ে দেয় মেলা থেকে কেনা দুই পয়সার বাতাসার মতো। জরিনার কাপড় সরে গিয়ে জোঁকের প্রবেশপথ বেরিয়ে গেছে। কিন্তু জরিনা নির্বিকার। শরীর দুলিয়ে হাসছে খলিসা মাছের মতো। দুদিকে দুপা ছড়িয়ে দিয়ে প্রস্তুত জরিনা। খুলে ফেলে হাফ প্যান্ট চিনটু। অক্কুক্ত রাক্ষসের মতো এগিয়ে যায় জরিনার দিকে। রাগে, ক্রোধে চিনটু এখন অগ্নিসিন্ধু। বলে কী মাগী! চিনটুকে ভয় পায় না? দ্যাখ মাগী, ভয় কাকে বলে- পলকমাত্র, চিনটু প্রবিষ্ঠ হতে না হতেই জরিনার জোঁক প্রবেশের সুড়ঙ্গ তীব্র ঝংকারে খুলে যায়। অসম্ভব ক্রোধে ট্যাপের নলের মতো বের হয়ে আসতে থাকে টাটাকা রক্ত, টাটকা রক্তের সঙ্গে শত শত ছোট ছোট চিনা জোঁক, আর সবুজ টুকরো টুকরো ঘাস। রক্তে, ঘাসে আর জোঁকে চিনটুর শরীর লেপ্টে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতম্ভব চিনটু। বিস্মিত চিনটু। বিমূঢ় চিনটু। দ্রুত সে সরে আসে রুমের এক পাশে। কী হচ্ছে এসব? কোত্থেকে আসছে এতসব জোঁক রক্ত আর সবুজ টাটকা ঘাস? জরিনার ছোট্ট চকমকে শরীরের কাঠামোয় এসব আসবে কোত্থেকে? জরিনা একইভাবে শুয়ে আছে বিছানার ওপর। দুদিকে ছড়ানো দুটি নধর চকচকে থাই, দুই থাইয়ের মাঝখান থেকে বেরুচ্ছে প্রবলবেগে টাটকা রক্ত, জোঁক আর ঘাস। ক্রমশ গতি বাড়ছে ঘাস রক্ত আর জোঁকের। ভয়াবহ দৃশ্য। পাশবিক দৃশ্য। ভয়ে চিৎকার করে চিনটু- এসব কী হচ্ছে? থামাও এসব। আমার ঘর নষ্ট হচ্ছে। ঘর নষ্ট হচ্ছে! জরিনা খিলখিল হাসছে। রক্ত ঘাস আর জোঁকে ঘরটা ভরে যাচ্ছে। টাটকা রক্তের ভেতর জোকগুলো জরিনার সঙ্গে পালা দিয়ে হাসছে আর কিলবিল করছে। রক্তে জোঁকে আর ঘাসে ঘরটা ইতোমধ্যে এক বিঘত ভরে উঠেছে। গা ঘিনঘিন করছে চিনটুর। বমি আসছে। ভয়ে বিহ্বলতায় দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলছে না। দরজা বন্ধ। কে বন্ধ করেছে দরজা? চিনটু এবার প্রচণ্ড ভয় পায়। ত্রাসে তার কণ্ঠ শুকিয়ে আসে। রক্তের ভেতর সন্তরণশীল জোঁকগুলো সারিবদ্ধভাবে তার দিকে ধেয়ে আসছে। চিনটু প্রাণপণে দরজা খুলতে চেষ্টা করছে। দরজা খুলছে না। ধীরে ধীরে ঘরটা জোঁকে রক্তে আর ঘাসে ভরে উঠছে। শ্বাস নেয়ার জন্য হাঁ করছে চিনটু। বাতাসেও রক্ত জোঁক আর ঘাস। ঘরের মধ্যে ছুটোছুটি করতে শুরু করে সে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে হাঁটু অবধি উঠে এসেছে রক্ত ঘাস আর জোঁক। একটু হাওয়া একটু বাতাস বড় দরকার। অসহ্য! চিৎকার করছে চিনটু... বাঁচাও বাঁচাও....। ঘাসকন্যা জরিনা বিছানায় দুদিকে দু’পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে পরম সুখে। মুখে বিদ্যুৎ হাসি। মনে হচ্ছে ওর শরীরের কোষে কোষে নেমে আসছে সুখের মধুর ঘ্রাণ। আপন মনে তারিয়ে তারিয়ে দেখছে তার সুড়ঙ্গ থেকে প্রবহমান রক্ত জোঁক আর ঘাসের পাষান রোদন। অমিত বিস্ফোরণ।

দরজায় মাথা ঠুকতে ঠুকতে রক্তাক্ত হচ্ছে চিনটু। রুমটার প্রায় অর্ধেক ভরে গেছে রক্তে, জোঁকে ঘাসে। খুব দ্রুত গোটা রুম ভরে যাবে রক্তে, ঘাসে আর কিলবিল করা জোঁকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App