×

সাময়িকী

দুঃস্বপ্ন অথবা নীলচোখের মেয়েটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০১৯, ০৪:২৫ পিএম

দুঃস্বপ্ন অথবা নীলচোখের মেয়েটি
বোশেখের অশান্ত বাতাসের ঝাপটা বারবার আছড়ে পড়ছে চোখেমুখে, জানালার রঙিন পর্দাটাও পত্পত্ করে উড়ছে। বোশেখের শেষ দিকে ক্লান্ত দুপুরে বিছানায় গড়াগড়ি আর বুকে জড়ানো শাদা কোল বালিশ নিয়ে এপাশ-ওপাশ করছি। চোখের পাতা ভারি হয়ে যাচ্ছে তবু কেন যেন ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না। চারটা বাজতেই আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসি, চোখ চলে যায় জানালা গলে পাশের বাড়ির দ্বিতীয় তলার মিলিদের বারান্দায় এবং চোখ আটকে যায় একটি নীলাভ চোখে। হ্যাঁ, সত্যি সত্যি সুন্দরী-রূপসী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাকিয়ে আছে আমার দিকেই, কিন্তু এ মেয়েকে এ বাড়িতে আর কখনো দেখিনি। আমি বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, মেয়েটি তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আমি গভীরভাবে নির্লোভ চোখে তার দিকে তাকালাম। মনে হলো এমন নীলাভ চোখের মেয়ে বুঝি আর কখনো দেখিনি। তার চোখ আয়নার মতো স্বচ্ছ, সমুদ্রের মতো গভীর, আমার মন তার নাম দিলো নীলিমা। ধীরে ধীরে অন্ধকারের গিলাফ ঢেকে দেয় পৃথিবীকে, নীলিমা চলে যায় ঘরে কিন্তু তার চোখ হৃদয়ের আয়নায় ভেসে উঠলো এবং আমার সাথে কথা বলতে লাগলো, অনেক অনেক কথা...। দুই. পরদিন বিকেলে ছাদে উঠলাম, টবে পানি দিতে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির ছাদে মিলির হাত ধরে হাঁটছে সেই নীলাভ চোখের সুন্দর মেয়েটি। যাকে নীলিমা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। আমি সবগুলো টবে পানি দিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম, তাকিয়ে দেখতে লাগলাম নীলিমা ও মিলিকে। মিলি কি যেন বলতেই নীলিমা হাসতে লাগলো, তার চোখের পলক মাঝে মাঝে কেঁপে উঠে, আমি অভিভ‚ত হলাম তার মোহনীয় আকর্ষণীয় চাহনি দেখে। হয়তো ইমরাউল কায়েস উনায়জার এমন চোখকেই বন্য গাভীর নীলাভ চোখের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মিলির হাত ধরে নীলিমা নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে, আমি তাকিয়ে থাকলাম চলে যাওয়া সিঁড়ির দিকে। আমার মন বলতে লাগলো আমি আজ সত্যি সত্যি তার চোখের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। তিন. কিছুদিন পর দুপুরে খেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করছি। বোশেখের আকাশে থমথমে ভাব, গুড়–ম গুড়–ম আওয়াজে মেঘে মেঘে সংঘর্ষ হচ্ছে, ধীরে ধীরে আকাশ কালো হতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই ঝিরঝির করে নামলো বৃষ্টি, ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে গেল সামনের রাস্তা, বাড়ির বারান্দা এবং জানালার পার্টগুলো। বৃষ্টিটা হঠাৎ থেমে গেল মেঘ চলে যাচ্ছে দ্রুত উত্তরাকাশে। শীতল বাতাস বইতে লাগলো, খুলে গেল পাশের বাড়ির দরজা নীলিমা বেরিয়ে এল। বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে তাকালো নিষ্পলক দৃষ্টিতে। আমি বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আবার ঝিরঝির করে বৃষ্টি বইতে লাগলো। নীলিমা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে, ভিজে যাচ্ছে তার সর্বাঙ্গ; আমিও ভিজে যাচ্ছি। তবুও তার চোখ আমাকে চুম্বকের আকর্ষণের মতো দাঁড় করিয়ে রাখলো। কত সুন্দর মসৃণ চেহারা, নীলাভ চোখ। তার চোখ দেখে আমার মনে হতো মরুভ‚মিতে সবুজ ঘাস তাকে আমি ইশারা করলাম সরে যেতে বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে গেল বলে মা ডাকতে লাগলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘরে চলে এলাম। কারণ দেরি হলে মা বারান্দায় এসে দেখতে পারেন। চার. পরেরদিন সন্ধ্যা হয়ে গেল নীলিমা আসছে না, বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো কষ্ট। সন্ধ্যায় আর পড়তে বসতে পারলাম না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম বন্ধ দরজার দিকে। বই খুলে তাকিয়ে আছি পড়তে ইচ্ছে করছে না। অনেকক্ষণ খেয়াল করে ছোট বোন লতা বললো, কি ভাবছো ভাইয়া? বই খুলে পড়ছো না যে? আমি হঠাৎই বলে ফেললাম লতা, মিলিদের বাড়িতে কিছুদিন হলো একটি মেয়ে দেখছি, সে কে রে? লতা বললো, ও তুমি নীলা আপার কথা বলছো, সেতো মিলিদের খালাতো বোন। জানো ভাইয়া তার মনে অনেক কষ্ট, তার না দুটো চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন পাথরের চোখ লাগানো, এসেছিল বেড়াতে দেশে চলে গিয়েছে, কথাগুলো বলেই লতা থামলো। কথাগুলো শুনতেই আমার হৃদয়ে বোশেখের ঝড়ের চেয়েও প্রচণ্ড বেগে ঝড় বইতে লাগলো। বারবার যেন বজ্রপাত হচ্ছিল, ভেঙে যাচ্ছিল হৃদয়ের খিড়কি দরজা। এত সুন্দর চোখ মিথ্যে হতে পারে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, তবে কি পৃথিবী এত নিষ্ঠুর?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App