×

মুক্তচিন্তা

পুলিশ যখন ধর্ষক!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৯:১২ পিএম

অন্তহীন অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। একশ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যের নানা অপকর্ম, অনিয়ম ও অপরাধের কারণে সরকারি এ সংস্থাটি এখন নানা প্রশ্নের মুখে। সর্বশেষ খুলনা রেলওয়ে থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে থানাহাজতে দলবেঁধে ধর্ষণ ও মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন এক নারী। আদালতে হাজির করা হলে তিনি বিচারকের কাছে এ অভিযোগ করেন। আদালতের নির্দেশে গত সোমবার খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ৩০ বছর বয়সী ওই নারী তিন সন্তানের মা বলে জানা গেছে। থানাহাজতে এমন ঘটনা বর্বরতার শামিল। ভিকটিম নারীর ভগ্নিপতির বরাত দিয়ে খবরে প্রকাশ, গত ২ আগস্ট শ্যালিকা যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে যায়। রাতে ওসি ওসমান গনি পাঠান ও আরো ৪ জন পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় বলে সে জানিয়েছে। ঘটনা জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি দেড় লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা যদি অভিযুক্ত না হয় তাহলে টাকাপয়সা দিয়ে রফা করতে কেন যাবে? ইতোমধ্যে ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। সমাজের বিকৃত মানসিকতার একশ্রেণির মানুষের যৌন লালসার শিকারে পরিণত হয়ে চলেছে নারী ও শিশুরা। প্রশ্ন দাঁড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন নিজেই ধর্ষক হয়ে যায়, তখন এই সমাজের নিরাপত্তার জন্য নারীরা কোথায় যাবে। ধর্ষণ সামাজিকভাবে একটি চরম ঘৃণ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত, অন্যদিকে দেশের আইনেও ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এত বাধা থাকার পরও কেন ধর্ষণের বীভৎসতা বেড়েই চলেছে। বলা হয়ে থাকে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। ভিকটিমরা দুর্বল বলে অপরাধীরা বিচার ও শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়। নারীকেই পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে রাষ্ট্র যদি কঠোরতা না দেখায় তবে সমাজে ক্ষতের গভীরতা বাড়তে থাকবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ-সামাজিক নৈতিকতাও ধর্ষণের মতো বিকৃতি থেকে মানুষকে নিবৃত্ত রাখতে পারছে না। এসব নিয়েও ভাবা দরকার। খুলনার ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে কোনো ধরনের ছাড় যেন না পায়। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও রয়েছে আমাদের। শুধু শাস্তি দিয়েই সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। এটি চলতেই থাকবে, যতক্ষণ না এ ব্যাপারে সমাজ সোচ্চার হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App