×

জাতীয়

নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৭ পিএম

নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

লন্ডনে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটি শ্রেণি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা সেই মানুষ যারা সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগেই আছে। লন্ডনে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এমন মানসিকতা আমাদের নেই এবং আমরা সেটি করি না। ঘটনাচক্রে কিছু ঘটতে পারে। বরং আপনি যদি গত দশ বছরে আমাদের অবস্থান দেখেন, আমরা কিন্তু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আপনি আমার নিজের কথাই চিন্তা করেন, যখন আমি আমার বাবা-মা সবাইকে হারালাম, গুলি করে মারা হলো। কই আমি তো বিচার পাইনি। খুনিদের বিচার না করে তাদের ইনডেমনিটি দেওয়া হলো। অর্থাৎ অপরাধকে প্রশ্রয় দিলেন। উল্টো তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েই একটি সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, সেই দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। হেফাজতে মানুষ হত্যা করার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী আমার দলের নেতাকর্মীরা।

নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধে কি করা হচ্ছে?– এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন ঠিক ওইভাবে হেফাজতে মৃত্যু হয় না। নির্যাতনও সেভাবে করা হয় না।

আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহে কিছু নিয়ম রয়েছে- একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর বাইরে কিছু করা হয় না। আওয়ামী সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, একটি শ্রেণি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু আছে যারা অসাংবিধানিক সরকার, জরুরি অবস্থা অথবা মার্শাল ল' বা মিলিটারি রুলার আসলে তাদের খুব দাম বাড়ে। কাজেই তারা সারাক্ষণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাদের পেছনে লেগেই আছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। ২০০৫ বা ২০০৬ সালের দিকে আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশের উপরে ছিল। আজ সেটা ২১.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আমরা সেটা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের মাথাপিছু যেখানে ৪০০/৫০০ মার্কিন ডলার ছিল, আজকে সেখানে প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলারে উঠে এসেছে। আমরা এখন ৮.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান ও এর চর্চা কীভাবে হচ্ছে? এ নিয়ে এক প্রশ্ন জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান ও এর চর্চা কীভাবে হচ্ছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশে এখন ৪৪টি প্রাইভেট টেলিভিশন আছে এবং তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। স্বাধীনতা না থাকলে তারা আমার বিরুদ্ধে বা সরকারের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার করছে কীভাবে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে এবং এ নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটা এখন কোনো কেন্দ্রে গণনার দিক থেকে হয়তো পেয়েছে। কোনো কেন্দ্রে হয়তো হতে পারে। কিন্তু আমাদের ট্রাইব্যুনাল আছে সেখানে মামলা করতে পারে, কোর্টে মামলা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনও মামলা করতে পারেন। তারা তদন্ত করে দেখছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যদি সত্যিই ভোট দিতে না পারতো, তাহলে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ আন্দোলনে নামতো এবং আমরা ক্ষমতায় থাকতে পারতাম না।

বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর বাহক এডিস মশার বিস্তার রোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের গাফলতির অভিযোগ উঠেছে।

তবে সিটি করপোরেশনগুলো এডিস মশা সম্পর্কে একেবারেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বা মশা নিয়ন্ত্রণকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য করে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে- এমন অভিযোগ মানছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গু বিষয়ক খবর অনেক বেশি প্রকাশিত হচ্ছে এবং এর ফলে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ছে, আর সেটাই সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, একটু উচ্চবিত্ত যারা, সেসব জায়গাগুলোতেই এর প্রকোপ বেশি। আমাদের সবসময় লক্ষ্য থাকে বস্তি এলাকা, ড্রেন এসব দিকে। মশা মারা কিন্তু নিয়মিত একটা ব্যাপার।

শুধু সিটি করপোরেশনকে দোষ না দিয়ে সব মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানান তিনি।

মশার ওষুধ কেনায় দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মশার ওষুধ কেনার ব্যাপারে টেন্ডার করা হয়। যারা টেন্ডারে উপযুক্ত হয়, তারা কিনে নিয়ে আসে এবং সেগুলো ব্যবহারও হয়। তবে কোন ওষুধ এডিস মশার উপরে কাজ করে, সে ব্যাপারে বিভক্তিকরণ করা হয়নি বা সে ধরনের সতর্কতা ছিল না।

শুধু ঢাকা নয়, সমস্ত দেশেই একটা পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো ঘরের কাছে বা ঘরে কোথাও যদি পানি জমা থাকে এবং সেখানে মশার লার্ভা তৈরি হয়, তবে তাদের জরিমানা করা হবে। মানুষ যদি আগামীর জন্য প্রস্তুত থাকে, তবে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি হবে না।

পদ্মাসেতুতে মানুষের কাটা মাথা লাগার গুজব এবং এর জেরে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে বেশ ক’জন মানুষের মৃত্যু বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

যারা গুজব ছড়াচ্ছে, এরকম কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App