×

মুক্তচিন্তা

ছবি দেখে মানুষ বিগলিত হবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

ঢাকাসহ সারাদেশে মানুষের মনে যেমন আতঙ্ক তেমনি দেশের বাইরের বাঙালিও শঙ্কিত। তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থাকে দেশে। তারা তো উদ্বিগ্ন হবেনই। এখন সারাবিশ্ব জানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। এমন কঠিন বাস্তবতা কি কতগুলো মনগড়া কথা বা হাসি-ঠাট্টায় সমাধান করা যাবে? আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি মানুষের অন্তরের কথা বুঝবেন কর্তারা। কেন একজন পদসহ কর্মকর্তার বিলম্বে একটি কিশোরের প্রাণ যাবে।

মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে চরম অশান্তি আর নিরাপত্তাহীনতায়। জান নিয়ে টানাটানি। আর এমন খারাপ সময়ে ছবি ও কথায় মশকরা চলছে সমানে। করছেন নেতারা। করছেন সেলিব্রেটি নামের তারকারা। তাদের কি দরকার লোক দেখানো ঝাড়ু নিয়ে সাফ করার ছবি দেয়ার? এসব ছবি দেখে মানুষ বিগলিত হবে? না রাগে-দুঃখে চুল ছিঁড়বে? এটুকু বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই তারা নাকি নেতা? এরাই ডোবাবে তরী। সঙ্গে আছে কথার দাপট। কথায় বলে তরবারি বা ছুরির চেয়ে ধারালো হতে পারে জিভ। স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখার উপদেশ ছিল বাল্যপাঠে। এখন আর সেগুলো কেউ পড়ে না। তাই জিভকে শাসনেও রাখে না। সরকারের উন্নয়ন বা অগ্রগতি থামিবে দিতে না পারলেও তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করার জন্য এখনকার নেতাদের কথাই যথেষ্ট। নেতারা আমাদের কী মনে করেন বুঝি না। মানুষ কি পাগল, না মানুষ বোধ-বুদ্ধিহীন? মূলত হামবড়া ভাব আর খেই হারানো নেতারাই দলকে বিপদে ঠেলে দেয়। সেটা আগের সরকারগুলোর আমলে যেমন দেখেছি এখনো তাই। মশা এদিকে তাড়ালে ওদিকে যায় কিংবা এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সংবাদ মূলত গুজব- এসব বলার ভেতর কী আনন্দ আছে? বা এগুলো বললে কী ফায়দা? কোনো নেতা বা মেয়র কখনো একটিবারের জন্যও বলে দেখেননি সত্যের কী ফলাফল। তারা যদি বুকে জোর নিয়ে বলতেন, আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের ভুল হলে মাফ করবেন। আর আমাদের সহায়তা করুন। দেখতেন মানুষ আরো অধিক মনোযোগী, আরো সক্রিয় হয়ে তাদের পাশেই দাঁড়াত। এ এক অদ্ভুত কালচার আমাদের। কত আমল, কত সরকার এল-গেল কেউ দায় স্বীকারের রাজনীতি করল না। ডেঙ্গু যে মহামারি আকারে ঢাকাকে আক্রমণ করেছে, এটা সবাই জানেন। ঘরে ঘরে মানুষ সতর্ক। মানুষের আত্মীয়স্বজন কেউ না কেউ আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি বলেন এটি নিছক গুজব কেমন লাগবে তাদের? দুভাবে তাদের বেদনার কারণ হলেন আপনারা। প্রথমত, মশাবাহিত রোগের প্রতিবিধান বা সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, তারপর তাদের অসুখকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে। এমন কথা না বললেই কি না? আজ যখন এ লেখা লিখিছি হয়তো ভালো উদ্দেশ্যেই বলেছেন তবু কী দরকার আছে প্লেনে করে মশা মারার ওষুধ আনা হবে এ ঘোষণা দেয়ার? যেভাবেই আসুক এনে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তারপর বলাটাই কাজের কাজ। সেটা কেন হচ্ছে না? আমরা নিশ্চিতভাবে জানি ও বিশ্বাস করি কোনো সরকারই চায় না তাদের আমলে এমন কাণ্ড ঘটুক। আর তাতে তাদের ভাবমূর্তি বা ইমেজ যাক চুলোয়। কিন্তু সবাই আমাদের দেশে ঘটনা অস্বীকার বা এড়িয়ে যাওয়াকেই মনে করে বুদ্ধির কাজ। একটা কথা বলা দরকার, সর্বত্র জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতার এখন কোনো বিকল্প নেই। দেখা যাচ্ছে সারাদেশে থেমে থেমে বলতে গেলে লাগাতার কোনো না কোনো খারাপ ঘটনা ঘটে চলেছে। এর পেছনে কে বা কারা বা এগুলো কি আসলেই সামাজিক অনাচার কিংবা নৈরাজ্য কিনা তা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসে গেছে। কারণ একটার পর একটা ঘটনায় মানুষের মনে কিন্তু ভয় ঢুকে গেছে। তাদের বিশ্বাস ও আস্থায় চিড় ধরারও দেরি নেই। একা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কারো প্রতি আস্থা নেই মানুষের। এমন কথাবার্তায় সে জায়গাটা আরো নড়বড়ে হবে মাত্র। দেশের রাজনীতি পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। মানুষ রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বললেও ভুল হবে না। জীবন যন্ত্রণা আর জীবন আনন্দে মানুষ রাজনীতিকে জায়গা দিতে নারাজ। কারণ এর মানে কেবলই বাহাস আর কথা কাটাকাটি। একদল যা বলে আরেক দল তা নিয়ে পাল্টা কথা বলে। ঠিক উল্টোটি। এমন ধারা কতদিন কাঁহাতক সহ্য করা যায়? তাই মানুষ এদের ওপর বিশ্বাস রাখা বা রাজনীতি করা ছেড়েই দিয়েছে। সে কারণে অপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ কি নিরাপদ? শেখ হাসিনা না থাকলে তাদের কী হাল হতে পারে সেটা কি তারা ভেবে দেখেন? মানুষের যে চরম বিরক্তি আর রাগ কি তারা সহজে ভুলে যাবে? গণতান্ত্রিক আর ডিজিটাল বলে আমরা যে গর্ব করি তার প্রথম আর প্রধান শর্তই হলো জবাবদিহিতা। মানুষ মিডিয়ার কারণে জানে না এমন কোনো ঘটনা নেই। সবকিছু প্রকাশ্য। এমন বাস্তবতায় রোগ-শোক জীবন নিয়ে আজেবাজে কথা বলা বা ভিআইপি প্রসঙ্গের মতো উটকো বিষয়ে মানুষের জান নিয়ে খেলা করার পরিণাম ভালো হওয়ার কথা নয়। এখনো সময় আছে। রাজনীতি কেন সামাজিক অন্যায় আর অবিচারের দায় নেবে? বরং তার কাজ তো ছিল অন্যায়ের প্রতিরোধ। অপমানের বদলা নেয়া। সেটা কেন ভুলে গেল এই বিরাট দলের নেতারা? তারা কি জানে না তারা কাদের উত্তরাধিকার বহন করছে? আর তাদের এটাও জানা আছে আগের সরকারকে কেন মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল? অথচ ইতিহাস থেকে কেউই পাঠ নেয় না। ঢাকাসহ সারাদেশে মানুষের মনে যেমন আতঙ্ক তেমনি দেশের বাইরের বাঙালিও শঙ্কিত। তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থাকে দেশে। তারা তো উদ্বিগ্ন হবেনই। এখন সারাবিশ্ব জানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। এমন কঠিন বাস্তবতা কি কতগুলো মনগড়া কথা বা হাসি-ঠাট্টায় সমাধান করা যাবে? আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি মানুষের অন্তরের কথা বুঝবেন কর্তারা। কেন একজন পদসহ কর্মকর্তার বিলম্বে একটি কিশোরের প্রাণ যাবে। কেন ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সত্য বলে সামনে আসা যাবে না? কেন মানুষকে নানা ধরনের বিড়ম্বনা আর কষ্টের মধ্যে এক ধরনের ছেলে ভোলানো কথা বলে উস্কে দেয়া হবে? এই কেনগুলোর জবাব না পেলে মানুষ কিন্তু এক সময় প্রতিক্রিয়া দেখাবেই। সেগুলো দমন করার ভেতর আপাতত সার্থকতা থাকলেও ভবিষ্যতে তা ভালো ফল বয়ে আনবে না। তাই এখনো সময় আছে শুধরে নেয়ার। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের ওপর আস্থাশীল। তিনি এ দেশের মানুষের মঙ্গল চান। সে কারণেই সংযত হয়ে কথা বলা দরকার। দরকার সুষ্ঠু ও সঠিক ভূমিকা। দেশ এগিয়েছে, মানুষও এগিয়েছে। তাদের বোকা মনে করে আত্মতুষ্টি লাভের কোনো সুযোগ নেই। সবার আগে বাক-সংযম আর পরিমিতি বোধের পরিচয় দেয়া এখন সময়ের চাহিদা। এতে দল, সরকার, দেশ ও জনগণের লাভ। আশা করি সমস্যা সমাধানে নিজেদের ভূমিকা বলিষ্ঠ রেখে নেতা-মেয়ররা তার প্রমাণ দেবেন। মানুষের জন্যই দেশ। আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বা স্বপ্নই ছিল বাংলার মানুষ। তাদের দেখভাল করুন, জিভ সংযত রাখুন প্লিজ। গুটিয়ে রাখুন শো আপ করার ঝাড়ু।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App