×

জাতীয়

স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির ঘাটতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৯ এএম

স্থানীয় পর্যায়ে প্রস্তুতির ঘাটতি
দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি খুব একটা নেই। সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম ছাড়া মশা নিধনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু শনাক্তের কিটের সংকট। সেই সঙ্গে ওষুধ ও স্যালাইন সংকটও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতি জেলার সদর হাসপাতালে ১২০টি কিট বরাদ্দ দেয়া হলেও তা প্রায় শেষের দিকে। চিকিৎসকরা আক্রান্তদের সেবা দিলেও চাহিদার তুলনায় কিটের সংখ্যা কম হওয়ায় বিপাকে পড়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা (এনএসওয়ান) না করানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী শনাক্তকরণ কিট সংকটের কথা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে ডেঙ্গু আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে মানুষ জ¦রে আক্রান্ত হলেই এনএসওয়ান টেস্ট করাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে স্বউদ্যোগে এই পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে করে কিটের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা বিদেশ থেকে কিট আমদানি করছি। আশা করছি, শিগগিরই বিদেশে থেকে আরো কিট চলে আসবে। ঢাকার দুটি সরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ডা. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেলে প্রায় ৬০০ জন ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৬ জনের ডেঙ্গু পজিটিভ এসেছে। আর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৬৩ জনের টেস্টে ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়েছে মাত্র ৭ জনের। এদিকে কিট সংকটের কারণে রাজধানীর মালিবাগের পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এনএসওয়ান পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এক নোটিশে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাজারে এনএসওয়ান টেস্ট কিটের দুষ্প্রাপ্যতা এবং তাদের বর্তমান মজুদ ২ আগস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩ আগস্ট থেকে এই পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রামে কিট সংকটের কারণে নগরীর বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালেও কিট সংকটের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো সংকট হয়নি। তবে রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে চাহিদা বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এক হাজার কিটের আবেদন করে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি কিট সংকট থাকবে না। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, কিছু জায়গায় হয়তো সত্যি সত্যি সংকট আছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় কৃত্রিম সংকটও তৈরি করা হচ্ছে। রংপুর প্রতিবেদক হাসান গোর্কির পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯২ জন। মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. দেবেন্দ্র নাথ সরকার জানান, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা থাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কক্সবাজার প্রতিনিধি সৈয়দুল কাদেরের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিট পর্যাপ্ত নেই। তবে জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মতিন দাবি করেছেন, কিটের সংকট নেই। যশোর প্রতিনিধি আলমগীর কবীর জানান, যশোরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে কিট সংকট রয়েছে। এ সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো এ পরীক্ষার জন্য বেশি দাম রাখছে। তবে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এমদাদুল হক ভোরের কাগজকে জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তে যে কিটের প্রয়োজন তা পর্যাপ্তই রয়েছে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) পক্ষ থেকেও কিট সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে সারাদেশে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিট সহজলভ্য ও সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। জানা গেছে, প্রতিদিন দুই লাখ পিস ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট আমদানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গতকাল শনিবার ভারত থেকে এক লাখ ৮০ হাজার ৫০টি কিট আনা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন আমদানিকারকের মাধ্যমে দুই লাখ পিস কিট দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেশের মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওএমসি হেলথ কেয়ার (প্রা.) লি. ৬ আগস্ট থেকে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পিস কিট উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ওএমসি মোট ২০ লাখ পিস কিট আমদানি করবে। কিটের সহজলভ্যতা নিশ্চিতের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক হটলাইনের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহের জন্য এক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে। হটলাইন নম্বর- ০১৭০৮৫০৬০৪৭। অন্যদিকে গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কিট সংকট মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই লাখ পিস কিট আনা হয়েছে, আরও ৮ লাখ কিট আসছে। কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কিট সংকটের অজুহাতে ডেঙ্গু পরীক্ষা না করালে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য সরকারের ১০টি টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২২ হাজার ৯১৯ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ জন। গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৪৯ জন। আগে থেকে ভর্তি আছে আরো ৬ হাজার ৮৫৮ জন। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৯০৫ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App