×

জাতীয়

ঈদে ঘরমুখোদের নিয়ে গ্রামীণ জনপদে অস্বস্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৯, ১১:৪৩ এএম

ঈদে ঘরমুখোদের নিয়ে গ্রামীণ জনপদে অস্বস্তি

ফাইল ছবি

প্রতিবছর ঈদে ঢাকায় কর্মরত স্বজন-প্রিয়জনদের গ্রামে ফেরা নিয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি সদরের ব্যবসায়ী জীবন ইসলামের পরিবারে খুশির বন্যা বইলেও এবারই দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির ভাবনায় ভাগ বসিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, রাজধানী থেকে যারা বাড়ি ফিরবেন তারা অজান্তেই বহন করতে পারে ডেঙ্গু রোগ। যা ছড়িয়ে পড়তে পারে আশপাশের মানুষের মধ্যেও। এ সতর্কবার্তায় জীবন ইসলামের পরিবারে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এলাকার আরেক ব্যবসায়ী নুরুন্নবী মিয়া নিরুপায় হয়ে স্বজনদের রাজধানী ছাড়তে নিরুৎসাহিত করছেন। কলেজ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা ঘরমুখোদের সতর্ক করছেন। রংপুর মহানগরীতে কর্মরত সংবাদকর্মী ফরহাদুজ্জামান ফারুক জানালেন, চাকরিজীবী স্বামীসহ ঢাকায় অবস্থান করা তার বোন মারুফা ঈদে বাড়ি না ফেরার কথা বলেছে। এতে তার পরিবারে ঈদের আগেই ম্লান হয়ে গেছে আনন্দ। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে গতকাল শনিবার পর্যন্ত যে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে তাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। যারা ঢাকায় কোচিং করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। ঈদের ছুটিতে তাই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের ঘরে ফেরা নিয়ে অস্বস্তি দেখা গেছে উত্তরাঞ্চলের ঘরে ঘরে। রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. দেবেন্দ্র নাথ সরকার সতর্ক করে বলেছেন, ঢাকা থেকে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মাধ্যমেই স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামে না ফেরাই সমীচীন। একই রকম পরিস্থিতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও। সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সদস্য হাসিবুল ইসলাম জানালেন, ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ এবার আর নেই। ঢাকায় কর্মরত তার কয়েকজন স্বজনের ঘরে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর কারণে তারা আসতেই চাচ্ছে না। নগরীর সমাজকর্মী কাজল ঘোষ বললেন, ঢাকা থেকে ফিরে বহু মানুষ ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। তাই মন চাইলেও ঝুঁকি এড়াতে অনেকেই প্রিয়জনদের ঢাকা ছাড়তে নিষেধ করছেন। এতে ঈদুল আজহার আনন্দ ইতোমধ্যে ম্লান হওয়ার পথে। বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি দেড় শতাধিক ডেঙ্গু রোগীর বেশির ভাগই রাজধানী থেকে ফিরে আক্রান্ত হওয়া। তাদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে এমনিতেই ধকল সামলাতে হচ্ছে স্বজনদের। তাই নাড়ির টানে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি যেন বিপদে পরিণত না হয় সে জন্যই ঘরে ফেরা নিয়ে নিরুৎসাহ দেখা যাচ্ছে। যশোরের শার্শা উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটি কাটাতে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন পুরান ঢাকার চাকরিজীবী আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানালেন, ঈদে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই এই আশঙ্কায় গ্রামে যেতে চাচ্ছি না। প্রিয়জনরা অবশ্য বাড়ি ফেরার জন্য চাপ না দিলেও কোরবানি দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক তবিবর রহমান জানান, ঢাকায় অবস্থানরতদের গ্রামে ফিরতে নিরুৎসাহ দিচ্ছেন খোদ চিকিৎসকরাই। তাই অনেকের স্বজন ঘরে ফেরার পরিকল্পনা বাতিল করে ঢাকায় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকার বাইরে বিস্তৃতভাবে রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ করতে ঈদে নগরবাসীর রাজধানী ত্যাগ না করাই ভালো। রাজধানীতে কর্মরতদের ঘরে ফেরা নিয়ে গ্রামের স্বজন-প্রিয়জনরা আনন্দ আর খুশির স্বপ্ন দেখলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভাবনায় পড়েছেন। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ঈদে ঘরে ফেরার সময় অনেকেই অজান্তেই ডেঙ্গু জীবাণু বহন করে নিয়ে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। জেলা ও উপজেলা থেকে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে গ্রামে গ্রামে। স্থানীয়ভাবে যা সামাল দেয়া অসম্ভব হবে। সে কারণে ঢাকায় থাকতেই কারো জ্বর হলে কিংবা বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত গ্রামে না যাওয়াই ভালো। নৌ-সড়ক-রেলপথের হিসেবে এবার ঈদুল আজহায় ঢাকাসহ পাশের গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে গ্রামে ফিরতে পারেন এক কোটি ২৯ লাখের মতো মানুষ। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহনগরী থেকেই ফিরবেন ৭০-৮০ লাখ মানুষ। প্রায় পৌনে দুই কোটি নগরবাসীর মধ্যে ইতোমধ্যে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশির রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাজধানী ত্যাগ করা নগরবাসীর মধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার জন আক্রান্ত হতে পারেন ডেঙ্গুতে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত না হয় সেজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছেন। এ কারণে নাড়ির টানে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App