×

জাতীয়

বিপর্যয়েও গলাকাটা ব্যবসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০১৯, ১০:১৪ এএম

বিপর্যয়েও গলাকাটা ব্যবসা
ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এডিস মশাবাহিত সংক্রামক এই রোগে। এদের অনেকেরই চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহের সামর্থ্য নেই। বিত্তবানরা স্বাভাবিকভাবেই নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। আবার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়েই কেউ কেউ ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হন। এই সুযোগে প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালেই শুরু হয়েছে ‘গলা কাটা’ ব্যবসা। হাইকোর্টের নির্দেশনা ও সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ডেঙ্গু পরীক্ষায় আদায় করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ফি। চিকিৎসা শেষে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে আকাশচুুম্বি বিল। ক্ষেত্রবিশেষে রক্ত পরীক্ষা বা চিকিৎসা না করেই বিল আদায় করা হচ্ছে। এমন অভিযোগে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে মোটা অঙ্কের জরিমানাও করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে ২৮ জুলাই রবিবার। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এই ফি নির্ধারণ করা হয়। ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য এনএসওয়ান ৫০০ টাকা, আইজিএম ও আইজিজি এই দুটি পরীক্ষা একত্রে ৫০০ টাকা এবং সিবিসি পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই মূল্য কার্যকর থাকবে। আগে এনএসওয়ান ১২০০ থেকে ২ হাজার, আইজিএম ও আইজিজি এই দুটি পরীক্ষা ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং সিবিসি পরীক্ষার জন্য ১ হাজার টাকা রাখা হতো। অতিরিক্ত ফি এবং ওষুধের দাম বেশি রাখার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালকে ৫০ হাজার, ইবনে সিনা হাসপাতালকে ৪০ হাজার টাকা, সোমবার ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকার স্থলে ১ হাজার ২০০ টাকা রাখার দায়ে পপুলার হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই অনিয়মের অভিযোগে স্কয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে তলব করে অধিদফতর। ওই দিন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত উত্তরার লুবনা হাসপাতালকে ২০ লাখ ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করে। এছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগে গতকাল রাজধানীর গ্রিনলাইফ মেডিকেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ধানমন্ডি ক্লিনিক ও কমফোর্ট ডায়গনস্টিক সেন্টারকে তলব করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দাম নির্ধারণের পাশাপাশি কেউ যাতে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত না রাখে সেই বিষয়টি তদারকি করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠে নামানো হয় ১০টি টিম। অভিযোগ জানাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল। ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ নামের এই সেলের হটলাইন: ০১৩১৪-৭৬৬০৬৯, ০১৩১৪-৭৬৬০৭০, ০২-৪৭১২০৫৫৬, ০২-৪৭১২০৫৫৭। ইমেইল: সরহরংঃবৎসড়হরঃড়ৎরহমপবষষ@মসধরষ.পড়স.। এ ছাড়া অধিদপ্তরের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ হটলাইনেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ০১৬২৪২৭৬০১২ নাম্বর এবং ফফফযধশধফহপৎঢ়@মসধরষ.পড়স, ফফ-ফযধশধ@ফহপৎঢ়.মড়া.নফ। ঠিকানায় সরাসরি অভিযোগ করা যায়। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। অন্যান্য কর্তৃপক্ষের টিমও কাজ করছে। এই মুহূর্তে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাস্তবতা বুঝতে হবে। এদিকে, সরকারের নির্দেশ অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথম কথা হলো সরকার একটি জিনিসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই দাম নির্ধারিত হয়েছে। সরকারের প্রস্তাবে তারা রাজিও হয়েছেন। এখন তারা সেই নির্দেশ মানবেন না, সেটি হতে পারে না। দেশে আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আছে। আমি মনে করি, যারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এই অবস্থার জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ি করেন পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক এই আঞ্চলিক পরিচালক ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে এই অবস্থা প্রমাণ করে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। আর এই সুযোগটাই তারা কাজে লাগিয়ে ইচ্ছামাফিক ব্যবসা করছে। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো মনিরুজ্জামান ভ‚ইয়া ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে সরকারের সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়টি আমরাও সেবা হিসেবেই নিয়েছি। তাই ডেঙ্গু শনাক্তে সরকারের নির্ধারিত ফি-ই যাতে রাখা হয় সে বিষয়ে সমিতির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের সমিতির প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেও এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়েই এই উদ্যোগ নিয়েছি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশ অমান্য করেছে, তাদের কাজকে আমরা সমর্থন করি না। সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। ফোন, ফেসবুক পেইজ, সরাসরি কিংবা যে কোনো উপায়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, সরকার নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থেই তাদের এই উদ্যোগ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App