×

জাতীয়

শিশু হাসপাতাল সন্তানদের পাশে বসে কাঁদছেন মায়েরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৩ এএম

শিশু হাসপাতাল সন্তানদের পাশে বসে কাঁদছেন মায়েরা
হাতে কেনোলা। ফোঁটায় ফোঁটায় চলছে স্যালাইন। তবুও শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে শিশু সন্তানের হৃদয়বিদারক কান্না। যা যে কোনো মায়ের পক্ষেই সহ্য করা কঠিন। তাই তো সন্তানকে কোলে নিয়ে মশারির মধ্যে মূর্ছা যাচ্ছেন মা পারভীন আক্তার। নয়নের মনি, বুকের ধন কখন সুস্থ হবে সেই চিন্তায় ঘড়ির কাটাও যেন নড়তে চাইছে না তার। তবুও দুই বছরের শিশু লাবিব হাসানকে বুকে নিয়ে কান্নায় সান্ত¡না খুঁজছেন তিনি। পাশেই বসে স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম। তারও বিমর্ষ চেহারা। ছেলের কান্নায় তার হৃদয়ও যে ভেঙে যাচ্ছে সে কথা বুঝতে না দিলেও স্ত্রী সন্তানের অলক্ষ্যে চোখ মুছছেন শহিদুল। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ঢাকা শিশু হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডের এমন চিত্র। শুধু এই দম্পতি নয়, হাসপাতালের সব ওয়ার্ডেই মিলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর বাবা-মায়ের এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। এদিকে, ডেঙ্গুর প্রকোপে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে চলছেন বাবা-মায়েরা। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় অনেকে বাসায় রেখেই চিকিৎসকের পরামর্শে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু লাবিবের বাবা শহিদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের একটি বাসায় থাকেন তারা। চলতি মাসের ২১ তারিখে লাবিবের জ্বর হয়। পরে এই শিশু হাসপাতালে আনলে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। কিন্তু বেড ফাঁকা না থাকায় বাধ্য হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিতে হয়। সেখানেও বেড খালি না থাকায় আবার এখানে আসতে হয়। এরপর বেড মেলে। বাসায় মশার প্রকোপ কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক মশা। বাসার আশপাশেই ময়লা আবর্জনায় এগুলো জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত দুই বছরেও সিটি করপোরেশনকে মশার ওষুধ দিতে দেখলাম না। মোহাম্মদপুরের বিজলী মহল্লার বাসিন্দা রাব্বি হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, হাসপাতালে বেড না পাওয়ায় ১ বছরের ছেলে রাজুকে প্রতিদিন বাসা থেকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোলে থাকা সন্তানের শরীরে মশার কাপড়ের চিহ্ন দেখিয়ে তিনি বলেন, সরকার যেন মশা মারার উদ্যোগ নেয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১৪টি শিশু ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে এসেছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশেই ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার খোলা হয়েছে। পাশাপাশি একটি টেস্টও বিনামূল্যে করে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার মাহফুজা ভোরের কাগজকে বলেন, গত বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছে। এদের অনেকেরই অবস্থা সংকটাপন্ন। ফলে হাসপাতালের বি-ব্লকের ৫ম তলায় আইসিইউ বিভাগে দুটি এবং ২য় তলায় একটি ডেঙ্গু সেল খোলা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার হারুন-অর-রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, হাসপাতালের মোট ৬৪৪ ওয়ার্ডের বেশিরভাগেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App