×

জাতীয়

ঢামেক হাসপাতালে এক বিছানায় তিন রোগীর ঠাঁই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৭ এএম

ঢামেক হাসপাতালে এক বিছানায় তিন রোগীর ঠাঁই

ফাইল ছবি

ঢামেক হাসপাতালে এক বিছানায় তিন রোগীর ঠাঁই

ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডের চিত্র এটি। স্থান সংকুলান না হওয়ায় একই বিছানায় একসঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তিন শিশুকে রাখা হয়েছে। পাশে উদ্বিগ্ন স্বজনরা। ছবি গতকাল বিকালে তোলা -ভোরের কাগজ

একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুজনের সেবায় ব্যস্ত মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। এর মধ্যেই তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার নাম কামাল হোসেন। বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকা দুজনের একজন তার স্ত্রী মুক্তা ও অন্যজন ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বৃষ্টি। দুজনেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। স্থান সংকুলান না হওয়ায় একই বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছে দুজন। হাসপাতালেই এখন তার সংসার। শুধু মা ও মেয়েই নয়, ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। হাসপাতালের একই বিছানায় ৩ শিশু রেখেও চিকিৎসা করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি এ হাসপাতালটির পরীক্ষাগারেও। কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করে পরীক্ষা করতে রক্ত জমা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। এদিকে, ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত রবিবার ৯০০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে ঢামেক হাসপাতালের পরীক্ষাগারে আসেন। এর মধ্যে ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়। গতকালও প্রায় কয়েক শতাধিক রোগী পরীক্ষা করাতে আসেন। এছাড়াও গতকাল পর্যন্ত ৫৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল পুরনো ভবনের দোতলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে একই বিছানায় ৩ শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের ৫ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন ৮ বছর বয়সী শিশু মরিয়মের মা লায়লা বেগম জানান, তারই মেয়ের মতো এ বিছানায় ৬ বছর বয়সী আশিক ও ৩ বছর বয়সী রুহিন ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অসুবিধা হলেও চিকিৎসার স্বার্থে তারা সব মেনে নিয়েছেন। একই অবস্থা ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশুর। ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগের ৫ম তলা থেকে ৮ম তলা পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ওয়ার্ডের বাইরের করিডোরেও রোগীর কমতি নেই। ৮ম তলার করিডোরে চিকিৎসাধীন জহিরুল ইসলামের বোন জাকিয়া জানান, মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজের স্নাতক (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তার ভাই। অরকাইটস রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ঢামেক হাসপাতালে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে গত বুধবার বাড়িও ফিরে যান তিনি। পরের দিনই আবার জ্বর আসে তার। ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে পরীক্ষা করালে পজেটিভ আসে। আবার তাকে গত শনিবার ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য একই হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি আরো বলেন, এখানে প্রথমে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডেঙ্গু রোগীদের সঙ্গে ছিলেন। তখন সেখানে থাকা কোনো মশার কামড়েই তার ভাইয়ের এ রোগ হয়। গতকাল ঢামেক হাসপাতালের পরীক্ষাগারেও রোগীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সেখানে মনি নামে একজন অভিযোগ করেন, তার ৭০ বছর বয়সী শ্বশুর মো. আলীম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তার রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে এসেছেন তিনি। কিন্তু ৩ ঘণ্টায়ও তিনি রক্ত পরীক্ষা জমা দিতে পারেননি। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু : এদিকে, গতকাল ঢামেক হাসপাতালে রিতা আক্তার (২৮) নামে এক মহিলা ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঢামেকের সহকারী পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন জানান, গাজীপুরের রিতা আক্তার গত ২৭ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ঢামেকের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। গতকাল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত সাত জন মারা গেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App