×

জাতীয়

ঈদের ছুটিতে দেশজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেবে ডেঙ্গু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ১১:২২ এএম

ঈদের ছুটিতে দেশজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেবে ডেঙ্গু
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকার বাইরের ডেঙ্গুর বিস্তার আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আর কয়েক দিন পরই সারা দেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ওই সময় ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়বেন লাখ লাখ মানুষ। যাবেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এদের অনেকেই শরীরে বহন করবেন ডেঙ্গুর জীবাণু। আক্রান্ত ব্যক্তি যে এলাকায় অবস্থান করবেন, সেখাকার এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত ওই ব্যক্তির মাধ্যমে অন্যদের এই রোগে সংক্রমিত করতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামে যারা যাবেন তাদের চিকিৎসাসেবা নিয়েও উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা। এমন এক পরিস্থিতিতে করণীয় এবং ঈদের ছুটিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী কেবিনেট মিটিংয়েও বিষয়টি উঠবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের পলিসি কী হবে তা নির্ধারিত হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিঘ্ন। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনো নগরকেন্দ্রিক। বিভাগীয় শহরে চিকিৎসাসেবা ভালো। গ্রামে এখনো বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার সুবিধা তেমনভাবে পৌঁছায়নি। এমন কোনো গ্রামে গিয়ে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছবে না। তখন তার জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের এ রোগে সংক্রমিত করতে পারেন। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং মোকাবেলা করতে নগরবাসী ও এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঢাকার বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৯৬ জন। দেশের ১২টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৩৭। জুলাই মাসে ২৯ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন। ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ২৮৩। ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে সে এলাকাগুলো হলো গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সিলেট, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। গতকাল ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা জানান, এবার এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা তারা আগেই করেছিলেন এবং এই ব্যাপারে সতর্ক হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা জানিয়েও ছিলেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী শনাক্তে সব ধরনের পরীক্ষায় ফি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী নেয়া হচ্ছে কিনা তা তদারক করতে ১০টি দল গঠন করা হয়েছে, তারা মাঠে কাজ করছে। রাজধানীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে এই কাজের তদারকি করছে। সরকারি নির্দেশ না মানা হলে নাগরিকরা অধিদপ্তরের ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ হটলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন বলেও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডেঙ্গু শনাক্তে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে কিট পাঠানো হচ্ছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মংলা, বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে জ্বরের রোগী পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তারা সেখানে কিটের মাধ্যমে এনএসওয়ান পরীক্ষা করবে। ডেঙ্গু শনাক্তে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি বেশি নিচ্ছে কিনা তা নজরদারি করতে মনিটরিং সেল খুলেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তাতে বলা হয়, এই নির্দেশনা না মানলে জরুরি ফোন করা যাবে। ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ নামের এই সেলের হটলাইন : ০১৩১৪-৭৬৬০৬৯, ০১৩১৪-৭৬৬০৭০, ০২-৪৭১২০৫৫৬, ০২-৪৭১২০৫৫৭। ইমেইল: [email protected] প্রসঙ্গত, গত রবিবার ডেঙ্গু সংক্রান্ত সব পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ও বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ওই দিন থেকে ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য এনএসওয়ান পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা, আইজিএম ও আইজিজি এই দুটি পরীক্ষার ফি একত্রে ৫০০ টাকা এবং সিবিসি পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, আইভি ফ্লুইড, ওআরএস, ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিটের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে যাতে বিক্রি করা না হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি এবং ডায়াগনস্টিক রিয়েজেন্ট ও ইকুইপমেন্ট ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সভায় উল্লিখিত ঔষধের উৎপাদন, আমদানি এবং সরবরাহের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে মহাপরিচালককে আশ্বস্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা সেলের বেড সংখ্যা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এই বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App