×

মুক্তচিন্তা

সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া উচিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালপল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত রবিবার গোবিন্দগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই। ওই ঘটনার পৌনে তিন বছর পর আদালতে চার্জশিট দেয়া হলো। এদিকে চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামিকে বাদ দেয়ায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে সাঁওতালরা। তারা চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করেছে। এই চার্জশিটের মাধ্যমে পরিহাস করা হয়েছে বলে সাঁওতাল নেতারা দাবি করছেন। সাঁওতালদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া খুবই হতাশাব্যঞ্জক। ১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। কিন্তু ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গ করা হচ্ছে অভিযোগ করে দখল ফিরে পেতে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। একপর্যায়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তারা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে। ওই বছর ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে চারজন সাঁওতাল আহত হন। পরে পুলিশ ওই বসতি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সাঁওতালরা প্রথম থেকে অভিযোগ করে আসছে, প্রশাসনের ছত্রছায়ায়ই তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সাঁওতালদের দাবি, তাদের পূর্বপুরুষের ভিটে আগের জায়গা ফেরত দেয়া হোক। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই সাঁওতালদের দাবি-দাওয়া সবসময়ই উপেক্ষিত থাকছে সরকারের কাছে, প্রশাসনের কাছে। একদিকে প্রশাসনের বৈরী আচরণ, অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাঁওতালরা অনেকটা একঘরে অবস্থায় রয়েছে। এটাও সত্যি যে, সাঁওতালরা তাদের ভূমির অধিকারের বিষয়ে যে দাবি তুলে আসছে, সেই দাবি পূরণের বিষয়টি বেশ জটিল। তবে তা যত জটিলই হোক, যেহেতু তারা দেশের একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সেহেতু তারা তাদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগটুকু করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। বিশালসংখ্যক প্রান্তিক মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এ বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্বসহ বিবেচনা করা উচিত। আমরা মনে করি, এ বিষয়টি সরকারের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা উচিত। সাঁওতাল বসতিতে গুলি-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনার অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া উচিত। অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এ ঘটনায় পিবিআই আদালতে চার্জশিট দিয়েছে, এটা মামলার অগ্রগতি বলা যায়। তবে প্রধান আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। সাঁওতালরা নতুন করে আন্দোলনে নামছে বলে খবরে প্রকাশ। নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি কোনভাবেই ঠিক হবে না। সাঁওতালরা এ দেশেরই পিছিয়েপড়া বঞ্চিত একটা অংশ। তাদের অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App