×

জাতীয়

ওষুধ কবে আসবে জানে না কেউ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৯, ১১:৩১ এএম

ওষুধ কবে আসবে জানে না কেউ
রাজধানীজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। প্রতিদিনই এই রোগে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই এখন ঠাঁই নেই। শয্যা পাওয়া তো দূরের কথা; মেঝে ও বারান্দা উপচে পড়ায় ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। রাজধানীর সীমানা ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এডিস মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। অথচ মশা নিধনে সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটিয়েছে, তাতে মশা মরে না। এ তথ্য স্বীকার করেছেন স্বয়ং দুই সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বলা হচ্ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে ওষুধ সরবরাহ করেছে তা মানহীন ও মশা নিধনে অকার্যকর। উচ্চ আদালতে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তির পর এডিস মশা নির্মূলে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আনতে দুই সিটিকে নির্দেশ দেন আদালত। ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকর ওষুধ ছিটাতে দুই মেয়রসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এ অবস্থায় মশা নিধনের ‘বিদ্যমান ওষুধ কার্যকর নয়’ দুই সিটি করপোরেশন তা স্বীকার করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওষুধ পরিবর্তনের। হাঁকডাক শুরু হয়েছে কার্যকর ওষুধ আনার। তবে নতুন এ ওষুধ কবে আনা হবে তা জানেন না সংস্থা দুটির কেউই। এমনকি ওষুধ আমদানির প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। বলা হচ্ছে, ওষুধ পরিবর্তনে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত পেলেই আনা হবে নতুন ওষুধ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন ওষুধ আনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিবর্তনসংক্রান্ত গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল এখনো বলতে পারেনি কোন ওষুধ কোথা থেকে আনা হবে। যেসব ওষুধের কথা বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে সেসব ওষুধের কোনো স্টক নেই। ওষুধ কীভাবে আনা যায়, সে বিষয়ে আরো বৈঠক হবে। ঠিক কবে নাগাদ ওষুধ আনা হবে, তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডেয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুনের কোনো বক্তব্য গতকাল পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে ভোরের কাগজকে তিনি জানিয়েছিলেন, মশা নিধন ওষুধের গুণগত মান নিয়ে সবসময় প্রশ্ন ছিল, এখনো আছে। এই ওষুধ পরিবর্তনের বিষয়ে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রিসার্চ পারসনকে নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। গবেষণা করে তারা বিদ্যমান ওষুধ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দিলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। মশা নিধনের ওষুধ যে কার্যকর নয়, তা গত ৭ জুলাই সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মশক নিধনসংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওইদিন তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি উত্তর সিটি এলাকায় মশক নিধনে যে ওষুধ ব্যববার করা হয়, তা সব পুরনো ও মান্ধাতা আমলের। এসব ওষুধে মশা নিধন হয় না। সে কারণেই আমরা ওষুধ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর ওষুধের মান ভালো না হওয়ায় ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন ওষুধ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে কার্যকর না হলেও এডিশ মশা নিধনে বিদ্যমান ওষুধই ব্যবহার করছে দুই সিটি করপোরেশন। এ দিয়েই চালানো হচ্ছে ক্রাশ প্রোগ্রাম। পাশাপাশি এডিশ মশা নির্মূলে গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছে সংস্থা দুটি। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও র‌্যালি করা হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। এডিশ মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। এরইমধ্যে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে এমন কয়েকটি বাড়ির মালিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে আর্থিক জরিমানা। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি, ডেঙ্গুতে ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু ও এডিশ মশা নিধনে ব্যর্থতায় ঢাকার দুই মেয়রসহ দায়িত্বহীন বক্তব্য দেয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন শেষে তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। মশা নিধন করতে না পারায় দুই মেয়রের প্রতি মানুষেরও ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এদিকে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকর ওষুধ ছিটাতে ঢাকার দুই মেয়র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নির্দেশনার কথা জানান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ভ‚মিকা নিতে, কার্যকরি ওষুধ যেন সরবরাহ করা হয়। জনগণকে ডেঙ্গুর আতঙ্ক থেকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচাতে হবে। এর আগে ২৫ জুলাই বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিশ মশা নির্মূলে কার্যকর ওষুধ আনতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App