×

জাতীয়

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলকে বিক্ষোভ দেখাল রোহিঙ্গারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৯, ১২:০৮ পিএম

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলকে বিক্ষোভ দেখাল রোহিঙ্গারা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল দ্বিতীয় বারের মতো কক্সবাজারে এসে গতকাল বিক্ষোভের মুখে পড়ে। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদলটি গতকাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে যখন স্থানীয় আহা সেন্টারের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছিল, ঠিক ওই সময় বাইরে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব দেয়া, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা ও নিজেদের বসতভিটা ফিরে পাওয়ার দাবি জানায়। এদিকে একই দিন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রতিনিধিদলও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি গতকাল শনিবার দুপুর ১টায় উখিয়ায় পৌঁছে। তারা কুতুপালংয়ের এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ ঘুরে ঘুরে দেখেন। এরপর স্থানীয় আহা সেন্টারে আসেন। সেখানে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ হোছাইনের নেতৃত্বে শরণার্থীদের ৩৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও আসে। এরপর উভয় প্রতিনিধিদলের মধ্যে প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শরণার্থীদের আশ্বস্ত করে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে গৃহীত মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের চিত্র উপস্থাপন করেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরীসহ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের এই প্রতিনিধিদলটি আজ রবিবার ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এদিকে আহা ভবনে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বৈঠক চলছিল ঠিক ওই সময় ভবনের বাইরের রাস্তায় ২ শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে গণহত্যা ও নির্যাতনের বিচার ও নাগরিকত্ব প্রদানসহ প্রত্যাবাসনের দাবিতে স্লোগান দেয়। রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ হোছাইন জানান, আমরা আমাদের অবস্থান মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেছি। আমাদের ওপর যে বর্বরোচিত নির্যাতন হয়েছে এবং আমরা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি সে সব বর্ণনা দিয়েছি। আমরা তাদের কাছে স্পষ্ট করে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে পুনর্বাসন, নিজ নিজ বসতভিটা ফেরত পাওয়া, নাগরিকত্ব প্রদান ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণসহ সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো তুলে ধরেছি। আমরা রোহিঙ্গা হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের বিচার দাবি জানিয়েছি। এসব দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছি। এর আগে দুইদিনের সফরে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি সকাল ১০টায় কক্সবাজারে পৌঁছে। তাদের আগমন উপলক্ষে উখিয়া এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিমানবন্দর থেকে প্রতিনিধিদলটি স্থানীয় হোটেল রয়েল টিউলিপে যান। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তারা সড়কপথে উখিয়ার কুতুপালংয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে চলা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ৩৪টি শরণার্থী শিবির রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ইতিপূর্বে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়। কিন্তু ওই চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের আগ্রহ ও আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে এখনো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App