×

জাতীয়

বন্যা প্রলম্বিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৯, ১২:১৭ পিএম

বন্যা প্রলম্বিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে

ফাইল ছবি

উজানের ঢলের পাশাপাশি কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি আবারো বেড়েছে। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বেড়ে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি এলাকা। ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ, প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ। লালমনিরহাটেও তিস্তা ও ধরলার পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পদ্মার পানি কমলেও শরীয়তপুরে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগও। এদিকে বন্যার সময়কাল প্রলম্বিত হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ইতোমধ্যে বন্যাজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ১১৪-এ পৌঁছেছে। আর বন্যায় আক্রান্ত ২৮টি জেলায় ৫৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ওইসব জেলাগুলোয় ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসিরা। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বন্যার কারণে গত ১৫ দিনে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে জামালপুর, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও টাঙ্গাইল জেলায়। এ ছাড়া বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায়ও বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মধ্যাঞ্চলের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে যমুনা নদী ছাড়া দেশের অন্য সব প্রধান নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এবার বন্যা ধারণার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলায় নদীভাঙন বেশি হতে পারে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার জেলাগুলো বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। এদিকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গাইবান্ধায় এখনও গ্রামের পর গ্রামজুড়ে পানি। কয়েকটি এলাকায় আবারো বাড়ছে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি। বাঁধ বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা দুর্গতরা। সিরাজগঞ্জেও যমুনার পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আবারো নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নতুন করে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। বগুড়ায় যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও বাড়ছে বাঙালি নদীর পানি। গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা। টাঙ্গাইলে যমুনার পানি কিছু বৃদ্ধি পেলেও কমছে ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি। ৬ উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। অপরিবর্তিত রয়েছে ময়মনসিংহের বন্যা পরিস্থিতি। সদরের চরগোবিন্দপুর, চরভবানীপুর ও দুর্গাপুরসহ ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। পুরনো ব্রহ্মপুত্রের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত শুরু করলেও তীব্র স্রোতের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। কমতে শুরু করে আবারো যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। রাস্তা বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঘরে ফিরতে পারছে না। কুড়িগ্রামে আবারো কমতে শুরু করেছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি। অনেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বাড়িঘর, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতিতে হতাশ তারা। শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি কমছে ধীরগতিতে। শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে মাত্র ২ সেন্টিমিটার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App