×

অর্থনীতি

পকেট বাজারগুলোতেও হবে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৯, ০৫:০০ পিএম

পকেট বাজারগুলোতেও হবে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট

মো. নাজমুল হাসান, এজেন্ট ব্যাংকিং প্রধান

গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এজেন্ট ব্যাংকিং একটি কার্যকর উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। মানসম্মত ব্যাংকিংসেবা দেয়া হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটে। সম্প্রতি এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. নাজমুল হাসান এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার মরিয়ম সেঁজুতি। উল্লেখ্য, নাজমুল হাসান এর আগে ব্যাংক এশিয়া, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে এজেন্ট ব্যাংকিং ও অন্যান্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। বিস্তারিত-

ভোরের কাগজ : ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা চালুর গল্পটি কেমন নাজমুল হাসান : ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে আমার আনুষ্ঠানিকভাবে ৮টি জেলায় একসঙ্গে ১০টি আউটলেট উদ্বোধনের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা চালু করি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ব্রাঞ্চ ব্যাংকিংএর গ্রাহক হিসাবের মধ্যে কোন তারতম্য হবে না। পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহকরা উভয় মাধ্যমেই ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে। আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং সফটওয়্যার কেনার পর দুইমাস এর ডেভেলপমেন্টের কাজ করি এবং আমরা ৩০ অক্টোবর বাণিজ্যিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে আমরা সফলতার সাথে ৪১ টি জেলার ১০৭ টি আ্মাউটলেটের কার্যক্রম শুরু করেছি। এর মাধ্যমে ৮৩৯টি হিসাব খোলা হয়েছে। ৬১৮ দশমিক ৭৫ লাখ টাকার আমানত সংগ্রহ হয়েছে। ভোরের কাগজ : এজেন্ট ব্যাংকিংসেবা চালু করতে ব্র্যাক ব্যাংকের এত সময় লাগল কেন? নাজমুল হাসান : ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকিং এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়নের পর আমরা আবেদন করি। যেকানে প্রস্তাব ছিল, ব্রাক এনজিও হবে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা উক্ত প্রস্তাবকে সমর্থ ন না করায় অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ভোরের কাগজ : এত দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কি? নাজমুল হাসান : ব্র্যাকের বর্তমানে ১০৮টি শাখা রয়েছে। এত দ্রæত সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজনের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক খুবই জনপ্রিয় একটা নাম ছিল। এই সুবিধাটাই আমরা নিয়েছি। গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের ধারণা কাজ করে, ব্র্যাক ব্যাংক যা করে তাই সফল হয়। পাশাপাশি এজেন্ট এবং স্থান যাচাইবাছাইয়ের কাজ করেছে আমাদের এসএমই বিভাগ। সবকিছু মিলেই খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুরুতে আমরা ৮টি জেলায় একসঙ্গে ১০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু করি। ওই বছর আমাদের ৫০টি আউটলেট চালু হয়। তিনমাস আমরা কোনো আউটলেট বৃদ্ধি করিনি। ওই সময়ে আমরা সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের কাজ করেছি। এ ছাড়া এজেন্টদের জন্য প্রথমদিকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু এর রিটার্ন হয় খুব স্লো। আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেছি। আমরা একটা ইকোনমি আউটলেট যেভাবে করা যায়, যেমন কম ইনভেস্টমেন্টে একটা সুন্দর আউটলেট কিভাবে করা যায়। আমাদের কমিউনিকেশনের সহায়তায় আমরা একটা সুন্দর একটা গাইডলাইন করি যেখানে কম ইনভেস্টমেন্ট লাগে। এর পরবর্তীতে আমাদের আউটলেটের সাইজে কোনো লিমিটেশন রাখিনি। আমরা এ বি সি- এই তিনটি ক্যাটাগরির সাইজ বাছাই করেছি। পাশাপাশি এজেন্টদের জন্য যে কমিশন এমনভাবে দিয়েছি যাতে, কম সময়ে অল্প পুঁজিতে বেশি আয় করতে পারে। ব্র্যাক হচ্ছে এসএমই লিডিং ব্যাংক। সারা দেশে আমাদের ৪৫৬টি এসএমই ইউনিট অফিস আছে। এরমধ্যে ২৬০ টির মাধ্যমে আমরা লোন দেই, কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো ব্রাঞ্চ নেই। আমরা এই লোনগুলো দেই অন্য ব্যাংকের সহায়তায়। এর ভলিউম প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রতি মাসে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই ঋণ সংগ্রহের কাজটা শুরু করি। ওখান থেকে একটা ভালো রিটার্ন এজেন্টদের কাছে আসে। ভোরের কাগজ : গ্রামীণ পর্যায়ে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ হয়েছে তার ৫ শতাংশও ঋণ দেয়া হয়নি। এর কারণ কি? নাজমুল হাসান : মূলত প্রান্তিক লেভেলের লোকজনদের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেয়া হয়। ওখানের মানুষদের ঋণ খুব কম, ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা। এই পরিমাণ ঋণ দিতে কোনো ব্যাংকই আগ্রহ দেখায় না। বিষয়গুলো আমরা মাথায় নিয়েছি। আমরা এসএমইকে বেশি গুরুত্ব দেই। তাই আগামী কোয়ার্টারে আশা করি আমাদের ঋণ দেয়ার পরিমাণ বাড়বে। কতটা সহজ এবং ডিজিটালভাবে ঋণ দেয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। আর কৃষিঋণ শহরের ব্রাঞ্চ থেকে দেয়া সম্ভব না। সুতরাং ব্রাঞ্চ থেকে আমরা আরেকটু এগোতে চাই। আমরা জেলা, উপজেলা পর্যন্ত ইতোমধ্যে চলে গেছি। এখন ২৬০ এসএমই ব্রাঞ্চগুলোকে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর করে ফেলছি। এতে করে প্রতিটি আউটলেট থেকে কাস্টমার সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা নিতে পারবে। আামদের যে ব্রাঞ্চ আছে এসব ব্রাঞ্চের ১০-১৫ কিলোমিটারের মধ্যে যতগুলো পকেট বাজার রয়েছে ওখানে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট চালু করব। ভোরের কাগজ : আপনাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স কম আসছে। কেন? নাজমুল হাসান: রেমিট্যান্স প্রসেস করতে একটু সময়ের ব্যাপার। আমরা এ ব্যাপারে একটি সমাধান বের করেছি। রেমিট্যান্স দেয়ার জন্য আমাকে আর হেড অফিসের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এই লেনদেনের জন্য আমরা নতুন একটি অ্যাপ তৈরি করছি। আমরাই প্রথম যে এজেন্টদের ওয়েব ভার্সন এবং অ্যাপ ডেভেলপ করেছি। এজেন্ট ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপ দিয়ে রেমিট্যান্স দিতে পারে। আমরা চাচ্ছি, আউটলেট ছাড়া একদম গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে এ রেমিট্যান্স দিতে। বিশেষ করে মা-বোনদের জন্য।

 ভোরের কাগজ : আপনাদের ব্র্যাঞ্চে গ্রাহক কেন সেবা নিতে যাবে? নাজমুল হাসান : আমাদের আউটলেট থেকে ২৪ ঘণ্টা এবং সাতদিন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবে। এ ছাড়া আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সমস্ত লেনদেন হয় বায়োমেট্রিক পদ্বতিতে। সুতরাং দুর্নীতি হওয়ার কোনো সমস্যা নেই। এতে করে গ্রাহকও আস্থা রাখতে পারছে। আরো একটি বিষয় আমরা গ্রাহকদের জন্য আনছি। তা হলো, গ্রাহকদের জন্য যে ফরমটা তা ডিজিটাল করে দিচ্ছি। আমরা হার্ড কপিটা অফ করে পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্বতিতে আনতে চাই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমরা কনসেপ্ট শেয়ার করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App