×

জাতীয়

চিকুনগুনিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৯, ০৪:২৫ পিএম

চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসঘটিত একটি রোগ যা সংক্রমিত এডিস মশা দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই চিকুনগুনিয়া ‘টোগাভিরিড’ পরিবারভুক্ত ‘আলফাভেরাস’ প্রজাতির ভাইরাসঘটিত একটি রোগ। চিকুনগুনিয়া শব্দটি এসেছে আফ্রিকান মারুন্ডি ভাষা থেকে। এর অর্থ ভেঙে যাওয়া বা বাঁকা হওয়া। জ্বরে হাড়ের জয়েন্টগুলো ফুলে যাওয়ার জন্য এই নামকরণ। ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা গেলেও পরে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি রোগী ছাড়া এ রোগের বিস্তার আর বাংলাদেশে লক্ষ করা যায়নি। চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু : * চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু রোগের বাহক একই মশা। * চিকুনগুনিয়াতে অতিরিক্ত জ্বর, জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি, মাথা ব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, র‌্যাশ এবং লিম্ফোসাইট কমে যায়। * ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট, নিউট্রোফিল কমে যায়, রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। রোগের লক্ষণসমূহ * সাধারণত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত মশা কামড় দেয়ার তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। * জ্বর ১০১ থেকে ১০৫ বা তারও বেশি পর্যন্ত ওঠে, তবে কাঁপুনি কিংবা ঘাম দেয় না। * জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হয়। * এ ছাড়াও বমি, মাথা ব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। * ত্বকে র‌্যাশ হতে পারে। র‌্যাস হলে ত্বক চুলকায়। * প্রস্রাব কমে যাওয়া, ডায়েরিয়া। * সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই জ্বর ও ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে ব্যথা এক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সুপ্তিকাল : ৩-৭ দিন (তবে ২-২১ পর্যন্ত হতে পারে)। রোগ নির্ণয় : উপরোল্লিখিত উপসর্গগুলো দেখা দিলে, ওই ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। উপসর্গগুলো শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসটি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট (আইইডিসিআর)-এ চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের সব পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসা : * চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ ডেঙ্গু এবং জিকার মতোই। তাই চিকিৎসায় অবহেলা করা উচিত নয়। * প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। * পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। * প্রচুর পানি, ফলের রস, শরবত খেতে হবে। না হলে শরীরে পানিশূন্য হয়ে যাবে। * অ্যাসপিরিন, নন-স্টেরয়েডাল কিংবা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কখন হাসপাতালে আসতে হবে : * রক্তচাপ যদি কমে যায় * প্রস্রাব কম হলে * রক্তপাত হলে * অজ্ঞান হয়ে গেলে * ওষুধে গিরার ব্যথা না কমলে * রোগী বৃদ্ধ, শিশু অথবা গর্ভবতী হলে ঝুঁকি/আশঙ্কা : চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা। আবার এই রোগে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর কোনো মশা অন্য কাউকে কামড়ালে ওই ব্যক্তিও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবেন। এ কারণেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে যেন মশা কামড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাধারণত চিকুনগুনিয়া জ্বরে রোগীর মৃত্যু হয় না। তবে নবজাতক এবং বৃদ্ধদের জন্য এই জ্বর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জ্বর তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। একবার চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে গেলে সারা জীবনে আর চিকুনগুনিয়া জ্বর হয় না। প্রতিরোধ : * চিকুনগুনিয়া কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি এখনো। * জ্বর হলে এক সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হবে যেন মশা না কামড়ায়। কারণ মশা কামড় দিলে মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া অন্যদের দেহে ছড়াবে। * এডিস মশা নির্মূলে ফুলের টব কিংবা অন্য কোথাও পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। * দিনের বেলা মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। (সংগৃহীত)

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App