×

জাতীয়

তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রে ফের বাড়ছে পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০১৯, ১২:০৬ পিএম

তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রে ফের বাড়ছে পানি
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নীলফামারী-কুড়িগ্রামে আবারো হু হু করে বাড়ছে নদনদীর পানি। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বাঁধ ও উঁচু সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নেয়া মানুষদের ঘরে ফেরাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা এবং ঢাকার চারপাশের নদীসহ উত্তরাঞ্চলের বড় নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি ৩০ জুলাই থেকে উন্নতি হতে পারে। তবে ২৫ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ফের যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রধান নদনদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিনে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গতকাল বুধবার থেকে মধ্যাঞ্চলের কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঢাকার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ঢাকায় বন্যার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে ভারতের আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় বন্যার পানি বাড়ছে। ফলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরাংশের হাওর অঞ্চলেও বন্যার পানি বাড়বে। গত ২৩ জুলাই আসামের বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি আবারো অবনতির দিকে যাবে। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশেও বৃষ্টি হয় তাহলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো জানান, সুনামগঞ্জের সুরমা, শেরপুর-সিলেট জেলার সীমান্তে কুশিয়ারা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস, চাঁদপুরের মেঘনা, কুড়িগ্রামের ধরলা, গাইবান্ধার ঘাঘট, চকরহিমপুরে করতোয়া, চিলমারী ও নুনখাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও আরিচায় যমুনা, বাঘাবাড়ীতে আত্রাই, এলাশিনে ধলেশ^রী, জামালপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্র, গোয়ালন্দে, ভাগ্যকূেলে ও সুরেশ্বরে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে এক দফা নেমে যাওয়ার পর আবারো তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকায় নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ডিমলা উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পানি নেমে যাওয়ার পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যেসব মানুষ ঘরে ফিরে এসেছিল, দ্বিতীয় দফার বন্যায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উজানের ঢলে তিস্তার পানি ক্রমে বাড়তে থাকায় নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কুড়িগ্রামে আবারো বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি। ফলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ওই দুই নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার সকাল ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রে ফের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বন্যার শঙ্কায় আছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধের রাস্তা থেকে অনেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। তবে পানি বাড়তে শুরু করায় তারা শঙ্কায় আছেন। বন্যা পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে জামালপুরের অবস্থা বেশ শোচনীয় বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত এই জেলার ৭০টির মতো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার গবাদিপশু। ১১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় জেলার ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ফলে তাদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও এই জেলায় বন্যাকবলিত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জন মানুষ মারা গেছে। গাইবান্ধা জেলাতেও প্রায় চারশ গ্রাম বন্যায় তলিয়ে গেছে। বেসরকারি হিসেবে, জেলাটিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন। এ ছাড়া বন্যায় ডুবে গেছে ১১ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলি জমি, ভেসে গেছে ৬ হাজার ২৯০টি পুকুরের ২ হাজার ৫৫ টন মাছ ও ১ কোটি ১১ লাখ পোনা। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App