×

জাতীয়

বাড্ডায় গণপিটুনিতে রেনু হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হৃদয় গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৯, ০৪:০৯ পিএম

বাড্ডায় গণপিটুনিতে রেনু হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হৃদয় গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হৃদয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। গত শনিবার বাড্ডায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার বছরের মেয়েকে ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে ছেলেধরা সন্দেহে স্কুল মাঠে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রেনু হত্যার ভিডিও এসেছে সামাজিক মাধ্যমে। তাতে দেখা যায়, নীল টি শার্ট পরা এক যুবকের লাঠিক আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন দুই সন্তানের জননী রেনু। পরে জানা যায়, এই যুবকের নাম হৃদয়। পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন জানান, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মুল আসামি হৃদয় ওই নারীকে সরাসরি আঘাত করেছে, খুঁচিয়ে এবং মেরে ফেলার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছিল।’ ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সে একজন সবজি বিক্রেতা। তার বাবা-মা নেই। তার নানির সঙ্গে বাড্ডা এলাকাতে বসবাস করে। ঘটনার দিন ওই নারী যখন উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তখন সে তাকে দেখেছিল। কারণ সেসময় সে বিদ্যালয়ের গেটে সবজি বিক্রি করছিল।’ “সন্তানকে স্কুলে ভর্তির বিষয়ে তাসলিমা বেগম রেনু স্কুলের গেটে এক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এসময় ওই অভিভাবক রেনুর কাছে তার বাসার ঠিকানা জানতে চায়। ঠিকানা বললে তার একটু সন্দেহ হয়। তখন সেই প্রথম বলতে শুরু করে এটা তো ‘ছেলেধরা’। এটা সবজি বিক্রেতা হৃদয় শুনে আরও কয়েকজনকে বলে। কানে কানে সেটা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে একটা জটলা পাকিয়ে যায়।’ ‘১৫-২০ জনের একটা জটলা তৈরি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ রেনুকে স্কুলের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে একটু রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এ সময় স্কুলের নিচে জটলা আরও বড় হতে থাকে। পাশে বাজার থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজারের মত লোক জমে যায়। ছেলে ধরার কথাটা এমন ভাবে ডাল-পালা তৈরি করে সবাই তখন স্কুলে প্রবেশ করে। কেউ দেয়াল টপকে কেউ গেট ভেঙে ভেতরে যায়। এরমধ্যে কয়েকজন তালা ভেঙে মহিলাকে (রেনু) বের করে আনে এবং গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর হৃদয় বুঝতে পেরেছিল পুলিশ তাকে খুঁজছে। তখন সে চলে যায় নারায়নগঞ্জে দুইদিন পর তার চুল ন্যাড়া করে ফেলে। এ সময় সে তার নানিকে বলে তার যত পোশাক আছে সব যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়।’ তবে ঘটনার দিন হৃদয় যে পোশাকে ছিল সেটা উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার সময় যে কয়জন স্কুলের তালা ভেঙে মহিলাকে বের করে এনেছে তাদের নাম হৃদয় বলেছে। আমরা দ্রুত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’ ব্যক্তিগত আক্রোশে কেউ এটা করেছে কি-না এমন প্রশ্নে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘যে মহিলা প্রথম জিজ্ঞসাবাদ করেছিল সেই মহিলার সঙ্গে রেনুর পূর্ব পরিচিতি ছিল কি না সেটা জানা যায়নি। আমরা ওই মহিলাকে খুঁজছি।’ মর্মান্তিক ওই ঘটনায় রেনুর ভাগনে নাসির উদ্দিন টিটু বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় হৃদয়ের আগে গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে জাফর নামে একজন গত সোমবার বিচারকের কাছে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া শাহীন (৩১), বাচ্চু মিয়া (২৮) ও বাপ্পী (২১) নামে তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই সোহরাব হোসেন জানান। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন আবুল কালাম আজাদ (৫০) ও কামাল হোসেন (৪০)। গ্রেপ্তার সবাই উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App