×

জাতীয়

ত্রাণের জন্য হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৯, ১১:২৮ এএম

ত্রাণের জন্য হাহাকার
উত্তরাঞ্চলের নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও চাপ বাড়ছে দেশের মধ্যাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো জেলায় পানি কমতে শুরু করলেও প্রধান নদনদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে। উত্তরে পানি নেমে আসায় বাড়ছে পদ্মা ও যমুনায়। এদিকে, বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বানভাসি মানুষ। সর্বত্র ত্রাণ না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সংসদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। দুয়েক দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত বেড়ে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল রবিবার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানি সহজে নামবে না। কুড়িগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি যমুনা হয়ে এখন দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে এসেছে। গতকাল রবিবার থেকে পদ্মাপাড়ের জেলা শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বাড়ছে। ওই নদের তীরবর্তী জেলা শেরপুরে ইতোমধ্যে বন্যা শুরু হয়ে গেছে। দেশের বহু জেলা বন্যাদুর্গত হলেও এখনো সর্বত্র ত্রাণ না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সংসদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গতকাল রবিবার সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে দুর্গতরা যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় পেতে পারে, সে বিষয়টিও দেখার আহ্বান জানায় কমিটি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে এবং তা বিলি করার জন্য কমিটি গঠন করে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিসিদের বন্যার্তদের সহায়তার জন্য বিশেষ নির্দেশনাও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ত্রাণের কোনো ঘাটতি হবে না। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ছয়টি টিম গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে গাইবান্ধায় ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা শহরসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও হাটবাজার পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বন্যায় এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র, নদীর বাঁধ ও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে বানভাসি মানুষ। এদিকে দুর্গত এলাকাগুলোতে পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের সংকট। ব্রহ্মপুত্র নদের শেরপুর অংশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে যাওয়ায় শেরপুর সদর, শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলার আরো ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এক লাখ মানুষ। সদর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ গত এক সপ্তায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দি রয়েছে জামালপুরের সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও বকশীগঞ্জসহ ৭টি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। পানিবন্দি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার চকের কান্দা গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার ৩০টি গ্রামের মানুষ। কুড়িগ্রামে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। এদিকে, পানির চাপ বাড়ছে মধ্যাঞ্চলে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। ডুবে আছে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। ফরিপুর সদরপুর উপজেলা কর্মকর্তা প্রবীর গোলদার জানান, ফরিদপুরে পদ্মার পানি বেড়ে জেলার তিনটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়েছে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিদপসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ১০ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়ায় ভুঞাপুর-টাঙ্গাইল সড়কের শ্যামপুরে নির্মাণাধীন সেতুর ডাইভারশন কেটে দিয়েছে স্থানীয়রা। এতে টাঙ্গাইলের সঙ্গে ভুঞাপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App