×

জাতীয়

ঘরে ঘরে এডিস লার্ভা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:২২ এএম

ঘরে ঘরে এডিস লার্ভা
‘মশা মারতে কামান দাগা’ সামান্য কাজে বিশাল আয়োজন বোঝাতে দেশে এই প্রবাদ প্রচলিত। তবে এই ‘মশা’ই এখন ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। সরকারের অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সচিব, এমনকি বাংলাদেশস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা সবার আলোচনাই এখন মশা নিয়ে। উচ্চ আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে মশা নিয়ে আলোচনা। রাজধানী থেকে শুরু করে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এর ব্যাপকতা বেড়েছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুর বিস্তারের জন্য জনগণের সচেতনতার অভাবও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন তারা। এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে এডিসের লার্ভা। তবে দেরিতে হলেও দুই সিটি কর্তৃপক্ষ মশার বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গবেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় ঢাকাতে মশার পরিমাণ অনেক বেশি। এর জন্য ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুতি দরকার। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ার দায় সিটি করপোরেশন এড়াতে পারে না। শুধু নগর কর্তৃপক্ষ নয়, এর জন্য ব্যক্তি, পারিবারিক এবং প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সচেতনতাও জরুরি। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৫ জন এবং পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ভোরের কাগজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৩ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৪ জন। সেই হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ জন এ জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৪৭৪ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছে ৪ হাজার ৫৬৬ জন। বেসরকারি হাসপাতালে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৫২৯ ও ২ হাজার ৫৬৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৭, ফেব্রুয়ারিতে ১৯, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৮৪, জুনে ১ হাজার ৭৭০, জুলাইয়ের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জুলাই। ওই দিন ২৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে এপ্রিল ২, জুনে ২ এবং জুলাইয়ে ১ জনের মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুর ভয়াবহা বাড়লেও এ বিষয়ে এখনো যে নগরবাসী ও সংশ্লিষ্টদের খুব একটা টনক নড়েছে এমনটি নয়। এর প্রমাণ মিলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বর্ষাকালীন জরিপে। ডেঙ্গু প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আকতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে জানান, বর্ষার আগে ঢাকার দুই সিটিতে মশার ঘনত্ব নির্ণয়ে মোট ১০০টি এলাকায় ১৭ জুলাই থেকে জরিপ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরিপ চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। ৩০ জন কীটতত্ত্ববিদ এই জরিপ কাজ পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, তিন দিনে রাজধানীর ৩০টি এলাকায় আমাদের টিম জরিপ কাজ করেছে। এই তিন দিনেই যে চিত্র আমরা দেখেছি তা রীতিমতো ভয়াবহ। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, বিভিন্ন এলাকার নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। এ ছাড়া অধিকাংশ এলাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে এডিসের লার্ভা। আমাদের জরিপ প্রতিবেদন আমরা দুই সিটি করপোরেশনকেই দেবো। যাতে তারা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন শুধু রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এখন ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা, খুলনা ও চট্টগ্রাম জেলাতেও এ জ¦রে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এ ছাড়া এ বছর ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। আগে যেমন তীব্র জ্বরের সঙ্গে গায়ে রেশ ওঠা, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেত, এবার সে সব লক্ষণ ছাড়াও অনেক রোগী এ জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জ্বর হলে ঘরে বসে চিকিৎসা না নিয়ে যত দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত গরমে এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকছে। এসব জায়গায় এডিস মশা ডিম পাড়ছে। তিন থেকে সাত দিন জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। যে কারণে হঠাৎ এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে গেছে। আর এ কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপও ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তবে এখনো আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস বাকি। এই দুই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাব্রিনা ফ্লোরা জানান, মুষলধারে বৃষ্টি না হয়ে থেমে থেমে হলে মশার প্রজননে অনুক‚ল পরিবেশ তৈরি করে। বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এতে জলবায়ু পরিবর্তনেরও একটা বড় ভ‚মিকা আছে। ২০০০ সালের পর থেকে দেশে ডেঙ্গুর আবির্ভাব। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গুর জন্য একটি চিকিৎসা সহায়িকা তৈরি করা আছে। তা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা হয়। এ বিষয়ে চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App