×

পুরনো খবর

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৯, ০২:২০ পিএম

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহদাৎ হোসেন গত ৪ জুলাই তার বাসার প্রি-পেইড মিটারে দেড় হাজার টাকা লোড করেন। কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখেন টাকা লোড হয়নি। এরপর রবিবার তিনি কুরারঘাট এলাকায় ডিপিডিসি অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেন। দায়িত্বরত কর্মকর্তা তখন তাকে জানান, ‘আমাদের সার্ভার কাজ করছে না। সোমবার আসেন।’ এরপর শাহদাৎ হোসেন সোমবার আবার ডিপিডিসি অফিসে যান। দায়িত্বরত কর্মকর্তা গ্রাহক শাহদাৎকে বাসায় ফোন করে প্রি-পেইড মিটারে ২৬ বার চাপ দিতে বলেন। ২৬ বার চাপ দেয়ার পর একটি কোড নম্বর আসে। ওই নম্বরটি ডিপিডিসি কর্মকর্তাকে দেয়ার পর টাকা লোড হয়। অথচ শাহদাৎকে ৪ দিন ভোগান্তিতে থাকতে হয়েছে। শাহদাতের মতো এ ধরনের ভোগান্তির শিকার হয়ে বহু গ্রাহককে প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন স্থানে ডিপিডিসির অফিসে ধর্ণা দিতে হয়। এ ধরনের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই ভোগান্তি দূর করতে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ফলে নতুন গ্রাহকরা এখন আর প্রি-পেইড মিটার সংযোগ চাচ্ছেন না। উপরন্তু প্রি-পেইড মিটার সংযোগের বিরুদ্ধে ও ভোগান্তিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রাহকরা প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছেন। মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৭ লাখের বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহককে পোস্টপেইড থেকে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব শহর এলাকা এবং ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রাম এলাকার সব গ্রাহককে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তির মাত্রাও বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রি-পেইড মিটারে বেশি টাকা কেটে নেয়া এবং রিচার্জের ভোগান্তিতে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলাতেও প্রি-পেইড মিটারে গ্রাহকদের ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দেয়ায় পর থেকে তাদের ভোগান্তিও বেড়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রি-পেইড মিটারে অতিরিক্ত বিল আসছে। ৩০ টাকা মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ দিতে হচ্ছে। মাসে যে টাকা খরচ হতো এখন তার চেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচ করেও দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। আগে এক হাজার টাকায় মাস চলে যেত। এখন দুই হাজার টাকায়ও মাস পার হচ্ছে না। তাছাড়া শহরে রিচার্জের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। ছুটির দিনে রিচার্জ করা সম্ভব না হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। এসব কারণে নরসিংদী সদরের পশ্চিম ব্রাম্মন্দী, শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রি-পেইড গ্রাহকদের মধ্যে দিন দিন অসন্তোষ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় ২০ হাজার এবং নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় ১৭ হাজার প্রি- পেইড মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো জেলাকে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ চলছে। তবে কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কোনো অভিযোগই মানতে নারাজ। নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. ইউসুফ জানান, মিটার ভাড়া ছাড়া আর কোনো বাড়তি টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। যে মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছে তা উন্নত প্রযুক্তির। ১০ বছরের মধ্যে নষ্ট হলে তা বিনামূল্যে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। এ কারণে মিটার ভাড়া ১০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ছুটির দিনে টাকা না থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয় না। নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার নিয়ে ভোগান্তির শিকার গ্রাহকরা রাজপথে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন। গত সপ্তাহে ফতুল্লা এলাকায় বাসিন্দারা এই মানববন্ধন পালন করেন। তাদের অভিযোগ, ডিপিডিসি গ্রাহকদের সঙ্গে কথা না বলেই ডিজিটাল মিটার সরিয়ে প্রি- পেইড মিটার সংযোগ দিয়েছে। এখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করে নিচ্ছে। সেবার পরিবর্তে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে এলাকার মানুষ বড় ধরনের আন্দোলনে নামবে বলেও মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দিয়েছেন। ফতুল্লার নয়ামাটি পঞ্চায়েত উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ফারুক ওসমানির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার ভুক্তভোগী লোকজন উপস্থিত ছিলেন। গাজীপুরের গ্রাহকদেরও পকেট কাটছে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ হাজার প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, এই জেলায় চলতি বছরের মধ্যে ১ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোমধ্যেই ৫০ হাজার প্রি-পেইড মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ৫০ হাজার সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। সংযোগ পাওয়া গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, প্রি-পেইড মিটার সংযোগের পর তাদের বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে। মিটার ভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। এর পাশাপাশি ভোগান্তিও হচ্ছে। সেবার মান খুবই খারাপ। টাকা রিচার্জের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। গাজীপুর জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কাছে বারবার অভিযোগ করে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে প্রতিবাদ জানাতে কিছুদিন আগে জেলার শ্রীপুরের মাওনা এলাকার গ্রাহকরা মানববন্ধন ও কালিয়াকৈরের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রি-পেইড মিটার একটি আধুনিক পদ্ধতি। এতে একজন গ্রাহক যতটুকু বিদ্যুৎ খরচ করবেন, তাকে সমপরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে। ফলে গ্রাহকদের সুবিধা বাড়বে। কোথাও কোথাও টেকনিক্যাল কারণে বা মিটারের সমস্যার কারণে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। তবে তা ঠিক করে দিতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ব্যবস্থাও নিচ্ছে। ভবিষ্যতে আর এই সমস্যা থাকবে না। ডিপিডিসির এমডি বিকাল দেওয়ান জানান, প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জের জন্য এখন আর গ্রাহকদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগে সমস্যা ছিল। এখন বিদ্যুৎ অফিস ছাড়াও ১৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিচার্জের সুবিধা রয়েছে। গ্রাহকরা যে কোনো জায়গা থেকে রিচার্জ করতে পারে। আর মিটারে বেশি টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, গ্রাহরা এখনো এই পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। প্রি-পেইড মিটার থেকেই গ্রাহকরা এখন সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় পান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App