এরশাদের চেয়ারে কাদের বিরোধীদলীয় নেতা কে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৯, ০২:১২ পিএম
সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেয়ার পেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছোটভাই জিএম কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুযায়ী এরশাদ মৃত্যুর আগেই বলে গেছেন, তার অবর্তমানে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হবেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী পার্টির পক্ষ থেকে গতকালই তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়, বলেন তিনি।
পার্টির পক্ষে এ ঘোষণার পর পরই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে। এরশাদ ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তার অবর্তমানে কে আসছেন এ পদে প্রচলিত রীতিতে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা রাখা দলের প্রধানই সাধারণত বিরোধীদলীয় নেতা হন। সে হিসেবে জিএম কাদেরেরই সে দায়িত্ব পাওয়ার কথা। তবে বিগত সময়ে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়া জাপার অনেক নেতাই বলছেন, জিএম কাদের থাকবেন পার্টির দায়িত্বে আর সংসদে নেতৃত্ব দেবেন রওশন এরশাদ। এ ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় উপনেতা হতে পারেন জিএম কাদের। তবে পার্টি চেয়ারম্যান হিসেবে এটা হবে তার অবনমন। সে ক্ষেত্রে তার পছন্দের কেউ আসতে পারেন এ পদে।
পার্টিপ্রধানকে টপকে দ্বিতীয় প্রধান নেতাকে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। একইভাবে বর্তমান পার্টিপ্রধানকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করা হবে কিনা সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলছে না। তবে এরশাদের উত্তরসুরী হিসেবে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার তালিকায় কাদের কিংবা রওশনের বাইরে আর কেউ নেই বলেও বিশ্বাস তাদের। শীর্ষ কয়েকজন নেতার ভাষ্য, পার্টির সংসদীয় কমিটির সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার আগে কিছু বলা যাবে না।
সংসদ সম্মেলনে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার পাশেই ছিলেন নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া জিএম কাদের। তবে সেখানে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে দেখা যায়নি। যদিও তার অনুসারীদের দুএকজন উপস্থিত ছিলেন। নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে এরশাদের মৃত্যুর আগে থেকেই রওশন-কাদেরের মধ্যে টানাপড়েন ছিল। রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত পার্টিতে শক্তিশালী একটা গ্রুপ এখন সক্রিয়। বিগত সময়ে যারা সংসদে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্বও পালন করেছেন। সরকারের গভীর সম্পর্ক রাখা ওই অংশের নেতৃত্বে আছেন রওশন এরশাদ।
অন্যদিকে, সজ্জন ও ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত জিএম কাদেরেরও রয়েছে বিশাল এক সমর্থকগোষ্ঠী। যারা তাকে এরশাদের চেয়ারে বসাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। যার মধ্যে তারা এরশাদকে খুঁজে পেতে চান। তবে জিএম কাদেরকে পার্টির উত্তরাধিকার নির্বাচন করতে এরশাদ যে দফায় দফায় জটিলতা সৃষ্টি করেছিলেন তাতে রওশনপন্থিদের প্রভাব খুঁজে পেয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের নেতারা। রওশনন্থিরা যেন কাদেরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে এরশাদকে প্রভাবিত না করতে পারে সে জন্য প্রেসিডেন্ট পার্কে পাহারাও বসিয়েছিলেন তারা। শেষ অবধি জি এম কাদেরের হাতে পার্টির সর্বময় ক্ষমতা তুলে দেয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের নেতারাই। এরশাদকে পল্লীনিবাসে দাফন করার ঘটনার মধ্য দিয়ে তারাই তার প্রতি অসীম ভালোবাসার প্রমাণ রেখেছেন। এর মধ্য দিয়ে জি এম কাদেরের পাল্লাটাই ভারি হয়েছে।
এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করবেন শীর্ষ নেতারা। একদিকে পার্টির সংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা; আরেকদিকে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা দুটো বিষয়কেই সামনে রেখে এ ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিগত সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালনকারী জাপার যুগ্ম মহাসচিব নূরুল ইসলাম ওমর ভোরের কাগজকে বলেন, সবদিক বিবেচনা করেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করতে হবে। সংসদীয় কমিটি এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করবে। একই রকম যুক্তি দেখিয়ে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। তবে সংসদীয় কমিটির সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাপার সদ্য দায়িত্ব পাওয়া চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও বললেন, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্পিকারকে জানিয়ে দেব।